.
গহনা ছাড়া কি সাজ হয়? একেবারেই নয়। কেননা, সাজের অন্যতম অনুসঙ্গই গহনা। তাইতো আধুনিক ছেলেমেয়েরা নো মেকআপ মুডে থাকলেও বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান বা পার্টির জন্য তুলে রাখেন নানা ধরনের গহনা। যার মধ্যে অন্যতম চোকার। মেয়েরা গলার সঙ্গে আঁটসাঁট করে যে গহনা পরিধান করে তা চোকার নামে পরিচিত। নব্বই দশকের সময়ে চোকারের বেশ প্রচলন ছিল।
তখন আমাদের মা-দাদিরা শাড়ির সঙ্গে চোকার পরতেন। পুরনো দিনের ছবি দেখলেই এর সত্যতা মিলবে। বর্তমান সময়ে আবার শুরু হয়েছে চোকারের প্রচলন। তবে এ গহনাটি এখন শুধু শাড়ির সঙ্গেই না, এর ফ্যাশনে এসেছে নানা বৈচিত্র্য। বর্তমানের ফ্যাশন সচেতন প্রতিটি নারী শাড়ি ছাড়াও সেলোয়ার-কামিজ, কুর্তি বা ওয়েস্টার্ন ড্রেসের সঙ্গেও পরছেন চোকার।
চোকারের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। ফরাসি বিপ্লবের সময় প্রথমবারের মতো চোকারের দেখা পাওয়া যায় বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ফরাসি সমাজের উঁচু শ্রেণির নারীরা ‘ব্লাড রেড’ বা রক্তের মতো লাল রঙের, গলায় আঁকড়ে থাকা এক ধরনের গয়না পরতেন।
দেখতে আধুনিক যুগের চোকারের মতো এই গয়নাগুলো তারা গিলোটিনে প্রাণ হারানো শহীদদের স্মরণে পরে থাকতেন। বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতা, মেসোপটেমিয়া এবং প্রাচীন মিসরের সুমের সাম্রাজ্য থেকেই চোকার চলে আসছে। প্রাচীন লোকেরা সোনাকে সূর্যের সঙ্গে তুলনা করত। এজন্য তারা গলা, হাতে ও পায়ে গহনা পরত, তাদের বিশ্বাস ছিল, গহনা তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেবে। হাল ফ্যাশনে চোকার গহনায় যোগ হয়েছে নানা মাত্রা। বর্তমানে চোকার তৈরি করতে কুন্দল, মখমল, প্লাস্টিক, জপমালা, ক্ষীর, চামড়া, ধাতু যেমন রোপ্য, সোনাসহ নানা উপাদান ব্যবহৃত হয়।
যেহেতু ২০২০-২১-এ এসে আবারও নব্বই দশকের বিখ্যাত ধারাগুলো ফিরে আসছে। এ বছরও চারপাশে চোকারের বহুল ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। আজকের দিনে চোকার খুবই চমকপ্রদ একটি গহনা, যাতে একই সঙ্গে উপকরণ, রঙ ও বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গির সমন্বয় ঘটেছে। এ চোকারগুলো সাধারণ নেকলেসের সঙ্গে পরা হচ্ছে। এমন কী কেউ কেউ প্রথাগত বড় আকারের গহনার সঙ্গেও চোকার পরছেন।
ফ্যাশনপণ্যগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সময়কালে আমাদের মাঝে ফিরে আসে। কোনো কোনো পণ্য আবার কালের আবর্তে হারিয়ে যায় এবং অন্যগুলো আমাদের সবার সঙ্গে নতুন যুগে প্রবেশ করে। চোকারের একটি রাজসিক ইতিহাস রয়েছে এবং এটি প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ বছর ধরে টিকে আছে, যা আবারও প্রমাণ করেছে, এটি একটি স্থায়ী ফ্যাশন পণ্য এবং সংগ্রহে রাখার মতো গহনা।