ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গ্যালারি কায়ায় বিশেষ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ১৫ জুলাই ২০২৪

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গ্যালারি কায়ায় বিশেষ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী

উত্তরায় গ্যালারি কায়ায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন এক দর্শনার্থী

সময়টা ছিল ২০০৪ সালের ২৮ মে। রাজধানীর উত্তরার চার নং সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ২০ নং বাড়িতে গড়ে ওঠে গ্যালারি কায়া। সেই সময় শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে বেশ কিছুটা দূরে প্রতিষ্ঠিত প্রদর্শনালয়টি চালিয়ে যাওয়াই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, ওই অঞ্চলে ছিল না কোনো গ্যালারি কিংবা শিল্পচর্চার পৃথক কোনো কেন্দ্র। আর সেই চ্যালেঞ্জটাই গ্রহণ করেছিলেন প্রদর্শনালয়টির পরিচালক চিত্রশিল্পী গৌতম চক্রবর্তী।

তিনি পণ করেছিলেন, শত ঝড় বা প্রতিকূলতা এলেও এক বছরের মধ্যে গ্যালারির পথচলা থামবে না। অবিচল সে অঙ্গীকারের কারণে ধীরে ধীরে শিল্পী ও শিল্পরসিকদের কাছে যেন প্রিয় প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে গ্যালারি কায়া। এরপর দেশ-বিদেশের নবীন-প্রবীণসহ খ্যাতিমান শিল্পীদের প্রদর্শনীর মাধ্যমে সময় গড়ানোর সমান্তরালে ক্রমশ সমৃদ্ধ হয়েছে কায়া। সময়ের ¯্রােতধারায় এ বছর প্রতিষ্ঠার কুড়ি বছর পূর্ণ করেছে প্রদর্শনালয়টি।

অন্যদিকে পদার্পণ করেছে একুশতম বছরে। সাফল্যের সে উদ্যাপনে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ প্রদর্শনী। যৌথ প্রদর্শনীটিতে ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতনামা ৩৫ চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্ম। উপস্থাপিত হচ্ছে জলরং, তেলরং, মিশ্র মাধ্যম, ছাপচিত্রসহ নানা মাধ্যমে সৃজিত বিবিধ বিষয়ের বৈচিত্র্যময় ৬৮টি কাজ। এসব কাজের সৃজনকাল ১৯৭৭ থেকে ২০২৪ সাল। সব মিলিয়ে শিল্পরসিকদের জন্য শিল্পায়োজনটি হয়ে উঠেছে তাৎপর্যপূর্ণ।     
গ্যালারিতে প্রবেশ করতেই চোখ আটকে যায় নিতুন কু-ু চিত্রিত ক্যানভাসে। লাল-নীল ও সবুজের খেলায় যেন মেতেছে চিত্রপটটি। জ্যামিতিক ফর্মে আঁকা ছবির মাঝে নানা অবয়বের দেখা মেলে। সেখানে বাস্তবতা কিংবা চারপাশের চেনা জগতের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় কল্পিত ভুবন। ভারতের বিখ্যাত চিত্রকর মকবুল ফিদা হুসেনের ছবিতে উঠে এসেছে শান্তির দূতরূপী এক পায়রা। দুই ডানা মেলে ঠোঁটে লাল ফুল আঁকড়ে ধরে সুদূরের পানে উড়ে যাচ্ছে পায়রাটি।

ধূসর রঙে সজ্জিত জমিনে উঁকি দেওয়া কিছু হাতের ছাপময় চিত্রকর্মটি আঁকা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। আবদুস শাকুর শাহর চারটি চিত্রকর্মেই লোকজ আঙ্গিকের আশ্রয়ে মূর্ত নারী-পুরুষ থেকে প্রেমিক-প্রেমিকার মুখচ্ছবিসহ ফুল-লতাপাতায় আবৃত নিসর্গের নান্দনিকতা। নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে বাদ্যযন্ত্রের সহযোগে পার্বত্যবাসীর বর্ণিল উৎসবের ছবি এঁকেছেন কনক চাঁপা চাকমা। মুর্তজা বশীরের তিনটি চিত্রকর্মই প্রতিকৃতিধর্মী। ক্যানভাসে অ্যাক্রেলিক মাধ্যমে আঁকা কাইয়ূম চৌধুরীর শিল্পকর্মে রয়েছে ঢেউ খেলানো চুলের অধিকারী নারীর মুখ। রফিকুন নবীর ১৬ বছর আগের আঁকা চিত্রকর্মের বিষয় হয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 
এ ছাড়া প্রদর্শনীতে যাদের চিত্রকর্ম রয়েছে তারা হলেন- শিল্পী আবুল বারক আলভী, গণেশ হালুই, আহমেদ শামসুদ্দোহা, দেবদাস চক্রবর্তী, আলপ্তগীন তুষার, আশরাফুল হাসান, অতীন বসাক, চন্দ্র ভট্টাচার্য, চন্দ্র শেখর দে, গৌতম চক্রবর্তী, হামিদুজ্জামান খান, জামাল আহমেদ, কামালুদ্দীন, কাজী আবদুল বাসেত, মানু পারেখ, মোহাম্মদ ইউনুস, মোহাম্মদ ইকবাল, রণজিৎ দাস, রতন মজুমদার, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, সমীরণ চৌধুরী, সনৎ কর, শাহানুর মামুন, শহীদ কবির, শিশির ভট্টাচার্য্য, সোহাগ পারভেজ ও সুনীল দাস।
শিল্পায়োজনটি প্রসঙ্গে গ্যালারি কায়ার পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, গ্যালারি কায়া তার বিশতম বর্ষ অতিক্রম করে একুশতম বছরের যাত্রা শুরু করেছে। শুরু থেকেই গ্যালারিটি শুদ্ধ সৃজনশীলতা এবং শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমগত উপাদানকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। অব্যাহত রেখে নিরন্তর এক শিল্পযাত্রা। আর সেই শিল্পিত পথচলা এ পর্যন্ত নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের একক এবং দলীয় মিলিয়ে ১৪৭টি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। এ ছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে আটটি আর্ট ক্যাম্প, ৩৫টি সফল আর্ট ট্রিপ, ৭টি ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছি। 
বিশেষ এই প্রদর্শনী চলবে ১৯ জুলাই পর্যন্ত। সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

×