ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১

সম্প্রীতির বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্প্রীতির বাংলাদেশ

খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি এলাকায় অবস্থিত বৌদ্ধ মন্দির

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি

শান্তিপুর অরণ্য কুটির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পবিত্র একটি তীর্থস্থানঅপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি, ধ্যান-সাধনার পীঠস্থান এই অরণ্য কুটিরপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার অরণ্যে ঘেরা প্রায় ১৮০ একর জায়গাজুড়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র এ তীর্থস্থানটি অবস্থিতপ্রকৃতির অবারিত ঘন সবুজ বনানীর ছায়া সুনিবিড় মমতায় ঘেরা পানছড়ি উপজেলা শহর থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে প্রায় ৫/৬ কিমি দূরে শান্তিপুর নামক জনপদের অনতি দূরে এর অবস্থানযা জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরেবিশাল এলাকাজুড়ে অরণ্যে আবৃত বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে অরণ্য কুটির

পাহাড়ি গাছ-গাছড়ায় ঘেরা পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সর্ববৃহ বুদ্ধমূর্তিসেখানে রয়েছে ভিত্তিসহ ৫০ ফুট উচ্চতার গৌতম বুদ্ধের মূর্তিবৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিতনিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে ভিক্ষুদের ধ্যান করার সুবিধার্থে ১৯৯৯ সালে ভদন্ত শাসনরক্ষিত মহাথেরো এই কুটিরটি স্থাপন করেনতিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় গুরু সাধনা নন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ৮ম শিষ্য

স্থানীয়রা জানান, পানছড়ির শান্তিপুরের গহিন বনে শাসন রক্ষিত ভান্তে ধ্যান করছিলেনদিনের পর দিন খোলা জায়গায় ধ্যান করতে দেখে প্রথমে একটি ছোট ঘর তৈরি করেন স্থানীয়রাএরপর ভদন্ত শাসনরক্ষিত মহাস্থবিরের প্রাণান্তকর চেষ্টায় বর্তমান শান্তিপুর অরণ্য কুটিরটি নির্মিত হয়েছে

প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য তার অকৃপণ দানে সব উজাড় করে যেন মেলে দিয়েছে এখানেবিধাতা যেন স্বয়ং চিত্রকর সেজে মন-প্রাণ ঢেলে, শৈল্পিক রূপ-রঙ দিয়ে আর মন মাতানো সৌন্দর্যের রঙ তুলিতে সাজিয়ে দিয়েছে এই পুণ্যময় তীর্থক্ষেত্রটিঅনেকে হয়তো দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির বলতে বোঝেন কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ মন্দিরকেআসলে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি এলাকায় অবস্থিত বৌদ্ধ মন্দিরটিই বাংলাদেশের বৃহত্তম ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির, যা শান্তিপুর অরণ্য কুটিরনামে পরিচিত১৯৯৯ সালে নির্মিত ৫০ ফুট উচ্চতার এ বুদ্ধ মূর্তি তৈরিতে সময় লেগেছে ৪ বছরদক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সর্ববৃহ বৌদ্ধ মূর্তি শান্তিপুর অরণ্য  কুটিরের প্রধান আকর্ষণ ৫০ ফুট বিশিষ্ট নান্দনিক বৌদ্ধ মূর্তিটি

শান্তিপুর অরণ্য কুটিরের অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে সুসজ্জিত প্রার্থনার স্থান, লাভীশ্রেষ্ঠ সিবলী মহাস্থবিরের মন্দিরসহ মূর্তি, মারবিজয়ী উপগুপ্ত মহাস্থবিরের মূর্তি, আছে সুজাতার মূর্তি, যে নারী পায়েশ খাইয়ে বুদ্ধের ধ্যান ভঙ্গ করেছিলেন

এ ছাড়া ছোট ছোট টিলা ও পাহাড়ি গাছ-গাছড়া দিয়ে ঘেরা এই কুটিরে আছে ২৫টিরও বেশি সাধনা কুটির ও উপকুটির, সুবিশাল মাঠ, দুটি কৃত্রিম হ্রদ, অনুষ্ঠান মঞ্চ, ছোট্ট বেড়ার ঘর এবং ভক্তদের উপাসনার বাতিঘর১০০ হাত দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ভিক্ষুশালা, ৬০ হাত দৈর্ঘ্যের দেশনাঘর, ৮০ হাত দৈর্ঘ্যের ভোজনালয়, অধ্যক্ষ ভিক্ষুর আবাসস্থল মৈত্রী ভবন, সুদৃশ্য শ্রামনশালা উল্লেখযোগ্যএ ছাড়াও কুুটিরে আছে চিকিসালয়, পাঠাগার, ভিআইপি বিশ্রামাগার, অফিসকক্ষ, পুণ্যার্থীদের বিশ্রামাগার এবং কনফেকশনারি দোকানএখানকার বাতিঘরে ভক্তরা বিভিন্ন ধরনের মনোবাসনায় মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকেনগৌতম বুদ্ধের সর্ববৃহ মূর্তির সামনে রয়েছে প্রার্থনার সুসজ্জিত স্থানএর দুপাশে আছে সিবলী মন্দির ও উপগুপ্ত কাঠের মন্দিরতাছাড়া চারদিকে মুখ করে রাখা হয়েছে গৌতম বুদ্ধ, সুঘলায়ন, চারিপুত্র এবং আনন্দ এর মূর্তিঅনিমা চাকমা নামে এক দায়িকা এটি উসর্গ করে ছিলেনকুটিরের প্রতিটি ভাস্কর্যে গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশার বিভিন্ন কাহিনী, উপদেশ ও অনুপ্রেরণামূলক বাণী তুুলে ধরা হয়েছে

অরণ্য কুটিরের দক্ষিণ পাশে বড় ভান্তে শাসনরক্ষিত মহাস্থবিরের ও সাধারণ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কুটিরসবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তির পেছনের দিকটায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধকারণ, ভেতরের ১৩টি সাধনা কুটিরে নির্জনে বসে দিনের পর দিন সাধনা করেন ভান্তেরাপ্রত্যেকটি কুটিরে একজন ভিক্ষু ও শ্রামন ধ্যানে মগ্ন থাকেনধর্মীয় আচার পালনের সুবিধার্থে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে

হিংসা-বিদ্বেষহীন এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি শুধু পানছড়ি নয়, সমগ্র পার্বত্য এলাকার শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলছেপ্রতিবছর বৌদ্ধ পূর্ণিমা, আষাঢ়িয়া ও প্রবারণা পূর্ণিমাতে এখানে বৌদ্ধ পূজা ও উসবের আয়োজন করা হয়এ ছাড়া এ বিহারে গণপ্রবজ্যা গ্রহণ অনুষ্ঠানটিও আকর্ষণীয়কঠিন চীবর দানের সময় দেশের নানা স্থান থেকে ৫০ হাজারেরও অধিক ভক্ত এবং পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে এই অরণ্য কুটিরেএই বিহারে কঠিন চীবর দানের আবর্ষণীয় দিক হচ্ছে একই দিনে বিভিন্ন ধাপ শেষ করে তুলা থেকে কাপড় বোনা ও সেলাই করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উদ্দেশে দান করা আর এ কাজে অংশ নেন পাহাড়ি এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষএ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন এখানে শতাধিক পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের আগমন ঘটে

দম্মা-ধায়াদা ঐক্য পরিষদের (ডিওপি) সভাপতি সঞ্জয় চাকমা জানান, শান্তিপুরের গহিন বনে ধ্যান করছিলেন শাসনরক্ষিত ভান্তেদিনের পর দিন এভাবে খোলা জায়গায় ধ্যান করতে দেখে প্রথমে একটি ছোট ঘর তৈরি করে দেন স্থানীয়রাএরপর শাসনরক্ষিতের প্রাণান্তকর চেষ্টায় বর্তমান শান্তিপুর অরণ্য কুটির হয়েছেএটি এখন ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ নর-নারীদের নয়, পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এখানে প্রায় প্রতিদিন ২০ হাজারেরও বেশি পর্যটকদের আগমন ঘটেঅরণ্য কুটিরে দর্শনার্থীদের আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, এখানে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি বনজ এবং ফলদ গাছ দেখতে পাওয়া যায়এ বনজ ও ফলদ গাছ বন ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে

জীতেন বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি

যশোরের সবচেয়ে পুরনো

গির্জা চার্চ অব বাংলাদেশ

যশোর শহরের ঠিক প্রাণকেন্দ্রে চার্চ অব বাংলাদেশের গির্জা ঘরটিযশোরে প্রতিষ্ঠিতি সবচাইতে পুরনো গির্জা, বর্তমানের এই ভবনটিএটা হাই চার্চ নামে সমধিক পরিচিততিনদিক দিয়ে সড়কবেষ্টিত যশোর কালেক্টরেটের পাশে অবস্থানরত চার্চটি যশোরবাসীদের অতি চেনা একটি স্থানবহুকাল অবহেলা ও অনাদরে থাকায় উপাসনালয়ের অনেকটাই নষ্ট হয়েছে, অনেক  খোয়া গেছেযার ফলে গির্জার জমি জায়গা নিয়ে অনেক বিবাদের কারণ হয়েছেবর্তমানে জায়গাটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছে ও পরিচালনা, পর্যবেক্ষণের সুব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে

মি: বন্ড ইস্ট ইন্ডিয়ার অনুমতি নিয়ে ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে যশোর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রূপদিয়াতে নীল কারখানা স্থাপন করেনযশোর শহরে বহু নীলকর সাহেবের আগমন ঘটতে থাকেইউরোপীয়দের বেশির ভাগ মানুষ ছিলেন এ্যাংলিকান ম-লীর সদস্যযার ফলে এই সকল এ্যাংলিকান খ্রিস্টানদের জন্য গির্জার প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়এ্যাংলিকান চার্চ গড়ে উঠেছে মূলত তিনটি অংশেপ্রথম দুটি হাইচার্চ, নাম হলো : অক্সফোর্ড মিশন এবং অন্যটি সোসাইটি ফর দি প্রোপাগেশন অব দি গসপেলতৃতীয় চার্চটির নাম চার্চ মিশনারি সোসাইটি

১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে যশোরে বিচারক ছিলেন মি: বেনথলতারই প্রচেষ্টায় যশোরের এই চার্চটি স্থাপিত হয়এই সময়কালে আদালতে দ-প্রাপ্ত কয়েদিদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হতো

ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট ও সরকারি দালানকোঠা আদালতে দ-িত কয়েদিদের দ্বারা তৈরি করা হতোঢাকার সেন্ট টমাস চার্চ এমন একটি গির্জা যেটি কয়েদিরা তৈরি করেছিল এবং গির্জাটি ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে বিশপ হেবার উদ্বোধন করেছিলেন

মি: বেনথল যশোরে অবস্থানরত নীলকর সাহেবদের নিকট হতে চার্চ নির্মাণের উদ্দেশ্যে চাঁদা তুলেছিলেন এবং শ্রমিক হিসাবে জেলখানার কয়েদিদের ব্যবহার করেছিলেন

১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে চার্চ তৈরির কাজ সমাপ্ত হয়১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে ঠিক একইভাবে একটি পালকীয় ভবন নির্মাণ করা হয়মি: জে ফয় ছিলেন প্রথম যাজক, যিনি ওই ভবনে ১৮৪৬ থেকে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় দশ বছর বসবাস করেনমি: জে ফয় যশোর থেকে ইংল্যা-ে যাওয়ার পর তিনি ক্যাথলিক মতে দীক্ষা নিয়েছিলেন এবং তার অধীনে যত এই দেশের এ্যাংলিকান খ্রিস্টান ছিল, তাদের তিনি ক্যাথলিক মিশনের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার মারিয়েত্তির হাতে অর্পণ করেছিলেন

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে যশোর অঞ্চলে নীল বিদ্রোহের পরবর্তীকালে নীলকর সাহেবরা এ অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকেউপরন্তু ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে খুলনাকে জেলায় উন্নীত করার ফলে খুলনার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত এই চার্চের সভ্য সংখ্যা কমতে কমতে একেবারে শূন্যাবস্থায় এসে পৌঁছায়পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে যশোরে এ্যাংলিকান সদস্য ছিল ৫০ জন এবং ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ১৭ জনেসম্ভবত দেশ বিভাগের পর যশোরে আর কোনো এ্যাংলিকান ছিল নাএ সময় উপাসনা না হলেও চার্চটি সরকারিভাবে দেখাশোনা করা হতোযশোর কালেক্টরের বেতনভুক্ত কর্মচারী মি: খোসবর বিশ্বাস (যশোর শহরের মিশনপাড়া নিবাসী আফজাল হাজির পিতা) নামে এক ব্যক্তি এই চার্চের কেয়ারটেকার ছিলেনএছাড়া যশোর এ.জি. মিশন বেশ কয়েক বছর এ উপাসনালয়টি ব্যবহার করেছিলেন

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাগের ফলে কলকাতার এ্যাংলিকান বিশপের পক্ষে এ দেশের মন্ডলীসমূহের তত্ত্বাবধান করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ফাদার জেমস ব্লেয়ারকে পূর্ব পাকিস্তানে সহকারী বিশপ নিযুক্ত করা হয়১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান একটি পৃথক ডায়োসিসে পরিণত হলে ফাদার জেমস ব্লেয়ার নতুন ডায়োসিসের প্রথম বিশপ নিযুক্ত হনবিশপ ব্লেয়ার যশোরের এ্যাংলিকান চার্চটির দেখাশোনার জন্য ব্যাপ্টিস্ট মিশনের পালক রেভা: সুধীর কুমার বিশাসকে অনুরোধ করেনবর্তমান বাংলাদেশ চার্চ কর্তৃপক্ষ দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এই রেভা: সুধীর কুমার বিশ্বাস এই চার্চের দেখাশোনা করেছিলেনযশোরে কোনো এ্যাংলিকান সদস্য না থাকায় ব্যাপটিস্ট মন্ডলীর সদ্যরাই উপাসনায় যোগ দিতেনতার তত্ত্বাবধানের ফলে এই চার্চ ও সম্পত্তির অনেকাংশ রক্ষা পায়১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে এ্যাংলিকান চার্চসমূহ একত্রে মিলিত হয়ে একটি পৃথক সত্তারূপে আত্মপ্রকাশ করেএর নাম হয় চার্চ অব বাংলাদেশ

১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে চার্চ অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যশোর চার্চকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে নেয়বর্তমানে যশোর এ্যাংলিকান চার্চ ঢাকা ডায়োসিসের অন্তর্গতবাংলাদেশ চার্চের সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে এই চার্চ প্রাঙ্গণে ক্রাইস্ট চার্চ ট্রেড স্কুল স্থাপিত হয়স্কুলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দেকালীন যশোরের জেলা প্রশাসক মহিউদ্দীন খান আহমেদ ও খুলনার ক্যাথলিক ম-লীর বিশপ মাইকেল ডি রোজারিও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেনভিত্তিপ্রস্তর সংস্থাপন করেন বিশপ ম-লটেকনিকাল যন্ত্রপাতি আনা হয় রতনপুর থেকেরতনপুর ট্রেড স্কুল বন্ধ হয়ে যায়এই স্কুলে বিভাগ হলো ৪টি : কাঠ ও হস্তশিল্প, অটোমোবাইল, মেশিনিস্ট, ইলেকট্রেশিয়ানদূরের ছাত্রদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থাও আছে

১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ থেকেই একটি মানুষের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় এই টেকনিক্যালের কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছিলসেই মানুষটি হলেন, লরেন্স ডি রোজাওিতার প্রচেষ্টায় সমাজের ঝরে যাওয়া অনেক ছেলেই আজ সামাজিক জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ হতে ২০১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে প্রিন্সিপালের দায়িত্বে ছিলেন মি: সুধীন মন্ডল ১৯৭৯বর্তমান যশোর চার্চ অব বাংলাদেশের অধীনে কয়েকটি গ্রাম ও এলাকা রয়েছেতার মধ্যে মহেশ্বরপাশা, রাজঘাট, ঝুমঝুমপুর উল্লেখযোগ্যযশোরে এ্যাংলিকান চার্চ বা চার্চ অব বাংলাদেশের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০০ জন

সাজেদ রহমান, যশোর

চলুন দেখে আসি কান্তজিউর মন্দির

সাধারণত দেশে বেড়ানোর ক্ষেত্রে হয় কক্সবাজার অথবা সিলেট, সেন্টমার্টিনকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন অনেকেইদেশের উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার বিষয়ে অনেকেই আগ্রহ দেখান নাঅথচ উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে দিনাজপুর জেলায় রয়েছে দর্শনীয় অনেক জায়গাযার মধ্যে দিনাজপুরে কান্তজির মন্দির উল্লেখযোগ্যএই জেলাতেই বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কান্তজির বা কান্তনগর মন্দিরমন্দিরটি পরিদর্শনের জন্য প্রতিদিনই শত শত মানুষ দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসছেন

মন্দিরের অবস্থান ও ইতিহাস :

মন্দিরটিকে কান্তজিউ বা কান্তজির আবার কান্তনগর মন্দির নামেও ডাকা হয়এছাড়া নবরত্ন মন্দির নামেও অনেকের কাছে পরিচিতকারণ, তিনতলাবিশিষ্ট মন্দিরের ৯টি চূড়া বা রত্ন ছিলদিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলার কান্তনগর গ্রাম ঢেপা নদীর তীরে কান্তজিউ মন্দির অবস্থিতজনশ্রুতি আছে, শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহের অধিষ্ঠানের জন্য এ মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিলমন্দিরের উত্তর পাশে ভিত্তিদেবীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, কালীন দিনাজপুরের মহারাজা ও জমিদার প্রাণনাথ রায় এই মন্দিরের কাজ শুরু করেনকিন্তু ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পর তার ছেলে ১৭৫২ সালে মন্দিরটির নির্মাণকাজ শেষ করেন

গঠন বিন্যাস, স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্য ইত্যাদির সংমিশ্রণে মন্দিরটি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত নয়নাভিরামজমকালো পিরামিড আকৃতির মন্দিরটি তিনটি ধাপে উঠে গিয়েছে এবং তিন ধাপের কোণগুলোর ওপরে ৯টি অলংকৃত শিখর রয়েছেযা দেখে মনে হতে পারে একটি উঁচু ভিত্তির ওপর একটি রথ দাঁড়িয়ে আছেবর্গাকার একটি প্রধান প্রকোষ্ঠকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ ইমারতটি নির্মিত হয়েছেপাথরের ওপর দাঁড়ানো মন্দিরের উচ্চতা ৫০ ফুটের বেশি নয়মন্দিরের নিচতলায় ৩১টি খিলান, দ্বিতীয় তলায় ৩১টি খিলান এবং তৃতীয় তলায় মাত্র ৩টি খিলান রয়েছেমহাভারত-রামায়ণের নানা বিষয়ের উপস্থিতি এখানে তুলে ধরা হয়েছে

প্রথম পর্যায়ের অলঙ্করণে কৃষ্ণের নানা কাহিনী, সমকালীন সমাজজীবনের বিভিন্ন ছবি এবং জমিদার ও অভিজাতদের বিনোদন চিত্র রয়েছেদ্বিতীয় পর্যায়ের অলঙ্করণে বনের মধ্যে শিকার দৃশ্য, হাতি, ঘোড়া ও উটসহ রাজকীয় শোভাযাত্রা সুন্দরভাবে সজ্জিত আছেএছাড়া পালকিতে বসে থাকা হুকা হাতে জমিদার, নদীর দৃশ্য, লোকজনে ঠাসা নৌকায় আনন্দ-উসবে মগ্ন দৃশ্যপটও বিদ্যমানতৃতীয় ধাপের অলঙ্কারে রয়েছে দানব রাজা কংস কিশোর কৃষ্ণকে বধ করতে উদ্যত, সারস গলার দানব বাকাসুর হত্যা, স্বর্ণ দানব কলিকায়ে দমন, লম্বা সরু নৌকায় কৃষ্ণের আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি পোড়ামাটির ফলকগুলোতে ফুটে উঠেছে১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়এতে মন্দিরের ওপরের রত্নসমূহ ভেঙে পড়ে

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট জেলা থেকে কান্তজিউ মন্দির দেখতে আসা এক দর্শনার্থী সুবীর চক্রবর্তী বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে শুনতাম বাংলাদেশের কান্তজিউ মন্দিরে আমার অন্নপ্রাশন হয়েছে, সেই থেকে এই নয়নাভিরাম মন্দির দেখার ইচ্ছেআজ তাই আমার স্ত্রীকে নিয়ে মন্দির দেখতে এসেছিএত সুন্দর মন্দির আমাদের ভারতেও আমি দেখি নাইযখন এ মন্দির তৈরি করা হয়েছে, তখন কিন্তু এত প্রযুক্তি ছিল নাতারপরও মন্দিরের দেওয়ালে হাতের ছোঁয়ায় কত সুন্দর কারুকাজ করেছে, যা দেখে মুগ্ধ আমিখুলনা থেকে আসা দর্শনার্থী মোবাশ্বের আলী জয় বলেন, ছবি ও ভিডিওতে মন্দিরটি দেখেছিমন্দিরের কারুকাজ আজ নিজ চোখে দেখলামএককথায় অসাধারণমন্দিরের দেওয়ালে এত সুন্দর নকশা হাত দিয়ে করা যায়, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে নাদিনাজপুর হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় শিক্ষার্থী শর্মীলা বোস বলেন, অনেকদিন থেকে মন্দির দেখার ইচ্ছে ছিলঅন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আজ তারও মন্দিরটি দেখা হলো

কেন যাবেন কান্তজিউ মন্দিরে :

কাহারোল উপজেলার ঢেপা নদীর তীরের কান্তজির মন্দির টেরাকোটার স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শনএই মন্দিরে ব্যবহৃত উকৃষ্ট টেরাকোটার ফলক আপনি দেশের আর কোথাও দেখতে পাবেন নাকান্তনগরের শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ যে কোনো ভ্রমণপিপাসুর কাছে নিঃসন্দেহে আকর্ষণের

যেভাবে যাবেন কান্তজিউ মন্দিরে :

দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলায় কান্তজির মন্দিরের অবস্থানঢাকা থেকে বাস ও ট্রেনে সরাসরি দিনাজপুর চলে আসতে পারেনআবার আকাশপথে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে বাসে করে দিনাজপুরের বারোমাইল নামক স্থানে নামতে হবেএরপর এক কিলোমিটারের হাঁটা পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাবেন শান্ত ও স্নিগ্ধ প্রকৃতির কান্তনগর গ্রামেঅবশ্য বারোমাইল থেকে ভ্যানেও যেতে পারেনকান্তজির দর্শন শেষ হলে অদূরে অবস্থিত নয়াবাদ মসজিদটি দেখতে ভুলে যাবেন নাছোট্ট সুন্দর এই মসজিদের প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেআর কান্তজির মন্দিরের সঙ্গে বোনাস হিসেবে ঘুরে আসতে পারেন দিনাজপুরের আরও কিছু বিখ্যাত স্থান যেমন- রামসাগর, সুখসাগর, দিনাজপুর রাজবাড়ী ও শিংরা ফরেস্ট

সাজেদুর রহমান শিলু, দিনাজপুর

 

 

×