ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

শখের বাজারে বিক্রি হলো সবই

দুর্লভ মুদ্রা ডাকটিকিট জমির দলিল দিয়াশলাই 

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:২০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দুর্লভ মুদ্রা ডাকটিকিট জমির দলিল দিয়াশলাই 

ব্যাংক নোট, মুদ্রা, জমির দলিল, ডাকটিকিটসহ দুর্লভ সব সংগ্রহ নিয়ে শুক্রবার মিরপুরের ঋদ্ধি গ্যালারিতে বসেছিল অভিনব ‘শখের বাজার’

বাজার বটে। যে সে বাজার নয়। শখের বাজার। আগে কখনো শুনেছেন এই বাজারের কথা? না শুনে থাকলে বলি, গত কয়েক বছর ধরে রাজধানী ঢাকাতেই বাজারটি চালু আছে। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো এর সূচনা করা হয়। তার পর থেকে চলছে। কী বেচাকেনা হয় বাজারে? না, ফর্দ ধরে কেনার মতো কিছু সেখানে পাবেন না। শখের বাজারে শখের বসে সংগ্রহ করা দুর্লভ নিদর্শন স্থান পায়। কেউ হয়তো শৈশব থেকেই  দেশী-বিদেশী ডাকটিকিট, চিঠি লেখার খাম, ব্যাংকনোট মুদ্রা বা ঐতিহাসিক নথি দলিল দস্তাবেজ সংগ্রহ করছেন। শখের সেই সংগ্রহ থেকে কিছু তিনি বিক্রির জন্য বাজারে ওঠাতে পারেন। আবার কেউ হয়তো নিজের সংগ্রহ থেকে প্রাচীন নথি দলিল দস্তাবেজ পুরনো পত্রিকা ম্যাগাজিন সিনেমার পোস্টার ইত্যাদি বিক্রি করতে চান। তার জন্যও শখের বাজার।

আর ক্রেতা? যারা বিক্রি করতে আসেন তারাই এখানে মূল ক্রেতা। নিজের কাছে অতিরিক্ত যা আছে তা বিক্রি করে নতুন কিছু ক্রয় করার জন্য হন্যে হয়ে ছুটেন। এভাবে চমৎকার এক আদান-প্রদানের সুযোগ করে দেয় শখের বাজার। সংগ্রাহকদের মিলনমেলাও বলা যায় এটিকে। এর বাইরে সাধারণ দর্শনার্থীরা বিপুল কৌতূহল নিয়ে বাজার ঘুরে বেড়ান।

অভিনব বাজার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে ফিলাটেলিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ। সংগঠনের পক্ষ থেকে বিগত বছরগুলোতে শিল্পকলা একাডেমি অথবা শিশু একাডেমিতে বাজার বসানো হয়। এবার আয়োজনটি স্থানান্তর করা হয় মিরপুরে। ছুটির দিন শুক্রবার মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে দিনব্যাপী শখের বাজার আয়োজন করা হয়। এখানে সম্প্রতি ঋদ্ধি নামে দারুণ একটি বুকশপ ক্যাফে এবং গ্যালারি নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন এই গ্যালারিতেই সকালে শখের বাজার বসে।

মূল ঢাকার কিছুটা বাইরে হলেও, গিয়ে দেখা গেল, যারপরনাই জমজমাট আয়োজন! স্টল ছিল ২৯টি। সবকটি স্টলে দুর্লভ সংগ্রহ। বহুকাল আগের ডাকটিকিট, চিঠির খাম, মুদ্রা ইত্যাদি তো ছিলই, সেইসঙ্গে ছিল দুর্লভ চুক্তিনামা একাডেমিক সার্টিফিকেট পত্রিকা ম্যাগাজিন সিনেমার ব্যানার পোস্টার। দিয়াশলাই, টেলিফোন কার্ড, মডেল কার, এমনকি টিস্যু পেপার, চাবির রিং, কোমল পানীয়র বোতলের ছিপিও যে কেউ সংগ্রহ করে, কে জানত! আরও নানা বস্তু নিদর্শন দিয়ে সাজানো ছিল স্টল। এসব স্টল ঘুরে, সত্যি বলতে, বাজার মনে হয়নি। বরং জাদুঘর বা দুর্লভ প্রদর্শনী কক্ষ ঘুরে দেখার আনন্দ হচ্ছিল।

চিঠি লেখার যুগ শেষ হলেও খাম এবং টিকিটের সংগ্রহ দেখে সেটি বোঝার উপায় ছিল না। দেশের দুর্লভপ্রায় সব ডাকটিকিট খাম ইত্যাদি প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছিল। বাইরের দেশেরও কম ছিল না। সানাউল হক নামের এক প্রবীণের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি মহাশূন্য কেন্দ্রিক যেসব টিকিট প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করে থাকেন। কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, মহাশূন্য গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছেন তিনি। শৈশবে শুরু। এখন বয়স ৭০। এখনো সংগ্রহ অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।    

সাকিল হক নামের এক যুবক সংগ্রহ করেন দিয়াশলাই। পৃথিবীর নানা দেশের দিয়াশলাই তার স্টলে ছিল। বলছিলেন, বাংলাদেশে মাত্র দুটি ফ্যাক্টরি আছে এখন। তিনি নিজেও দিয়াশলাইয়ের বাক্স ডিজাইন করেন। তার দিয়াশলাইয়ের দুই পীঠে কখনো মুক্তিযুদ্ধের পোস্টার, কখনো লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির প্রতিকৃতি! দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। শুধু কী তাই? ২০ হাজার দিয়াশলাই নিয়ে একটি জাদুঘর করেছেন বলেও জানান তিনি। আকবর নামের এক সংগ্রাহক আবার টিব্যাগ সংগ্রহ করেন! বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা বা লোগোযুক্ত টিস্যুও সংগ্রহ করেছেন কেউ কেউ।  

আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফারুক জানান, এক সময় নিলামে ক্রয়-বিক্রয় করতেন তারা। কিন্তু কখন কোনটি নিলামে উঠবে সেজন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হতো। আরও কিছু জটিলতা দেখা যেত নিলামের সময়। ওই সব ঝামেলা এড়াতেই শখের বাজার যাত্রা শুরু করে। বাজার সম্পর্কে মানুষ কতটা জানে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বিশাল একটা কমিউনিটি আছে। একটা পরিবার বলতে পারেন। দুর্লভ সংগ্রহের পেছনে ছুটে বেড়ানো যাদের নেশা তারা এই খবর এমনিতেই পেয়ে যান। এর বাইরে ফেসবুকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে আমাদের। ফলে যেখানেই আয়োজনটি নিয়ে যাই না কেন, খুব জমে ওঠে। ঢাকার পাশাপাশি বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রাহকরা এসেছেন বলে জানান তিনি।

×