.
বাংলা কল্পবিজ্ঞানের জনক বলা হয় স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে। ১৮৯৬ সালে ‘পলাতক তুফান’ নামের একটা গল্প লেখেন তিনি। মজার ব্যাপার হলো এটি ছিল একটি তেলের বিজ্ঞাপন। গল্পে দেখা যায়, গভীর সমুদ্র থেকে বিশাল এক ঝড় ধেয়ে আসছে কলকাতার দিকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বারবার সতর্কতা সংকেত দিয়ে যাচ্ছে; এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। যেদিন ঝড় আঘাত হানবে সেদিন দেখা গেল সমুদ্র একদম শান্ত। ঝড় পালিয়ে গেছে। কারণ উত্তাল সমুদ্রে ফেলা হয়েছে একটি আশ্চর্য তেলের বোতল। অবিশ্বাস্য এই গল্প লিখে বাংলা সাহিত্যে ঢুকিয়ে দিলেন একটি নতুন বিষয়, কল্পবিজ্ঞান; মানে সায়েন্স ফিকশন।
আচ্ছা, তোমরা কি জান বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স ফিকশন কোনটি? হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৩ সালে ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ লিখেছেন। সে এক চমৎকার কাহিনী। সেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স ফিকশন। হুমায়ূন আহমেদ আরও দারুণ কিছু সায়েন্স ফিকশন লিখে গেছেন। হুমায়ূন আহমেদের পথ ধরে প্রচুর সায়েন্স ফিকশন বাংলাদেশে লেখা শুরু হয়। তিনি ‘ফিহা সমীকরণ’, ‘অনন্ত নক্ষত্রবীথি’, ‘তারা তিনজন’- নামের দারুণ সব কল্পবিজ্ঞান গল্প লিখে গেছেন।
হিমু, মিসির আলী, শুভ্রর পাশাপাশি ‘স্রুরা’ নামে একটা চরিত্র সৃষ্টি করেছেন তিনি, যা কারো লেখায় সেভাবে উঠে আসে না। যদিও স্রুরা নিয়ে সেভাবে কাজ করতে পারেননি। হয়তো সময় পেলে তিনি পুরো মিসির আলীর মতো একটি চরিত্র বানিয়ে ফেলতেন স্রুরাকে। ‘ইরিনা’র মতো সায়েন্স ফিকশন আর হয় না। তার ‘অনন্ত নক্ষত্রবীথি’ও অসাধারণ। কেউ কেউ বলেন মিসির আলী সিরিজও সায়েন্স ফিকশনের মধ্যে পড়ে যদিও তিনি ‘সায়েন্স ফিকশন সমগ্র’তে এগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে যাননি।
প্রখ্যাত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘নীল মানুষ’ নামের একটি সায়েন্স ফিকশন সিরিজ লিখেছেন। একটা নীল বলকে নিয়ে কি এক অবিশ্বাস্য কা- ঘটে গেছে তা ভেবেই আমার গা শিউরে উঠছে! এই গল্প পড়ার পর আমার বল ফোবিয়া হয়ে গেলো! যেখানেই বল দেখি ভয় লাগে- ভিনগ্রহীদের বল নয় তো! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘পূর্ব-পশ্চিম’ নামের বিশাল এক উপন্যাস লিখে গেছেন। উপন্যাসের মাঝে তোমরা একটা সায়েন্স ফিকশন চরিত্রেরও দেখা পাবে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধায়কেও নিশ্চয়ই চিনবে তোমরা।
‘বনি’ নামের দারুণ একটা সায়েন্স ফিকশন আছে তার। সেটা থেকে সিনেমাও হচ্ছে। দীপেন ভট্টাচার্যের ‘নক্ষত্রের ঝড়’ হচ্ছে অন্যরকম ভালো লাগার একটা সায়েস ফিকশন। তানজিলা হোসেনের ‘ছায়া পৃথিবী’ আর আবদুল গাফফার রনির ‘ভিনগ্রহের পান্ডুলিপি’ বইটি পড়লে নতুন ভাবনার জগৎ খুলে যাবে তোমাদের। বিজ্ঞানীদের গুরু অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে; তা হলো, ‘কল্পনা জ্ঞানের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ।’
এবার তোমাদের বেশ কিছু ভালো সায়েন্স ফিকশনের নাম বলে দিই। বলে রাখি, এর বাইরেও সেরা অনেক সায়েন্স ফিকশন আছে। মোশতাক আহমেদের ‘রিবিট এবং ওরা’, মনজিৎ গাইনের ‘পৃথিবীর দখল’, পিনাকী ভট্টাচার্যের ‘ওয়েদার মেকার’, নাসরিন মুস্তাফার ‘এক্সপেরিমেন্ট’, ধ্রব এষের ‘মাত্রা’, ধ্রুব নীলের ‘মায়াদ্বীপ ২৩৯০’, মফিদা আকবরের ‘যখন ভিন্নগ্রহে ছিলাম’, মুহাম্মদ ইব্রাহিমের ‘এলিনুষ’, রণক ইকরামের ‘ই’, শেখ আবদুল হাকিমের ‘জল দাও জল’, রাজীব হাসানের ‘হরিপদ ও ইলিয়েন’, রানা মাহফুজের ‘শূন্য নয়’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘ছোট মানুষ’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘সূর্য যেখানে নীল’, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘পোকা’, আসিফ মেহ্দীর এলিমোন, মোহাম্মদ মনিরুল হুদার ‘ন্যুরিন’, আশরাফ পিন্টুর ‘মহাজাগতিক বিপর্যয়’, শেরিফ ফারুকীর ‘সাদা পিঁপড়া’ এবং ‘অ্যাকোয়াফিয়েন্দ’- পড়তে পারো।
এই প্রবন্ধে শুধু বাংলা সায়েন্স ফিকশন, বিশেষ করে বাংলাদেশের সায়েন্স ফিকশন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর বাইরে সায়েন্স ফিকশনের গ্র্যান্ড মাস্টার অইজ্যাক আসিমভ সম্পর্কে আলোচনা করলে তো ঢাউস সাইজের বই হয়ে যাবে। থাকগে, ওসব আরেক দিন আলোচনা করা যাবে। তোমরা বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো গল্পে গল্পে সহজ ভাষায় সকলের কাছে পৌঁছে দিতে বেশি বেশি সায়েন্স ফিকশন লিখো, পড়ো; আগামীর দিন তো সায়েন্স ফিকশনেরই!