ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

চাষাঢ়া বৃক্ষমেলায় উপচেপড়া ভিড়

দেশী-বিদেশী বনজ ফলদের চারা, বিক্রি হচ্ছে হরদম

মো. খলিলুর রহমান 

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ১৪ জুলাই ২০২৪

দেশী-বিদেশী বনজ  ফলদের চারা, বিক্রি হচ্ছে হরদম

নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ার টাউন হলে চলছে বৃক্ষমেলা। এতে দেশী-বিদেশী নানা বনজ, ফলদ ও ফুল গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে

চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে পিংপং গাছের চারা। পিংপং বিদেশী গাছের চারা। শুধু পিংপংই নয়, রয়েছে থাইল্যান্ডের আতা, ননীফল রুবি লংগানসহ কমপক্ষে বিশ ধরনের নানা জাতীয় বিদেশী গাছের চারা। রুবি লংগান বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার টাকায় থাইল্যান্ডের আতা গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায়। এভাবেই বিদেশী ফলের গাছের চারাও বিক্রির তালিকায় স্থান পেয়েছে।

কিনে নিচ্ছেন শৌখিন পরিবারের মানুষজন। শোভা পাচ্ছে ভবনের ছাদে, বেলকনিতে বারান্দাসহ বাসাবাড়ির নানা স্থানে। বিশ ধরনের বিদেশী গাছের চারাসহ দুই শতাধিক বনজ, ফলদ ফুল গাছের হরেক রকমের চারা নিয়ে চাষাঢ়ার টাউন হল প্রাঙ্গণে বৃক্ষমেলায় ছুটে এসেছেন জামাল হোসেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ার টাউন হল প্রাঙ্গণে বিশ দিনব্যাপী বসেছে বৃক্ষমেলা।বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ,’ ‘গাছ লাগাই পরিবেশ বাঁচাই’Ñ ধরনের নানা স্লোগানকে সামনে রেখে বসেছে বৃক্ষমেলা। বৃক্ষমেলায় নারীসহ গাছপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড় লেগেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে হরেক রকমের গাছের চারা বিক্রি। যা শৌখিন পরিবারের ভবনের ছাদে বাসা-বাড়িতে শোভা পাচ্ছে। মেলায় শুধু জামাল হোসেনই নন তার মতো এস এম আরিফ মিহির, জাহিদুল ইসলাম রিপন মো. ¯্রাফিলসহ বিশ থেকে পঁচিশজন নার্সারির মালিক নানা জাতের গাছের চারা নিয়ে বৃক্ষমেলায় অংশ নিয়েছেন। বৃক্ষমেলাটি শুরু হয়েছে চার জুলাই থেকে। যা চলবে বিশ দিনব্যাপী। মেলায় অংশ নেওয়া কয়েকজন নার্সারির মালিক বৃক্ষপ্রেমীকের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানান, নার্সারির ব্যবসা, চারা বেচা-বিক্রি গাছ লাগানোর নানান অভিজ্ঞতার কথা।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেলপাড়ার ভিশন নার্সারির মালিক জামাল হোসেন। প্রতিবছরই শহরের চাষাঢ়ায় টাউন হল প্রাঙ্গণে দুই শতাধিক দেশী-বিদেশী ফলদ, বনজ ফুলগাছের চারা নিয়ে বৃক্ষমেলায় ছুটে আসেন তিনি। প্রায় ২৫ বছর ধরে বৃক্ষমেলায় অংশ নেন জামাল হোসেন। শুধুু মেলাই নয় দেশের বিভিন্ন স্থানের বৃক্ষমেলায় নানা প্রজাতির চারা নিয়ে হাজির হন তিনি। নার্সারি করা তার নেশা থেকে পেশায় পরিণত হয়েছে। তার স্টলে প্রায় দুই শতাধিক দেশী-বিদেশী গাছের চারা পসরা সাজিয়ে বিক্রির অপেক্ষায় থাকছেন। চারাগুলো সারি সারি করে সবুজের সমাহারে সাজিয়ে রেখেছেন তিনি। বৃক্ষমেলাটি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত চার জুলাই মেলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। নারায়ণগঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার আবু মুন্না বলেন, গত জুলাই থেকে বৃক্ষমেলাটি শুরু হয়েছে, যা চলবে বিশ দিনব্যাপী। মেলায় নানা স্থান থেকে ২৫টি স্টল বসেছে। প্রতিটি স্টলেই রয়েছে দেশী-বিদেশী ফলদ, বনজ ফুলগাছের চারা। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে বনজ, ফলদ ফুলগাছের চারা কিনতে ছুটে আসছেন অসংখ্য নারীসহ গাছপ্রেমীরা। সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলছে বৃক্ষমেলা।

ভিশন নার্সারির মালিক জামাল হোসেন বলেন, তার নার্সারিতে রয়েছে বিদেশী পিংপং, ননীফল, থাইল্যান্ডের আতারুবি লংগানসহ বিশ প্রজাতির নানা ধরনের চারা। ছাড়াও দেশী- বিদেশী মিলে রয়েছে দুই শতাধিক গাছের চারা। তিনি বলেন, তার নার্সারিতে মালপুচিয়া দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীকনৌকাতৈরি করা হয়েছে। যা বিক্রি করা হবে ছয় হাজার টাকায়। ফতুল্লার ভুঁইঘরের মেসার্স সুবর্ণ নার্সারির মালিক জাহিদুল ইসলাম রিপন। তিনিও চাষাঢ়ার টাউল হল প্রাঙ্গণের বৃক্ষমেলায় দুই শতাধিক দেশী-বিদেশী ফলদ, বনজ ফুলের চারা নিয়ে স্টল দিয়ে বসেছেন। তার স্টলে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকায় চারা বিক্রি হচ্ছে।

জামতলার বাসিন্দা আবুল ফজল আড়াইহাজার টাকায় একটি ব্রুনাই কিং জাতের আম গাছের চারা নিয়ে যান। মেলার স্টলগুলোতে রয়েছে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা, লেবু, আতা, শরিফা, বিলম্বি, করমচা, গাব, বিলাতি গাব, বিচিকলা, গোলাপজাম, ডেউয়া, আঁশফল, জামরুল, বেল, কদবেল, চালতা, সফেদা, লটকন, তিতিজামসহ শতাধিক ফলদ গাছের চারা। ছাড়াও স্টলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতি রঙের গোলাপ, জবা, জুঁই, বেলী, শিউলী, হাসনাহেনা, ডালিয়া, কেনিয়া, চন্দ্র মল্লিকা, গাদা জিনিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক ফুলগাছের চারা। মেসার্স সুবর্ণ নার্সারির মালিক জাহিদুল ইসলাম রিপন বলেন, বৃক্ষমেলা প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেচা-বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী নারীসহ গাছপ্রেমীরা ছুটে আসছেন মেলায়। বনজ, ফলদ ফুলগাছের চারা কিনতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন গাছপ্রেমীরা। বেশ জমে উঠেছে বৃক্ষমেলাটি। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিশ হাজার টাকা থেকে বাইশ হাজার টাকার নানা জাতীয় গাছের চারা বিক্রি করতে পারছেন। তিনি বলেন, মেলায় রয়েছে বারোমাসী আম লেবুসহ নানা ধরনের ফল গাছের চারাও। তিনি একটি কলাগাছের চারা বিক্রি করছেন আড়াইশ টাকা থেকে তিনশ টাকায়। তিনি বলেন, বনজ ফলদ গাছের চারার পাশাপাশি নানা জাতীয় ফুলগাছের চারা কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। অনেক সৌখিন পরিবারের বাসাবাড়িতে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের বাহারি গাছ। তাই নানা ধরনের বাহারি ফুলগাছের চারা কিনতেও অনেকেই ছুটে আসছেন ব্ক্ষৃমেলায়।

দেওভোগের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, বিভিন্ন জাতের কয়েকটি গোলাপ, জবা, বেলীসহ নানা ধরনের ফুলের চারা কিনতে এসেছি বৃক্ষমেলায়। আকার মতো হাজারো ক্রেতা মেলা থেকে নানা জাতীয় ফলদ, বনজ ফুলগাছের চারা কিনতে ছুটে এসেছেন। বাহারি ফুলের চারা শোভা পাচ্ছে বাসাবাড়িতে। এভাবেই বৃক্ষমেলায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে। স্টলের মালিকদের আশা, বিশ দিনব্যাপীই বেচাকেনায় ধুম পড়বে। বিক্রি হবে দেশী-বিদেশী নানা প্রজাতির বনজ, ফলদ ফুলগাছের চারা। আশায় বুক বেঁধে আছেন স্টল দেওয়া নার্সারির মালিকরা।

×