ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

যমুনার হার্ড পয়েন্ট

উত্তাল তরঙ্গের জলে সূর্যের প্রতিচ্ছবি

​​​​​​​বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৬ জুলাই ২০২৪

উত্তাল তরঙ্গের  জলে সূর্যের  প্রতিচ্ছবি

সিরাজগঞ্জে যমুনা পাড়ের হার্ড পয়েন্টে পর্যটকদের ভিড়

আমার যমুনার জল দেখতে কালো/ চান করিতে লাগে ভালো/ যৌবন মিশিয়া গেল জলে’- এমন গান হৃদয় ছুঁয়ে যায় সবার। দূরে গাঙচিল, নানা রঙের মাছরাঙা পাখি- ছোঁ দিয়ে মাছ ধরে আবার উড়ে যায় নদীর কিনারায়। সেখানে শালিক, মুনিয়া পাখি ধীর পায়ে এগিয়ে শিকার ধরছে, কাঠ ঠোকরা, টিয়া পাখি গাছে গাছে ঘুরে জানান দিচ্ছে তাদের অস্তিত্ব। মাছরাঙা দেশের সুন্দর পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পাখি। জলের দিকে তাকিয়ে গাছের ডালে কিংবা বাঁশের মাথায় মাছরাঙা যখন শিকারের আশায় চুপ করে বসে থাকে তখন দূর থেকে দেখে মনে হয় শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা কোনো অনিন্দ্য সুন্দর এক শিল্পকর্ম।

প্রমত্ত যমুনার তরঙ্গে ঘোলা জলে সূর্যের প্রতিচ্ছবি, ভোরে ঘুঘু ডাকা, দূরে গাঙচিল, নানা রঙের মাছরাঙা পাখির ওড়াউড়ি মানুষকে আলোড়িত করে। যমুনার বুকে ছুটে চলা নৌকায় ঘুরে আনন্দ উপভোগ আর পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের লাল আভা নদীর জলে ডুবে যাওয়ার দৃশ্য কাব্যিক মানুষের মনকে করে আন্দোলিত করে, শিহরিত করে। তাই, কুয়াকাটা, কক্সবাজার কিংবা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ভ্রমণ পিয়াসীরাও আসছেন সিরাজগঞ্জে যমুনার হার্ডপয়েন্টে।

শেখ দিদার, আব্দুল্লাহ খান রাসেল তিন বন্ধু। পরিবার নিয়ে এসেছেন হার্ডপয়েন্টে। বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামে। প্রায়ই তারা এখানে বেড়াতে আসেন। যৌবনবতী যমুনার ঢেউ তাদের ভালো লাগে। তাদেরই একজন শেখ দিদার জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেখেছি, সমুদ্রের ঢেউ দেখেছি। তবে, যমুনার ঢেউয়ে ভিন্নতা আছে। যেমন- যমুনার উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে ইঞ্জিনচালিত যাত্রীবাহী নৌকা চলাচল করে, দূরগ্রামে গাছ-গাছালির দেখা মেলে। পাখিরা উড়ে যায় দূর থেকে বহুদূরে। তাদের বর্ণনায়- বর্ষায় প্রমত্ত যমুনার ভরা যৌবনা স্রোতের টানে ভেসে যায়। যা দেখতে অনেক সুন্দর।

বর্ষায় যমুনার বিচিত্র রূপের মধ্যে সর্বনাশা করালগ্রাসী রূপের ভয়ংকর আবির্ভাব ঘটে। সময় যমুনাপাড়ের মানুষের জীবনযাত্রায় চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয় গৃহপালিত গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি। চলতি বছর প্রথম দফা বন্যায় ৭৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরাও দুর্ভোগে পড়ে। প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। নদীর ভাঙনে ভিটা-মাটি হারিয়েছে শতাধিক পরিবার। সবই সর্বনাশা করালগ্রাসী যমুনার ভয়ংকর রূপ।

কুড়িগ্রাম হতে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ২০৫ কিমি বিস্তৃত অঞ্চলে যমুনার ছোবল হানা দিচ্ছে নদীপাড়ে। যমুনার ভাঙনের হাত থেকে সিরাজগঞ্জ শহরকে রক্ষার জন্য ১৯৯৫-২০০০ অর্থবছরে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোরিয়ার হুন্দাই কোম্পানি ১০০ বছরের নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করলেও ২০০৯, ২০১০ ২০১১ সালে তিন দফা ধস নামার ঘটনা ঘটে। কারণে বাঁধের ব্যাপক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে তা সংস্কার করা হয়। এতে করে সিরাজগঞ্জ শহর যমুনা নদীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায়। সেই সঙ্গে হার্ডপয়েন্টটি একটি পর্যটনের স্থান হিসেবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। প্রতি দিন দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভ্রমণপিপাসু মানুষ স্থানটি ভ্রমণ করে আসছেন। বর্ষায় এটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

শুধু হার্ডপয়েন্ট এলাকায়ই নয়, যমুনাপাড়ে ক্রসবাঁধ , নম্বর এলাকাও ভ্রমণপিয়াসী মানুষের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। এখানে দাঁড়ালে যমুনার পূর্ণরূপ পর্যবেক্ষণ করা যায়। তাছাড়া এখান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র এবং শনিবার ছাড়াও অন্যসব ছুটিতে শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ নারী-পুরুষ সম্মিলনে হার্ডপয়েন্ট হয়ে ওঠে এক মিলনমেলা। আড়াই কিলোমিটার হার্ডপয়েন্ট জুড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য, বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা বইয়ের আদলে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ তার জীবনের আলোািচত ঘটনার কিছু স্থিরচিত্র- যা দেয়াল অংকনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া রয়েছেÑ শানবাঁধানো বেঞ্চ, ওপরে ছাতা, দৃষ্টিন্দন খাবারের দোকান, শিশুদের বিনোদনের জন্য শেখ রাসেল পৌর পার্ক।

×