শিল্পীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে মানববন্ধন করে বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীরা
বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার ফটকের সামনে সমবেত হয়েছিলেন একঝাঁক থিয়েটারকর্মী। তাদের সঙ্গে ছিলেন সংগীত, নৃত্যশিল্পীরা, কণ্ঠশিল্পীসহ শিল্পের নানা শাখার মানুষেরা। দুই দিন আগেও যারা ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে পথে নেমেছিলেন এবার তারা নামলেন প্রতিবাদে।
তাই প্রত্যেকের হাতেই শোভা পাচ্ছিল প্ল্যাকার্ড। কারও প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলÑ শিল্পাঙ্গনে হামলা রুখে দাঁড়াই। শিল্প-সংস্কৃতির স্থাপনা ধ্বংস করা চলবে নাÑ এমন বার্তাময় প্ল্যাকার্ড ঝুলছিল একজনের হাতে। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পাঙ্গনে ধ্বংস এবং শিল্পীর ওপর হামলার প্রতিবাদী অন্যান্য বার্তাবহ প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- সংস্কৃতি আমার পরিচয় শিল্প আমার সম্পদ, বিভক্তি নয় সম্প্রীতি চাই, ঐক্য থাকা জরুরি দেশের কথা ভাব যদি, সম্প্রীতি চাই সবাই মিলে দেশটা বাঁচাই, অসাম্প্রদায়িক বংলাদেশ চাইসহ একইসঙ্গে প্রতিবাদ ও প্রত্যাশার কথা। শিল্পীর ওপর হামলা ও শিল্পস্থাপনা ধ্বংসের প্রতিবাদ এবং বৈষম্যহীন সাম্যবাদী সমাজ গড়ার আহ্বানে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মাত্রই দুদিন আগে হাজার তরুণ অরুণ প্রাণের অস্তাচলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একটি দীর্ঘ দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি। জগদ্দলের পাথরের মতন বসে থাকা ক্ষমতালিপ্সু এবং অগণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের জন্য ছাত্র আন্দোলনের সকলকে এবং এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি এবং অভিনন্দন জানিয়েছি। তবে আজ আমরা এখানে বিজয়ের উৎসব পালনে আসিনি।
বরং অত্যন্ত উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা প্রকাশে এসেছি। দীর্ঘদিনের ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি সাবেক ক্ষমতাসীন দল মুখস্ত বুলির মতন যে ভয়ের জুজু দেখিয়ে ফিরত তা-ই যেন খুব পরিকল্পনামাফিক বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস আক্রমণ, ভাস্কর্য এবং শিল্পকর্ম ভাঙচুর, থিয়েটার দলের ওপর আঘাত এবং জ্বালাও পোড়াও চলছে নির্বিচারে।
প্রশাসনিক অস্পষ্টতা, শূন্যতা এবং সিদ্ধান্তহীতার সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটতরাজ চালানো শুরু করেছে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, লুটপাট, থানা জ্বালিয়ে দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর এবং বিখ্যাত ঐতিহ্য ময়মনসিংহের শশীলজসহ নির্বিচার ভাঙচুর, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপরে হামলা, তাদের সম্পত্তি লুটপাট ও পোড়ানো শুরু হয়।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং তাদের বাসাবাড়ি ও ধর্মস্থানের ওপর হামলা লুটপাট অব্যহত রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭টির মতো থিয়েটার দল পুড়িয়ে দেওয়ার খবর পাচ্ছি। প্রাচ্যনাটের থিয়েটার কর্মী এবং জলের গানের মূল সমন্বয়ক রাহুল আনন্দের বাড়ি এবং তার সকল বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা শুধু নিন্দা বা উদ্বেগের নয় আক্ষেপেরও বটে। সংবাদমাধ্যমের দপ্তরে ও মিডিয়া কর্মীদের ওপরে হামলা হয়েছে। এসব বহু হামলার খবর মিডিয়ায় পরিবেশিত হয় নাই এখনো। থানায় থানায় ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের ওপর হামলা করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওপর হামলা করছেন। নৃশংস সব মৃত্যুর খবর আমাদের কাছে নিয়মিত আসছে।
এরকম পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ দেশের নানান জায়গা থেকে আমরা শিল্পী, শিল্পসংগঠক, থিয়েটারকর্মী এবং থিয়েটার দলগুলোর পক্ষ থেকে চরম উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার খবর পাচ্ছি। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘোরতর আশঙ্কা করছি আমরা। পরবর্তী সময়ে নির্বিঘেœ শিল্প চর্চার পরিবেশের ব্যাঘাত ঘটবে কি না তার আশঙ্কা প্রকাশ করছি।