‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ ব্যানারে বিটিভি প্রাঙ্গণে সমাবেশ করেন শিল্পীরা
দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর দুই জায়গায় সমাবেশ করে সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকারা। হাতে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিটিভি প্রাঙ্গণে হাজির হয় দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের একঝাঁক তারকা। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। ‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’- এই স্লোগান ব্যানারে ধারণ করে বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তাদের মত প্রকাশ করেন শিল্পীরা।
উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস, অভিনেত্রী সুজাতা, অভিনেতা রিয়াজ, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, নাট্যব্যক্তিত্ব শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এসএ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকারা। বিটিভিতে এ ধ্বংসযজ্ঞ কেন, এর পেছনে কারা?- সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান শিল্পীরা। পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ সমাবেশ করে দেশের বিনোদন শিল্পীদের একটি অংশ। এ সময় বৃষ্টি শুরু হলেও সমাবেশ চালিয়ে যান শিল্পীরা। চলচ্চিত্র, থিয়েটার, আলোকচিত্রশিল্পীরা সেখানে বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিটিভি প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, আমি দেখেছি, ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল সে কোটার পক্ষে আমরা সকলেই ছিলাম, কিন্তু আন্দোলনে এই ছাত্রদের ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের এ দেশটিকে। দেশটি হয়তো আবার আমরা কষ্ট করে ঠিক করে ফেলব কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল সেগুলো আর আমরা কোনোদিন ফিরে পাব না। আজকে আমরা বিটিভিতে এসেছি। আমাদের সংস্কৃতির অস্তিত্বের একটি জায়গা এটি। সে বিটিভিতে আগুন কেন? এ অগ্নিসন্ত্রাসী কারা? তাদের খুঁজে বের করতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে।
শমী কায়সার বলেন, সকল সংস্কৃতি কর্মী আমরা দাঁড়িয়েছি আজ শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিনে। আগস্ট মাস আমাদের একটি প্রতিবাদের মাস। যে মাসে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাসকে হত্যা করা হয়েছে। সে রকম একটি মাসে আমরা আবারও দাঁড়াব এই বাংলাদেশ টেলিভিশন চত্বরে সেটা আমাদের জীবদ্দশাতেও কখনো ভাবিনি। আজকে আমরা ব্যথিত, ক্ষুব্ধ, মর্মাহত।
রোকেয়া প্রাচী বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনকে ঘিরে জঙ্গি হিসেবে, দুষ্কৃতকারী হিসেবে যারা সহিংসতার রাজনীতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চাই।
আজিজুল হাকিম বলেন, আমরা সুন্দর বাংলাদেশ চাই, সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই, স্বস্তির বাংলাদেশ চাই, সন্ত্রাসের বাংলাদেশ চাই না। সবাই মিলে আসুন, দেশটাকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। আর সন্ত্রাস আমাদের কাম্য নয়।
শুভ্রদেব বলেন, যারা এ ন্যক্কারজনক কাজ করেছে তাদের সকলকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যে সকল প্রাণহানি ঘটেছে, সুষ্ঠুু তদন্তের মাধ্যমে সে সবের বিচার হবে এটাই আমার কাম্য।
সুজাতা বলেন, আমরা শিল্পীরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছিলাম, আছি, থাকব। দেশজুড়ে জ্বালাও, পোড়াও এ সন্ত্রাস আমরা চাই না, আমরা মানি না।
এ ছাড়াও সহিংসতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, হৃদি হক, সোহানা সাবা, সাজু খাদেম, অরুণা বিশ^াস, নিপুণসহ উপস্থিত অনেক তারকা।
অন্যদিকে ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে অভিনেতা, নাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, জুলাই মাসব্যাপী যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে যে প্রাণ গেছে, তার মাঝে শিশুরাও রয়েছে। এই বেদনা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। আমরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানাই এবং বিচার দাবি করি।
অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা বলেন, আমি সারাজীবন শিশুদের নিয়ে, শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেছি। যেটি হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। আমি চাই, যে ঘটনা হয়েছে- তার সুষ্ঠু বিচার হোক।
অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন বলেন, যে রাষ্টৃ নির্বিচারে গুলি চালায়, যে রাষ্ট্র মানুষ হত্যা করে সেই রাষ্ট্র কখনোই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি হতে পারে না। যে মানুষ মরেছে, আজকে তাদের জায়গায় আমি-আপনি থাকতে পারতাম। এই হত্যার দায় রাষ্ট্রের নিতে হবে।
আলোকচিত্রী মুনেম ইউসুফ বলেন, আমরা দেশের ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে মানুষ তার কথা বলতে পারছে না। আমরা কার কাছে বিচার চাইব? আমরা এমন এক রাষ্ট্রে দাঁড়িয়েছি, যেখানে মানুষ মোবাইল ফোনে কথা বলতেও ভয় পায়। আমরা মানবিক মর্যাদার এক বাংলাদেশ দেখতে চাই।
অন্যদের মধ্যে অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, নির্মাতা পিপলু আর খান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, অভিনেতা মোশাররফ করিম, ইরেশ যাকের ছিলেন এ কর্মসূচিতে।