ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

নীল বাতি

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ৯ আগস্ট ২০২৪

নীল বাতি

.

 

অনুবাদ : মাহিয়ান ফারদিন

 

অনেকদিন আগের কথাএক ছিল সিপাহী যে তার দেশের জন্য দীর্ঘদিন যুদ্ধ করেছিলদুর্ভাগ্যবশত এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সে মারাত্মক আহত হয়ফলে সে যুদ্ধ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে

রাজা বললেন, ‘সিপাহী, তুমি দীর্ঘদিন দেশের সেবা করেছকিন্তু এখন সেনাবাহিনী থেকে তোমাকে অপসারণ করতে বাধ্য হচ্ছিকারণ কেবল সুস্থ ব্যক্তিরাই সেনাবাহিনীর জন্য উপযুক্তএতে সিপাহী মারাত্মক কষ্ট পেলসে ভাবলÑ আমি দেশের নিরাপত্তার জন্য রক্ত দিয়েছিতার বিনিময় এভাবে দেওয়া হলো!

সিপাহী কষ্টের সঙ্গে প্রাসাদ থেকে বিদায় নেয়সে কিভাবে জীবিকা উপার্জন করবে? যুদ্ধ বাদে অন্য কোনো কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না তারসিপাহী কয়েকদিন জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়

একদিন কিছুটা দূরে আলো দেখতে পানসেটা ছিল একটা জাদুকরের বাড়িকিন্তু সিপাহী তা জানত নাসে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ছিলতাই দরজায় কড়া নেড়ে বলল, ‘আপনি কি আমার জন্য কিছু খাবার ও রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন?’

জাদুকর জবাব দিল, ‘ঠিক আছেকিন্তু তার জন্য তোমাকে কাজ করতে হবে

সিপাহী যেকোনো ধরনের কাজ করতে রাজি হলো

জাদুকর বলল, ‘আমার বাগানের চারদিকে পরিখা খনন করসূর্যাস্তের আগেই কাজ শেষ করতে হবে

সিপাহী সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করলকিন্তু কাজ শেষ করতে পারল নাতবু জাদুকর তাকে খাবার ও রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিলকিন্তু পরদিন যথেষ্ট পরিমাণ কাঠ কাটতে না পারলে সিপাহীকে বের করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিল

সিপাহী সর্বোচ্চ চেষ্টা করার প্রতিজ্ঞা করেপরদিন সে প্রকা- একটি গাছের গুঁড়ি কাটেজাদুকর এতে খুশি হলো খুবসিপাহী আরও এক রাত থাকার অনুমতি পেল

পরদিন ভোরে জাদুকর তাকে একটি পুরনো কুয়ার কাছে নিয়ে বলল, ‘কুয়ার নিচে একটি নীল বাতি আছেযেটা একদিন কুয়াতে পড়ে গিয়েছিলবয়সের জন্য আমি সেটা উঠাতে পারিনি

সিপাহী রাজি হলে জাদুকর তাকে দড়িতে বেঁধে কুয়ার নিচে নামায়সিপাহী নিচে গিয়ে বাতিটি তার পকেটে ভরে নেয়জাদুকর দড়ি টেনে তাকে উপরে উঠিয়ে আনেসিপাহী উঁচুতে এলে জাদুকর তার হাতে বাতিটি দিতে বলেসিপাহী রেগে বলে, ‘আগে আমাকে কুয়া থেকে বের করনা হলে আমি বাতি দিব না

জাদুকর ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, ‘আসলেই! এখনই বাতি না দিলে তোকে কুয়াতে ফেলে দেবসেখানেই পচে মরবি

সিপাহী তাকে বাধা দিয়ে বলল, ‘আমি এখন পর্যন্ত তোমার কথামতো সব কাজ করেছি

জাদুকর দড়ি ছেড়ে দেয়সিপাহী কুয়ার নিচে পড়ে যায়সে হতবাক হয়ে বসে থাকেতার হাতের কাছেই নীল বাতিটি জ্বলজ্বল করতে থাকেসে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেধোঁয়া বের হতেই সেখানে বামুন আকৃতির দৈত্য সৃষ্টি হয়দৈত্যটি সিপাহীকে কুর্নিশ করে বলে, ‘আপনার জন্য কী করতে পারি জনাব?’

সিপাহী হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কে?’

দৈত্য উত্তর দিল, ‘আমি কুপিতে থাকা বামন দৈত্যআমি আপনার ইচ্ছে পূরণ করতে পারব

সিপাহী বলল, ‘তাহলে আমাকে কুয়া থেকে বের হতে সাহায্য কর

 

দৈত্যটি তাকে একটি সুড়ঙ্গের মাঝে নিয়ে গেলসেখানে প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণের স্তূপ ছিলসিপাহী পকেট ভর্তি করে স্বর্ণ নিতে লাগলজঙ্গলে পৌঁছে দৈত্যকে বলল, ‘জাদুকরকে বিচারকের কাছে নিয়ে যাওতার যেন ফাঁসি হয় সেই ব্যবস্থা কর

দৈত্যটি বলল, ‘আপনার জন্য আর কিছু করতে পারি?’

সিপাহী বলল, ‘আপাতত না

আপনার কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে নীল বাতিটি জ্বালাবেনতাহলেই আমি হাজির হব’, বলল দৈত্যতারপর সিপাহীকে সালাম জানিয়ে চোখের পলকে দৈত্যটি উধাও হয়ে গেল

সিপাহী অত্যন্ত খুশি হয়ে শহরের সবচেয়ে ভালো হোটেলে যায়সেখানে অনেক বড় একটি রুম ভাড়া নিয়ে দামি খাবার খায়এরপর সে অনেক সুন্দর পোশাক কিনে আনেমনে মনে বলে, এখন আমি রাজার উপর প্রতিশোধ নিতে পারবসে ক্ষোভে ফেটে পড়ছিল

একদিন সে দৈত্যটিকে ডেকে বলে, ‘তুমি আজ রাতে প্রাসাদ থেকে রাজকুমারীকে এখানে নিয়ে আসবেতবে ভোরের আগেই তাকে ফেরত দিয়ে আসতে হবে

দৈত্য ঘুমন্ত রাজকুমারীকে সিপাহীর কক্ষে নিয়ে আসেসিপাহী রাজকুমারীর ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করার জন্য নির্দেশ দেয়এরপর বিছানা পরিষ্কার করে জুতা পালিশ করতে বলে

রাজকুমারী আধো ঘুমের মাঝেই সব কাজ করেসে আতঙ্কিত ছিলভেবেছিল সে স্বপ্ন দেখছেভোরের আগেই দৈত্য রাজকুমারীকে প্রাসাদে রেখে আসেসকালে রাজকুমারীর ঘুম ভাঙলে সে রাজার কাছে বলে, ‘আজ রাতে আমি খুব অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছিরাজকুমারী রাতে কি কি হয়েছিল সব জানায়বলে, ‘আমি ভেবেছিলাম সব স্বপ্নকিন্তু ঘুম থেকে উঠে আমার হাত-পা ব্যথা করছেআমার কাপড়ের ময়লা লেগে আছে

রাজা হুংকার দিয়ে বলল, ‘আমার মেয়েকে দিয়ে কে কাজ করিয়েছে- তাকে আমি খুঁজে বের করবতিনি রাজকুমারীর পকেটে ছোট ছিদ্র করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমার পকেটে মটরদানা ভরে রাখবেএতে করে রাজকুমারীকে কেউ নিয়ে গেলে খুঁজে বের করা সহজ হবেকিন্তু দৈত্য রাজার পরিকল্পনা শুনে ফেলেসে শহরের প্রতিটি রাস্তায় মটরদানা ছড়িয়ে দেয়

পরদিন সকালে রাজার লোকেরা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলোরাজা বুঝতে পারল রাজকুমারীকে অপহরণকারী কোনোভাবে তার কথা শুনে ফেলছেতাই রাজা একটি চিঠি লিখে মেয়েকে দেনরাজা বলেন, ‘যে তোমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে- তার খাটের নিচে তোমার একটি জুতা রেখে আসবেপরে তোমার জুতা পাওয়া গেলে ঘাতককে আমরা ধরতে পারব

সে রাতে রাজকুমারী সিপাহীর খাটের নিচে জুতা রেখে আসেপরদিন সে আটক হয়হঠা করে ধরা খাওয়ায় সিপাহী নীল বাতিটি নিতে ভুলে যায়তাকে কারাগারে পাঠানো হয়পরদিন তার ফাঁসি দেওয়া হবে

সৌভাগ্যবশত, কারাগারের প্রহরী ছিল সিপাহীর পুরনো বন্ধুসাহায্য করার জন্য সে প্রহরীকে অনুরোধ করেপ্রহরী তাকে বাতিটি এনে দেয়পরদিন ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার পূর্বে সিপাহীর শেষ ইচ্ছে পূরণ করার অনুমতি দেন রাজাসিপাহী বলল, ‘আমি নীল বাতিটি জ্বালাতে চাই

বাতির ধোঁয়া বের হতেই দৈত্যটি ভয়ানক চেহারা নিয়ে হাজির হয়তার হাতে একটি বিশালাকৃতির মুগুর ছিলদৈত্যটি প্রথমে সিপাহীকে খুলে মুগুর ঘোরাতে থাকেবেশ কয়েকজনের মাথা ফেটে যায়অনেকে আহত হয়রাজার সৈন্যরা আতঙ্কে চিকার শুরু করেবাকিরা পালিয়ে যায়

রাজা ভীত হয়ে সিপাহীর কাছে ক্ষমা চায়রাজা বলেন, ‘তুমি চাইলে আমার রাজ্যের অর্ধেক তোমাকে দিয়ে দিবরাজকুমারীর সঙ্গেও তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করব

এরপর সিপাহী রাজ্যের পাশাপাশি রাজকুমারীকেও পায়আর কোনো প্রয়োজন হলেই নীল বাতিটি জ্বালায়

গ্রিন্সের রূপকথা

×