ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

বিশ্বসাহিত্যের ৭ কিশোর ক্লাসিক

নাফিস রাইয়ান

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ২৩ আগস্ট ২০২৪

বিশ্বসাহিত্যের ৭ কিশোর ক্লাসিক

.

আজ তোমাদের সঙ্গে এমন ১০টি কিশোর ক্লাসিক উপন্যাস নিয়ে আলাপ করব, যেগুলো আমেরিকার স্কুলগুলোতে কিশোর-কিশোরীদের পড়তে উৎসাহিত করা হয়। কারণ এটা তাদের গড়ে ওঠার বয়স। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি তারা যখন এসব বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হবে এবং লেখকের সঙ্গে কল্পনার ডানায় ভেসে তারা দুর্দান্ত সব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে পারবে।

সেই সঙ্গে মানবিক বোধ, সামাজিকতা, নৈতিক মূল্যবোধ পৃথিবীর প্রতি দায়বদ্ধতার পাঠও নিতে পারবে। তোমরাও যদি কল্পনার অসম্ভব সুন্দর দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াতে চাও, তোমার বয়সী আমেরিকান বন্ধুদের মতোই যদি চাও পড়াশোনার পরিধি বাড়াতে এবং অবসরের একেকটি দুর্দান্ত সময় পার করতে- তবে আজ থেকেই শুরু পড়ার পরিকল্পনা এবং বইগুলো ঝটপট সংগ্রহ করে পড়তে বসে যাও।

বলে রাখি, আজকাল বই পাওয়া কিন্তু খুব কঠিন কিছু না। গুগল সার্চ করলেও পেয়ে যেতে পারো কোনো কোনো বইয়ের পিডিএফ ফাইল। বিনামূল্যে অথবা ক্রেডিট কার্ড থেকে পয়সা খরচ করে সহজেই ডাউনলোড করে নিতে পারবে। তোমাদের মধ্যে যাদের বয়স ১৪ বছরের বেশি তাদের জন্য বইগুলো সাজেস্ট করা হচ্ছে।

টু কিল মকিংবার্ড

আমেরিকার সমাজ সংস্কৃতির গল্প। একটি শিশুর বেড়ে ওঠার গল্প। খেলা আর আনন্দে মাখানো রঙিন শৈশব এবং রক্তাক্ত ইতিহাসের গল্প। তবে সবকিছু ছাপিয়ে, ‘টু কিল মকিংবার্ডহচ্ছে ন্যায়ের গল্প। বিচারের গল্প, আর অবিচারের। ধ্রুপদী এই উপন্যাস পাঠককে নিয়ে যায় এক নির্দিষ্ট সময়ে, ইতিহাসের এক নির্দিষ্ট অধ্যায়ে। মন্দার যুগে কেমন ছিল আমেরিকা? তখন কীভাবে কেটেছে সর্বস্তরের মানুষের জীবন? বর্ণবাদ কেন ছড়িয়ে পড়েছিল দাবানলের মতো, আর কারা চুকিয়েছে সেই কুসংস্কারের মাশুল? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের সন্ধানে উপন্যাসটি নিজেকে ছাড়িয়ে যায়, পাঠককে এমন সব বিষয়ে ভাবতে বাধ্য করে, যে বিষয়গুলো আজও ততটাই প্রাসঙ্গিক, যেমনটা ছিল এক শতাব্দী আগে।

১৯৬০ সালে খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক হার্পার লিটু কিল মকিংবার্ডরচনা করেন। বইটি পরের বছরই, ১৯৬১ সালে পুলিৎজার পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার জিতেছে এবং লাইব্রেরি স্কুল জার্নালে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা বই হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস

প্রশান্ত মহাসাগরের এক অজানা দ্বীপে আটকে পড়া -১৩ বছর বয়সের একদল শিশু-কিশোরকে নিয়ে গড়ে উঠেছেলর্ড অফ দ্যা ফ্লাইজউপন্যাসটির কাহিনী। একদল শিশু-কিশোরদের নিয়ে উড়ে যাওয়া প্লেনটি দুর্ভাগ্যক্রমে বিধ্বস্ত হয়। তবে অনেকে অক্ষত অবস্থায় একটা দ্বীপে আশ্রয় নেয়। দ্বীপের আবহাওয়া বসবাসের অনুকূল, খাদ্য পানীয়ের কোনও অভাব নেই, নেই কোনও প্রাণসংহারী বিপদও।

ভোটাভুটির মাধ্যমে দলনেতা নির্বাচিত হয় রালফ। সারাদিন খেলাধুলা আহারের মাঝে কষ্টের কাজ মাত্র দুটি। নিজেদের জন্য আশ্রয় তৈরি করা, আর উদ্ধার পাওয়ার জন্য আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া তৈরি করা। কিন্তু কিছুদিন পরেই এই নিস্পাপ কম বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে পাঁচ রিপুর প্রকাশ ঘটতে থাকে। লোভ, ভয়, হিংসা, অহংকার পরশ্রীকাতরতা। ফলে দলটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।

চিরকালই মানুষ ষড় রিপুর কাছে আত্মসমর্পণ করে সর্বোচ্চ আনন্দ উপভোগ করেছে। ধ্বংস, হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, অত্যাচার করে সমাজ পরিবেশের দোষ দিয়েছে। কিন্তু এটা আসলে তার নিজস্ব প্রবৃত্তি। ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম সেরা সাহিত্যিক উইলিয়াম গোল্ডিংয়ের প্রথম উপন্যাসলর্ড অফ দ্য ফ্লাইজমানুষের প্রকৃতি, প্রবৃত্তি সমাজের এই চরম বাস্তবতার কথাই বলে বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে। উপন্যাসটির মাধ্যমে গোল্ডিং সেই মানবজাতির চিরচারিত সত্যটি আবার তুলে ধরেছেন যেটিকে আমরা সত্য জেনেও অস্বীকার করি।

সেপারেট পিচ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংল্যান্ডের একটি বোর্ডিং স্কুলে পড়া দুই ছেলের মধ্যে একটি বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একজন সুদর্শন, ক্রীড়াবিদ এবং বহির্মুখী ছেলে- যে কিনা স্মার্ট এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা এক ফিনিয়াস কিশোরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং এক পর্যায়ে তারা দুজন ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। কিন্তু যুদ্ধ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার দিকে নিয়ে যায় তাদের। বন্ধুত্ব কৈশোর সম্পর্কে এই অসাধারণ কিশোর ক্লাসিকটির লেকক জন নোলস।

দি অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন

দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব হাকলবেরি ফিন, মার্ক টোয়েনের বিশ্ব বিখ্যাত একটি কিশোর ক্লাসিক। অ্যাডভেঞ্চারস অফ টম সয়্যারের পরবর্তী সিরিজই অ্যাডভেঞ্চারস অফ হাকলবেরি ফিন। প্রচন্ড দুষ্টু দুরন্ত প্রকৃতির ছেলে হাকলবেরি ফিন। পারিবারিক বন্ধন আর শাসন থেকে মুক্ত হয়ে যে বনে-জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে সারা পৃথিবীটা দেখতে চায়। বদ্ধ মাতাল আর উন্মাদ বাবার শাসন থেকে নিজেকে মুক্ত করে হাকলবেরি ফিন নিগ্রো ক্রীতদাস জিমকে নিয়ে শুধুমাত্র একটি কাঠের ভেলায় চড়ে নদী পথে বের হয়ে যায় অজানার উদ্দেশ্যে। তারপর তারা মুখোমুখি হয় আশ্চর্য সব কাহিনির। আর পরিচিত হয় বিচিত্র সব লোকজনের সঙ্গে। এভাবেই এগোতে থাকে বিশ্বখ্যাত এই কিশোর ক্লাসিকের গল্প।

দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী

হেমিংওয়ের শ্রেষ্ঠতম উপন্যাস। ছোট্ট এই উপন্যাসটি বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে এতে প্রতিফলিত প্রতীকধর্মিতা, জীবনবোধের গভীরতা, মানুষের প্রবৃত্তি নিয়তির মধ্যকার দ্বান্দ্বিক সম্বন্ধ ইত্যাদি অনুষঙ্গের হেমিংওয়ে-স্বভাবী স্বাতন্ত্র্যের কারণে। কিউবার এক জেলেকে নিয়ে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম সান্তিয়াগো। বৃদ্ধ এক জেলে সে। চুরাশিটি দিন পরপর সমুদ্রে অভিযান চালিয়েছে কিন্তু একটিও মাছ পায়নি। পঁচাশিতম দিনে মাছের খোঁজে একাকী সে চলে গেছে দূর-সমুদ্রে।

অবশেষে গাল্ফ স্ট্রিমে বিশাল দৈত্যাকার এক মার্লিন মাছকে সে বড়শিতে আটকাতে সমর্থ হলো। দুই দিন দুই রাত বৃদ্ধ জেলে একাকী দূর-সমুদ্রে দৈত্যাকৃতির মাছটাকে বাগে আনতে সংগ্রাম করেছে। অবশেষে হারপুনে গেঁথে মাছটাকে নৌকার পাশে রেখে ফিরে চলতে শুরু করল সে। কিন্তু ঠিক রকমই এক সময়ে তার সেই বহু কাক্সিক্ষত পুরস্কারটাকে ছিনিয়ে নিতে দলে দলে ছুটে এলো হাঙরেরা। একের পর এক হাঙরকে ধ্বংস করতে লাগল বৃদ্ধ জেলে। হালের হাতলটা না ভাঙা পর্যন্ত অব্যাহত রইল তার লড়াই। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। হাঙরগুলো নিঃশেষ করে ফেলল বিশালাকৃতির মার্লিন মাছটাকে; অবশিষ্ট রইল কেবল কঙ্কাল। বৃদ্ধ জেলে পরিশ্রান্ত, বিধ্বস্ত, প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় সেই কঙ্কালটাকে টেনে নিয়ে ফিরে এলো তীরে; তারপর ঘুমিয়ে পড়ল নিজের ঘরে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে লাগল পরের দিনের।

এই উপন্যাসে বুড়ো সান্তিয়াগোর আবির্ভাব ঘটেছে এক মহান জীবনোপলব্ধি নিয়ে। আর তাহলো : মানুষ বুড়ো হয়ে গেলে ভাগ্যহীনতা তাকে পদানত করতে পারে কিন্তু তাহলেও সে সাহস হারায় না।মানুষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে কিন্তু পরাজিত হতে পারে না কখনো।নিয়মকানুন মেনে চলায় থাকে অবিচল; প্রতিকূলতা তার নিত্যসঙ্গী হলেও, এমনকি প্রতিকূলতা তার অর্জনকে ধ্বংস করে ফেললেও শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করে সে।

দ্য স্কারলেট লেটার

আমেরিকান সাহিত্যের এক মূল্যবান রত্ন হয়েদ্য স্কারলেট লেটার১৮৫০ সালে প্রকাশিত হয় এবং প্রথম প্রকাশকালের তিনদিনেই বিক্রি হয় প্রায় আড়াই হাজার কপি। পরবর্তী ছয়মাসের মধ্যে পর পর বইটির দুটি সংস্করণ বের হয় এবং সেই থেকে এখন পর্যন্ত বইটির প্রকাশনা কখনো থেমে থাকেনি। এই উপন্যাস মানুষের ব্যাক্তিসত্ত্বাকে তার নিজস্ব রূপে ফুটে ওঠার সুযোগ করে দেয়। অপরাধী হেস্টারের বর্ণনায় লেখক প্রথমেই বলেছেন, তিনমাসের শিশু কোলে হেস্টারকে মনে হচ্ছিল স্বাভাবিক সম্মানবোধ নিজের প্রকৃতিগত শক্তিতে বলীয়ান। দীর্ঘ মেদহীন দেহের সাথে কালো উজ্জ্বল মাথাভর্তি এলোমেলো চুলের মাঝে সাধারণ গঠনের ফর্সা মুখ কালো গভীর চোখ হেস্টারের চরিত্রকে প্রথমেই এক মোহনীয়ভাবে উপস্থ্পান করে।

উপন্যাসটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক এটিই যে, অপরাধী হেস্টারের চরিত্রের প্রভাব পাঠককে একসময় এতটাই মোহাবিষ্ট করে ফেলে যে সে হেস্টারের চোখ দিয়ে দেখে, তার হৃদয় দিয়েই চারপাশটা অনুভব করতে শুরু করে। কেবল লেখনীর মাধ্যমে যে উপন্যাস পাঠকের ওপর এরূপ প্রভাব রাখতে সক্ষম, সে উপন্যাস যে বিশ্বসাহিত্যে চিরকাল শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জীবন, সমাজ, প্রকৃতি, ধর্ম, শাসন, হৃদয়, সম্মান- এসকলই এক নতুন অর্থে, নতুন মাত্রায় পাঠকের কাছে প্রকাশ পায়দ্য স্কারলেট লেটারএর প্রতিটি পাতায়।

দ্য গ্রেট গ্যাটসবি

লেখক এফ. স্কট ফিটজগেরাল্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস। নর্থ ডাকোটা থেকে জেমস গ্যাটজএ নিজেকে আত্মবিশ্বাসী এবং ধনী জে গ্যাটসবি হিসাবে নতুনভাবে উদ্ভাবন করেছেন, যখন তিনি তার শৈশবের প্রিয়তমা ডেইজি বুকাননের ভালবাসা জয় করার চেষ্টা করেছিলেন। অলৌকিক সবুজ আলোর দিকে হাত মেলে এক অদ্ভুত ঘোরে ডুবে থাকে প্রেমিক পুরুষ গ্যাটসবি। তার প্রতিবেশী নিক ক্যারাওয়েআমেরিকান স্বপ্নপূরণ করতে মধ্য-পশ্চিম থেকে পাড়ি জমিয়েছে নিউ ইয়র্কে। রহস্যময় ধনী গ্যাটসবির সঙ্গে পরিচিত হয়ে পাল্টে যায় তার জীবন। গ্যাটসবির অট্টালিকায় হর-রোজ চলে রাজকীয় পার্টি। জুয়াড়ী থেকে বিজনেস ম্যাগনেট, গ্যাংস্টার থেকে রকস্টার, ফিল্মস্টার থেকে রাজনীতিবিদ, ক্যাবারে, ফ্রিস্কো, জ্যাজ, রু- কী নেই সেই পার্টিগুলোতে! কিন্তু কেন এই অঢেল আয়োজন? আর এই বিপুল বৈবভের উৎসই বা কী? ফেলে আসা অতীত? প্রেম? দুঃসহ বেদনার স্মৃতি? জানতে বইটি সংগ্রহ করো এবং পড়তে বসে যাও।

 

 

×