ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১

প্রাণ ফিরে পেতে পারে রাজধানী

পূজার আয়োজনের মধ্যেই ফিরছে নাগরিক উৎসব

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২ অক্টোবর ২০২৪

পূজার আয়োজনের মধ্যেই ফিরছে নাগরিক উৎসব

শারদ উৎসব সামনে রেখে রাজধানীতে চলছে বিচিত্র কেনাকাটা। শাঁখারীবাজারের ছবি

বাঙালি যে উৎসবপ্রিয় সে কথা তো বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে রাজধানী শহরে উৎসব অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। তবে গত কিছুদিনের ঘটনাবলী বেশ হতাশার। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা অসহিষ্ণুতা বেড়ে গেছে। দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। ঢাকাও তাই  মুখ ভার করে রেখেছে। উৎসব অনুষ্ঠান কিছু আর হচ্ছিল না। এই যখন অবস্থা তখন বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে ওঠার নতুন বার্তা দিচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব।

হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব সামনে রেখে এক ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য চোখে পড়তে শুরু করেছে। প্রতিমা তৈরি, ম-প সাজানোর কাজ হচ্ছে সবখানে। চলছে বিচিত্র কেনাকাটা। একই সময় খোলা আকাশের নিচে আয়োজন করা হবে শরত উৎসবের। নাগরিক এই আয়োজন থেকেও ভাগাভাগি করে নেয়া হবে পূজার আনন্দটুকু। সব মিলিয়ে দারুণ মুখরিত হয়ে ওঠবে চারপাশ। হ্যাঁ, এমন আশা মনে জাগতে শুরু করেছে। 
পঞ্জিকা মতে, আগামী ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর সারাদেশে একযোগে উদ্যাপিত হবে শারদ উৎসব। এর অংশ হিসেবে বুধবার মহালয়ার দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। ৯ অক্টোবর দেবীর বোধন এবং ষষ্ঠী পূজা। মহাষষ্ঠীর দিন থেকেই শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী শেষে ১৩ অক্টোবর বিজয়াদশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধরের দেয়া তথ্য মতে, ঢাকায় এবার ২০৫টি ম-পে পূজা আয়োজন করা হতে পারে।

প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। চলছে রং করার কাজ। জাতীয়ভাবে দুর্গোৎসবের প্রধান আয়োজনটি থাকবে ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। এর বাইরে  পুরান ঢাকার অলিগলি, কলাবাগান, বনানী, খামারবাড়ি, মিরপুর, উত্তরা, বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ম-প তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অচিরেই ম-পগুলো উৎসবের কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশা করছেন তিনি।   
এদিকে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখন ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায়। রাজধানীর মার্কেটে শপিংমলে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বুধবার আড়ংয়ের আসাদগেট আউটলেটে কথা হয় সঞ্জীত পালের সঙ্গে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। নিজের জন্য পাঞ্জাবী কিনতে এসেছিলেন। কেনাকাটা প্রসঙ্গে তার বক্তব্য: প্রতি বছর পূজার সময় বাসার সবার জন্যই নতুন পোশাক কেনা হয়। এবার সত্যি বলতে একটু দেড়ি হয়েছে। আমাদের গ্রামে কিছু সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

তখন মন একেবারে খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু এখন পূজার সময় ঘনিয়ে আসায় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। বাবা মা ছোট ভাই আত্মীয় পরিজনের জন্য জামা কাপড় কিনেছিলাম আগেই। আজ নিজের জন্য কিনতে এসেছি। এখন উৎসবটা নিশ্চিন্তে উদ্যাপন করতে জান বলে জানান তিনি।  
অবশ্য পূজা উপলক্ষে সবচেয়ে জমজমাট এখন পুরান ঢাকা। এরই মাঝে অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ছে উৎসবের আমেজ। শাঁখারীবাজারে গিয়ে তো মনে হচ্ছিল পূজা শুরু হয়ে গেছে! সরু গলির দুই ধারে গায়ে অনেক দোকান। দোকানিরা সবাই পূজার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। প্রতিমা সাজানোর শাড়ি গহনা থেকে শুরু করে পূজার সব ধরনের উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে।

আরতি ভা-ারের অরুণ দত্ত বলছিলেন, আমাদের এখানে পূজা করার জন্য যা যা প্রয়োজন প্রায় সবই পাওয়া যাচ্ছে। নারীদের জন্য নতুন নতুন ডিজাইনের শাখা পলা গড়েছি আমরা। প্রতিমার সাজ সজ্জাসামগ্রীও আছে। ঢাকার বাইরের ক্রেতারা এসব বেশি কিনছেন। সব ঠিক থাকলে পূজার আগের দিন পর্যন্ত বেচা কেনা চলবে বলে জানান তিনি। 
এদিকে, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দুটি শরৎ উৎসব আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাঙালির গর্বের প্রতিষ্ঠান ছায়ানট শনিবার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে শরতের অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, প্রকৃতিপ্রেম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জায়গা থেকে আমরা এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকি। প্রতিবারের মতো এবারও শরৎ উৎসব থেকে সম্প্রীতির বাণী উচ্চারণ করা হবে। 
ছায়ানটের একদিন আগে শুক্রবার চারুকলার বকুলতলায় শরৎ উৎসব আয়োজন করবে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনের প্রধান মানজার চৌধুরী জানান, বরেণ্য যন্ত্রসংগীতশিল্পী মো. ইউসুফ খানের সরোদ বাদনের মধ্যদিয়ে সকাল ৭ টা ২৫ মিনিটে উৎসবের সূচনা করা হবে। আয়োজনে গান নাচ আবৃত্তি ছাড়াও থাকবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। 
এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে প্রাণ ফিরে পাবে রাজধানী ঢাকাÑ  এমনটিই আশা করা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

×