ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১

রোদ বৃষ্টির গরমে

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রোদ বৃষ্টির গরমে

হালকা রোদের তীব্র গরম

সেদিন সকালে অফিসে আসার পথে দেখলাম একজন মা তার শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে একটি ব্যাগ হাতে বাস থেকে নামছেন। দূরপাল্লার বাস। শিশুটি খালি গায়ে দেখে একটু কপাল কুঁচকালাম। এতদূর থেকে আসছেন, বাচ্চাটাকে খালি গায়ে করে! অনুভব করলাম, এই সকালের হালকা রোদের তীব্র গরমে রিকশায় বসে আমিই ঘেমে ভিজে গেছি।

বাসের গরমেই হয়তো শিশুটির মা ওর গায়ের জামাটা খুলে দিয়েছেন।
ভাদ্রে তাল পাকার গরম পরে। সেই গরম গ্রীষ্মের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সাথে মিশে থাকে বৃষ্টি। হুটহাট করেই ঝরছে বর্ষার ঝরঝর বৃষ্টি। টানা বৃষ্টিতে ঠান্ডা পরে যাচ্ছে, আবার বৃষ্টি শেষে লাগছে তীব্র গরম। রোদ-বৃষ্টির এই ঠান্ডা-গরমে শিশু থেকে বৃদ্ধ- প্রায় সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

এই চলছে তাপপ্রবাহ, এই আবার নি¤œচাপ। এই তাপপ্রবাহে গরমে যেমন সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হচ্ছে, তেমনি বাতাসের আর্দ্রতার কারণে ঘামে ভিজছে শরীর। ফলে পানিশূন্যতা আর গরমে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সবাই। এদিকে ডেঙ্গুর প্রভাবও রয়েছে। যারা এই বৈরী পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন, তাদের দিশেহারা অবস্থা। 
তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই এই পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হলেও আমরা মুক্ত থাকতে পারি।
আমরা অনেকেই বাইরে থেকে এসেই তৃষ্ণা মিটাতে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ঢকঢক করে খেয়ে নেই। গরম থেকে ঘরে ঢুকেই এসি, ফ্যান ছেড়ে দিই। পারলে সরাসরি ঠান্ডাটা লাগে এমন জায়গায় বসি। মজার বিষয় হচ্ছে, আমরা প্রায় সবাই জানি এ কাজগুলো অনুচিত। তবু করি। যাদের ঠান্ডাটা লেগে যায় তারা একটু সাবধান হতে সঙ্গে নরমাল পানি মিশাই।

কিন্তু ঠান্ডা পানি বেশি নেই। যার ফলে জ্বর, ঠান্ডা, কাশিতে ভুগতে হয়। অনেক সময় তা মারাত্মক রূপ ধারণ করে নিউমোনিয়াও হয়ে যায়।
আবার কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় বাড়ির আশপাশে পানি জমে ডেঙ্গুর উপদ্রব বাড়ে, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সতর্ক হই না।
তাই নিজেদের স্বার্থেই একটু সতর্ক হই। বাড়ির চারপাশটা পরিষ্কার রাখি। আজকাল বাগানের প্রতি অনেকেরই ঝোঁক বেড়েছে। টবে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

এই গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ঘরে ঢুকেই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাবেন না। এমনকি এসেই ফ্যান, এসি ছেড়ে সরাসরি ঠান্ডায় বসবেন না। অফিস বা বাসায় ঢুকেই আগে ফ্যান ছাড়ুন, সরাসরি ফ্যানের নিচে না বসে একটু সরে বসুন, গায়ের ঘাম শুকিয়ে নিন। এরপর প্রয়োজনে এসি ছাড়ুন।
ফ্রিজের ঠান্ডা পানি সরাসরি না খেয়ে নরমাল পানি মিশিয়ে পান করুন। রুমে ঢুকে ৫/১০ মিনিট অপেক্ষা করে পানিটা খান। সারাদিনে ২-৩ লিটার পানি পান করুন। 
প্রয়োজনে স্যালাইন খেতে পারেন (যদি শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকে), বাইরের জুস বা ড্রিংকস না খেয়ে ডাবের পানি পান করুন। এটি স্বাস্থ্যসম্মত। এসএমসির এনার্জি ড্রিংকসটাও খেতে পারেন। সঙ্গে ছোট ফ্যান বা পাখা রাখতে পারেন। অবশ্যই পানির বোতলে খাওয়ার পানি নিয়ে বের হবেন। আর ছোট ছাতাও রাখতে পারেন, এটি আপনাকে রোদ থেকে বাঁচাবে।

আজকাল রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় বিভিন্ন রকম ফলের মিশ্রণে শরবত বিক্রি হচ্ছে। আবার লেবুর শরবতও পাওয়া যায়। যতটা সম্ভব এসব থেকে বিরত থাকুন। এই ধরণের শরবতগুলো স্বাস্থ্যসম্মত হয় না। ফলে পেটের অসুখ করতে পারে।
আপনাকে দেখেই ঘরের ছোটরা শিখবে। নিজেকে বদলে নিন, ছোটরাও সঠিক পদ্ধতি জানবে। আপনি অসুস্থ হলে কোনোভাবে নিজেকে নিয়ে চলতে পারেন, কিন্তু ঘরের শিশুটির অসুস্থতায় কিন্তু আপনিই বেশি আকুল হোন। আর শিশুটি যেহেতু প্রকাশ করতে পারে না, তার কষ্ট অনেক বেশি হয়। তাই চলুন, সবাই মিলে সতর্ক হই, সুস্থ থাকি।

×