ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সৃষ্টির স্বাধীনতায় মঞ্চে ফেরার প্রত্যাশা থিয়েটার কর্মীদের

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৩৫, ১১ আগস্ট ২০২৪

সৃষ্টির স্বাধীনতায় মঞ্চে ফেরার প্রত্যাশা থিয়েটার কর্মীদের

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সৃষ্টির স্বাধীনতায় শিল্পচর্চার লক্ষ্যে সমাবেশ করেন নানা মাধ্যমের শিল্পীরা

গত ১৬ জুলাই থেকে থমকে গেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের নাট্যাঙ্গন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতন হলেও সক্রিয় হয়নি নাট্যমঞ্চসমূহ। থেমে গেছে নিবেদিতপ্রাণ মঞ্চশিল্পীরা শিল্পিত তৎপরতা। সেই বাস্তবতায় সৃষ্টির স্বাধীনতায় পুনরায় নাট্যঞ্চে ফিরতে চান মঞ্চশিল্পীরা।

তাই শিল্পকলা একাডেমি খুলে দিয়ে নাট্যমঞ্চে ফেরার সুযোগ করে দেওয়াসহ দেশের থিয়েটারচর্চার বিকাশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কয়েকটি সুপারিশ জানিয়েছেন থিয়েটারকর্মীরা। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মী সমাবেশে বিভিন্ন দাবি ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে পথিকৃৎ শিল্পী এস এম সুলতানকে উৎসর্গ করা হয় সমাবেশটি।

সৃষ্টির স্বাধীনতায় সাহসী বাংলাদেশ স্লোগানে এই চারটি সংগঠন যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে। সংগঠনগুলো হলোÑ দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ, আলোকচিত্রী সমাজ, বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ ও গেট আপ স্ট্যান্ড আপ (বাংলাদেশ সংগীতশিল্পী সমাজ)। 
সমাবেশে বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীদের পক্ষে দাবিগুলো পেশ করেন মঞ্চশিল্পী কাজী রোকসানা রুমা। সূচনা বক্তব্য দেন আমিরুল রাজীব। বক্তব্য রাখেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। চিত্রশিল্পীদের পক্ষে বক্তব্য দেন শিল্পী ও সমালোচক মোস্তফা জামান, সংগীতশিল্পীদের পক্ষে প্রবর রিপন, আলোকচিত্রীদের পক্ষে তাসলিমা আখতার লিমা এবং দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজের পক্ষে পোশাকপরিকল্পক ইদিলা ফরিদ তুরিন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, শিহাব শাহীন, নূরুল আলম আতিক, অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন, জাকিয়া বারী মম, রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা, সংগীতশিল্পী তানজীর তুহিন, আরমিন মুসাসহ বিখ্যাত অনেকে উপস্থিত ছিলেন। চারটি সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী ঋতু সাত্তার। 
থিয়েটারচর্চা সংক্রান্ত দাবিগুলো তুলে ধরে কাজী রোকসানা রুমা বলেন, আমরা আমাদের মঞ্চে ফিরতে চাই। তাই রাজধানীসহ জেলা শিল্পকলা একাডেমিগুলো খুলে দেওয়া হলে আমরা আমাদের প্রাণের জায়গায় ফিরতে পারব। এর বাইরে থিয়েটারকে আধুনিক, সময়োপযোগী এবং পেশাদার করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক বিনিময়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দল-মত নির্বিশেষে সৃষ্টিশীলতা এবং তারুণ্যের নিরিখে কমপক্ষে পাঁচটি থিয়েটার প্রযোজনাকে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। দলীয় বিবেচনায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ পূরণ করা চলবে না। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নাট্যমঞ্চের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ বিভিন্ন নাট্যদল চাইলেও নাট্যমঞ্চের অভাবে নাট্য প্রদর্শনী করা সম্ভব হয় না।

থিয়েটার শিল্পীদের দীর্ঘদিনের দাবি মাসিক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে রেপার্টরি নাট্যদল গঠন করতে হবে। এই দলে চুক্তিভিত্তিক শিল্পীরা কাজ করবে। একাডেমির হল বরাদ্দের নিয়মে পরিবর্তন আনতে হবে। তিন বা ছয় মাস আগে কোন দল হল বরাদ্দ চাইতে পারে। দর্শকসমাদৃত নাটকের ১০-১৫ দিনের টানা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। 
ঋতু সাত্তার বলেন, সময়টা শুধু উদযাপনের নয়; সময়টা রাষ্ট্র পুনর্গঠনের। আমরা বিশ্বাস করি, এই নতুন বাংলাদেশ সকল জাতির, সকল বর্ণের, সকল ধর্মের, সকল লিঙ্গের একটি বৈষম্যহীন জনপদ হয়ে উঠবে। আন্দোলনে আমরা ছাত্রদের ওপর যেমন ভরসা রেখেছি, ঠিক তেমনি রাষ্ট্র পুনর্গঠনে তাদের পাশে থেকে পাহাড় থেকে সমতলে সর্বজনের প্রতিনিধিত্বমূলক বৈষম্যহীন সম্প্রীতির নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
শহিদুল আলম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বিজয় এসেছে তা যেন হারিয়ে না যায়। একটি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আরেকটি স্বৈরশাসন অথবা পরিবারতান্ত্রিক শাসন তিনি চান না। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান এই আলোকচিত্রী বলেন, দেশ এখন যেভাবে চলছে তাকে ভুলভাবে বাইরে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে। এই ক্ষেত্রে আলোকচিত্রীদের ভূমিকা রাখতে হবে। 
সমাবেশ থেকে আরও বলা হয়, ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে তারাও যোগ দিয়েছেন। আন্দোলনের রাষ্ট্রীয় খুন ও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন যারা, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চান সংস্কৃতিকর্মীরা। একই সঙ্গে তারা শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এবং আহতদের পুনর্বাসন দাবি করছেন। 
সংস্কৃতি কাউন্সিল গঠনের ডাক শিল্পীদের ॥ শিল্পকলার নানা মাধ্যমে নিবেদিত কর্মীদের ভবিষ্যৎ চর্চার ক্ষেত্র মজবুত করা ও শিল্পের সনাতন ও যুগোপযোগী ধারার বিকাশে সংস্কৃতি কাউন্সিল গঠনের ডাক দিয়েছেন শিল্পীরা। পাশাপাশি ধর্ম বনাম সেক্যুলারিজ তত্ত্বে বিভাজনকারী চিন্তা ও মতাদর্শ থেকে দেশকে সাংস্কৃতিকভাবে মুক্ত করতে ঐকমত্যেও পৌঁছেছেন চিত্রকলা, আলোকচিত্র, নাট্যকলা, চলচ্চিত্র শিল্পীদের একাংশ।
শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘রাষ্ট্র সংস্কার, সংস্কৃতি সংস্কার’ শিরোনামে সমাবেশের আয়োজন করেন শিল্পীরা। ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পী সমাজ’ এর ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চিত্র সমালোচক মোস্তফা জামান, আলোকচিত্রী-শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফ, কিউরেটর আমিরুল রাজিব, শিল্পী বিথী ঘোষ, শিল্পী অমল আকাশ, আরিফ বুলবুল। সমাবেশে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লেখক-শিল্পী অরূপ রাহী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শিল্প-সংস্কৃতির নানা চর্চায় যুক্ত মানুষজন ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে নিজ নিজ চর্চা অব্যাহত রেখে ছাত্র-জনতার কাতারে শামিল হয়ে রাষ্ট্র-সমাজ-সংস্কৃতি মেরামতে ভূমিকা রাখার সময় এখন। দল-মত-ধর্মের নামে আধিপত্যবাদী কার্যকলাপ প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।

রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি সংস্কার নিশ্চিত করতে কয়েকটি বিষয়ে আমাদের ঐকমত্য জরুরি। পরিচয়বাদী প্রতিক্রিয়ার রাজনীতি বা সংস্কৃতির বিপরীতে শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষ থেকে সদর্থক তৎপরতার সংস্কৃতির উদ্বোধন করতে হবে। চিন্তা ও মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

×