.
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের আগে ও পরে দেশের পাঁচ কারাগার ভেঙে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৮৮ জনসহ অন্তত ২ হাজার ২৪১ জন বন্দি কারাগার থেকে পালিয়েছেন। এর মধ্যে ৯২৮ আসামি এখনো পলাতক। পলাতকদের মধ্যে রয়েছে জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, দাগি অপরাধী। তারা মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, যাবজ্জীবন কারাদ-সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া বিচারাধীন মামলার আসামি। পলাতক আসামির মধ্যে রয়েছে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ৮৪ জন। এখনো পলাতক রয়েছে ২৭ জঙ্গি। গত এক মাসে প্রায় ১৫ হাজার আসামি জামিনে বের হয়ে গেছে।
তবে পলাতক আসামিরা যেন দেশ ছাড়তে না পারেন সেটি নিশ্চিত করতে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানোসহ বন্দিদের তালিকা সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও ইমিগ্রেশন পুলিশে পাঠানো হয়েছে। এসব পলাতক আসামি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি ও বিপজ্জনক বলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষের দাবি। পুলিশ ও কারা অধিদপ্তর সূত্র এ খবর জানিয়েছেন। কারা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কারাগার থেকে দুই সহস্রাধিক আসামি পালিয়ে যাওয়ার পর চার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ মোট এক হাজার ৩১৩ জন বন্দি আত্মসমর্পণ করেছেন অথবা গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি ৯২৮ জন আসামি কোথায় আছেন সে সম্পর্কে পুলিশ কিছুই জানে না বলে জানিয়েছেন কারা অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা। দেশের ৬৮টি কারাগারের মধ্যে পাঁচটিতে কারাগার ভাঙার ঘটনা ঘটেছে।
মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ৮৮ বন্দির বেশিরভাগই গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়েছেন। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ২০৩ বন্দির মধ্যে অন্তত ২০০ জনের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও শেরপুর কারাগার থেকে পালিয়ে আসা আসামিদের মধ্যে ৬৮৯ জন আত্মসমর্পণ করেছেন অথবা গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি ৫২৩ জন কোথায় আছেন তা জানে না কর্তৃপক্ষ।
সাতক্ষীরা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ ৭৩ জন কয়েদির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। শেরপুর কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৫১৮ জনের মধ্যে অন্তত ১০৬ জন পরে ময়মনসিংহ ও জামালপুর কারাগারে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকারী ৯১ জন বন্দি পরে জামিন পেয়েছেন। সারা দেশ থেকে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৮৮ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের আটটি কারাগারে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে আটটি মামলা হয়েছে।
সব মিলে ১৭টি কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। হামলার সময় ৯৪টি অস্ত্র লুট হয়, যার ৬৫টি উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো উদ্ধার হয়নি ২৯টি অস্ত্র। ২ হাজারের বেশি বন্দি পালিয়ে গেলেও পরে অনেকে নিজে থেকে ফিরে এসেছেন। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। গত ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত আলোচিত মোট ৪৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি জামিনে মুক্ত হয়েছে।
বর্তমানে দেশের সব কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজারের কিছু বেশি। সরকার পতনের আগে কারাগারে প্রায় ৭০ হাজার বন্দি ছিল। এক মাসে প্রায় ১৫ হাজার জামিন পাওয়ায় এখন কারাবন্দির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার। ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের পট পরিবর্তনের সময়কালে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। বাংলাদেশের কারা অধিদপ্তর এর ব্যতিক্রম ছিল না। বেশ কয়েকটি কারাগারে নিরাপত্তা বিঘিœত হয়। কয়েকটি কারাগার থেকে গোলা-বারুদ লুটের ঘটনাও ঘটে এবং কয়েকটি কারাগারে পালানোর সময় কয়েকজন বন্দির মৃত্যুসহ অনেক কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষী গুরুতর আহত হন। অগ্নিসংযোগ এবং ব্যাপক ভাঙচুরের ফলে দুটি কারাগারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। অনেক কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসস্থলও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক সহায়তায় কারা বিভাগ অদম্য সাহসিকতার সঙ্গে অন্য কারাগারগুলো সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ মোতাহার হুসাইন গণমাধ্যমে বলেছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত করা গণঅভ্যুত্থানের সময় যে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার সুযোগ নিয়ে অধিকাংশ বন্দি পালিয়েছে। বিটিভির বুলেটিনসহ আরও বিভিন্ন উপায়ে আসামিরা সরকার পতনের কথা জানতে পেরেছিল বলেও জানান তিনি। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, কারাগার থেকে পালিয়ে আসা আসামিরা যেন দেশ ছাড়তে না পারেন সেটি নিশ্চিত করতে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।