শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ স্বর্ণবোয়াল নাটকের দৃশ্য
চিরলি গাঙের এক অজেয় মাছ স্বর্ণবোয়াল এবং একেস্বরা সাঁঝমালা ও জেলে পাড়ার যুবক তিরমনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে স্বর্ণবোয়াল নাটকের কাহিনী। সাঁঝমালা এবং স্বর্ণবোয়ালÑকাউকেই সাধনা ছাড়া ধরা যায় না। নিকারি পাড়ার বলিষ্ঠ যুবক তিরমন জয় করে নেয় সাঁঝমালার মন।
এমনকি তিরমনের কাছে ধরা দেয় সেই অজেয় স্বর্ণবোয়ালও। তবে শেষ পর্যন্ত স্বর্ণবোয়াল ধরে রাখতে পারে না তিরমন। লোককাহিনীর উপাদান আশ্রিত জয়-পরাজয়ের বাইরে হারজিতহীন দর্শনময় নাটকটির রচয়িতা সেলিম আল দীন। সংলাপের সমান্তরালে সংগীতের সহযোগে কাব্যিক ভাষায় রচিত রূপকধর্মী প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ হলো রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য স্নাতকদের নিয়ে গড়া নাট্যদল থিয়েট্রেক্স বাংলাদেশ প্রযোজিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী।
চকচকে সোনার মতো শরীরে রং ছড়ানো এক মাছ হচ্ছে স্বর্ণবোয়াল। নাটকের প্রধান চরিত্র। বিশালাকৃতির মাছটি সবার নজরে পড়ে না কিংবা চাইলেও দেখা পায় না। মাছটি শিকারের নেশায় জীবন দেয় জনম মাঝি ও খলিশা মাঝি। ৬০ বছর বয়সে কোষা নৌকায় বসে জনম মাঝি এক ভোরে ছিপ ফেলে বড়শিতে গেঁথেছিল মাছটিকে। কিন্তু ছোট্ট কোষাসহ মাছটি তাকে টেনে নেয় গভীর জলে। ঘটনাক্রমে জনম মাঝির স্বর্ণবোয়াল শিকারের নেশা সংক্রমিত হয় ছেলে খলিশার শরীরে, কিন্তু সেও পারে না মাছটি শিকার করতে। তার ছেলে তিরমন অজেয় মাছটিকে জয় করতে পারবেÑএমন স্বপ্ন দেখে।
বাবার কাছে মাছটির গল্প শুনতে শুনতে তিরমনের ভেতরও শিকারের নেশা জেগে ওঠে। তাই মৃতপ্রায় বাবাকে রেখে মায়ের নিষেধ উপেক্ষা করে ভাদ্র মাসের এক ঝড়ের রাতে বড়শি নিয়ে সে যাত্রা করে স্বর্ণবোয়াল শিকারে। প্রচন্ড লড়াইয়ের পর বোয়ালটিকে ধরেও ফেলে তিরমন। তবে নদীতীর পর্যন্ত টেনে আনতে পারলেও শেষ পর্যন্ত মাছটি লাফ দিয়ে গভীর জলে মিলিয়ে যায়। অজেয় মাছ অজেয়ই রয়ে যায়। ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত স্বর্ণবোয়ালও হারেনি, তিরমনও হারেনি অথবা দুজনের কেউই জেতেনি। হারজিতহীন এই দর্শন নিয়েই নির্মিত নাটক স্বর্ণবোয়াল।