ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

 রাজধানীর পথে পথে ক্ষতচিহ্ন

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৬ জুলাই ২০২৪

 রাজধানীর পথে পথে ক্ষতচিহ্ন

.

কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালানো হয়েছে তান্ডব। এখনো থেমে নেই সে সহিংসতা। গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, সেতুভবন, ডেটা সেন্টার কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিকের বেশি যানবাহন পোড়ানো হয়েছে।

সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাশকতা হয়েছে রাজধানীতে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মহাখালী মিরপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি নাশকতা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আন্দোলনের নামে চলমান নাশকতায় শিক্ষার্থীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। বিভিন্ন তথ্য, ছবি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেশিরভাগ ঘটনায় হামলাকারীরা মধ্যবয়সী। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তারা বিএনপি-জামায়াতের কর্মী।মূলত ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয় নাশকতা। সেদিন পবিত্র আশুরার ছুটি থাকলেও আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। এর মধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়। পরে রাতে বিক্ষোভকারীরা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় ভাঙচুর চালায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর ১৮ জুলাই নাশকতার পরিমাণ বেড়ে যায়। এদিনে রামপুরায় বিটিভি, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেতু ভবনে আগুন দেওয়া হয়।

এছাড়া রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ি, মোহাম্মদপুর পুলিশ বক্স, মেরুল বাড্ডায় বিজিবির গাড়ি, মিরপুর-১০ নম্বর সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের গাড়ি, খিলগাঁও পুলিশ বক্স, রামপুরা থানা, মৎস্য ভবন, মতিঝিল পুলিশ বক্স, বনশ্রীতে পিবিআই কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, মিরপুর-১০ নম্বরে মেট্রোরেল স্টেশনের সিঁড়ি, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, উত্তরা টিঅ্যান্ডটি অফিস, খিলক্ষেত বিআরটিএ ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মনজুর হোসেন বলেন, অন্তত ৫৫টি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। হামলায় চার থেকে পাঁচজন কর্মী আহত হয়েছেন। হামলার আগে সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার হামলা চলাকালে অফিসের কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট করা হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানতে সাত সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। এদিকে অগ্নিসংযোগে উড়াল সড়কের মহাখালী বনানী টোল প্লাজা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পের পরিচালক এইচ এম এস আকতার বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে উড়াল সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এর দুটি টোল প্লাজা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতি নিরূপণে কাজ চলছে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ৯০ স্থানে যানবাহন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের খবর পেয়েছে তারা। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িই রয়েছে ১৩টি। পুলিশ-বিজিবির গাড়িসহ অন্তত ৩৮টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়, এর মধ্যে ২২টি মোটরসাইকেল রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় জামায়াতের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী রয়েছেন। ২০১৩-১৫ কিংবা ২০১৮ সালে হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে ওই এলাকায় ব্যাপক নাশকতা ঘটায় তারা। এবারও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সেখান থেকেই শুরু হয় নাশকতা। তারা সড়ক অবরোধ করে টোল প্লাজায় আগুন দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, হামলাকারীদের দেখে শিক্ষার্থী মনে হয়নি। কারণ তাদের বড় অংশ মধ্যবয়সী এবং সঙ্গে ছিল টোকাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্দোলনের নামে যেভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এমন সহিংসতা শুধু বিএনপি-জামায়াত শিবিরই করতে পারে। গত ১০ বছর ধরে তারা বহু চেষ্টা করেও সরকার পতন করতে পারেনি। এবার শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে ভর করে সরকারের পতন ঘটাতে মরণ কামড় দিয়ে মাঠে নেমেছে।এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই সহিংসতার নেপথ্যে শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বাইরে থেকেও চক্রান্তকারীরা ইন্ধন দিচ্ছে এবং পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। ইন্ধন না পেলে হঠাৎ এমন ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করা সম্ভব হতো না।

×