ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

নারীর শরীরী অভিব্যক্তিকে উপজীব্য করে আঁকা ছবির প্রদর্শনী

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ১২ জুলাই ২০২৪; আপডেট: ০০:৫৪, ১৩ জুলাই ২০২৪

নারীর শরীরী অভিব্যক্তিকে উপজীব্য করে আঁকা ছবির প্রদর্শনী

প্রগতি সরণির অবিন্তা গ্যালারিতে ‘উইন্ডস অব ফ্লেভার’ শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা

প্রতিটি ক্যানভাসে ধরা দিয়েছে গতিশীলতা। রঙের পরিমিত ব্যবহারের সঙ্গে গতিময় রেখার আঁচড়ে সজ্জিত হয়েছে চিত্রপটসমূহ। মূলত প্রকৃতির সমান্তরালে নারীর শরীরী অভিব্যক্তিকে উপজীব্য করে আঁকা হয়েছে ছবিগুলো। ড্যান্স বা নৃত্য সিরিজের ছবিগুলোতে সেই শরীরী ভঙ্গিমার অনন্য রূপায়ণ ঘটেছে। এই সিরিজের একটি বিশাল আকৃতির চিত্রপটে একসঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে সাত নারী।

এই নারীকুলের সবাই ব্যস্ত দৈনন্দিন কাজে। শরীর অবনত করে কলসে জল ভরা কিংবা  কাঁধে বা মাথায় কলস নিয়ে হেঁটে যাওয়া ভঙ্গিমার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে নাচের ছন্দোময়তা। বাঁক খেলানো দেহের সচলতায় পরিপূর্ণতা দিয়েছে শিল্পরূপকে।  সব মিলিয়ে পুরো ফ্রেমজুড়ে যেন ভেসে বেড়ায় ঐকতানের সুর। এই সিরিজের আরেক ছবিতে সমুদ্রতটের বেলাভূমিতে বিচণাকারী নারীর বিচিত্র ভঙ্গিমার শরীরী প্রকাশ দেখা যায়।  সেখােেন ফর্মের  খেলায় মূর্ত গতিশীলতার অভিব্যক্তি।  ফিগার কম্পোজিশন সিরিজের ছবিতেও গতিশীলতায় মূর্ত হয়েছে নারীর শরীরী ভঙ্গিমা। দৌড় শিরোনামের ছবিতে ঘোড়ার ছুটে চলা পদযুগলের ক্ষিপ্রতার সঙ্গে হুবহু মিলে যায় এক দৌড়বিদের পদক্ষেপ। এভাবেই গ্রামীণ নারী থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী শিরোনামের ছবিগুলো হয়ে উঠেছে গতিময়তার প্রতীক। শিল্পরসিকের নয়নে মুগ্ধতা ছড়ানো ছবিগুলো এঁকেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রকর জাহাঙ্গীর হোসেন। সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে রাজধানীর প্রগতি সরণির অবিন্তা গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। শিল্পায়োজনটির শিরোনাম উইন্ডস অফ ফ্লেভার। 
শুক্রবার ছুটির দিনে বিকেলে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়।এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুই প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম ও ফরিদা জামান। অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ও তার স্ত্রী এবং ঢাকায় নিযুক্ত আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো কার্লোস  সেসা। সভাপতিত্ব করেন অবিন্তা গ্যালারি অফ ফাইন আর্টসের চেয়ারপারসন নীলু রওশন মোরশেদ। অনুভূতি প্রকাশ করেন শিল্পী জাহাঙ্গীর হোসেন। 
জাহাঙ্গীর হোসেনের শিল্প সৃজনের মূল ভাবনায় রয়েছে মানবজীবনের গতিময়তা, গতিশীলতা এবং প্রকৃতি ও আশপাশের জীবনধারা। এই চিত্রশিল্পী প্রাচ্যের জীবন এবং তার শিল্পিত দর্শনকে মেলে ধরেছেন পশ্চিমা সমকালীন ধারায় অংকিত শিল্পকর্মে। প্রতিটি চিত্রকর্ম সৃজনে তিনি ভিন্ন ধারা এবং আঙ্গিকের আশ্রয়ে বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করেছেন। সেখানে গতিশীল মানুষের  দেহ হয়ে উঠেছে শিল্পীর সৃজনের মূল বিষয়।

বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিযুক্ত মানুষ তার সৃষ্টিশীলতার তাড়নাকে উস্কে দিয়েছে কিংবা প্রাণিত করেছে। অন্যদিকে নারী  দেহের  বাঁকক্রীড়ায় শুধু প্রেমাতুর আকাক্সক্ষার ছবি আঁকেননি শিল্পী। বরং কর্মের মধ্যেও নিয়ত অজস্র দেহজ মুদ্রার ছান্দসিক প্রকাশকেও মেলে ধরেছেন চিত্রপটে। এঁকেছেন কর্মনিষ্ঠ শ্রমী মানবীর বিচিত্ররূপ। আর শুধু বাঙালি নারীর নয়, অন্য নৃগোষ্ঠী নারীর  দেহসৌষ্ঠব ও তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যে ভিন্ন পাঠ রয়েছে তা নৃতাত্ত্বিক মনোযোগে পাঠ করেছেন শিল্পী জাহাঙ্গীর।

তাঁর ছবিতে প্রধান দ্রষ্টব্য গতি হলেও পরিণামে গতি ও স্থিতির দ্বান্দ্বিক সমীকরণেই তিনি আস্থা খুঁজে পেয়েছেন। নন্দতত্ত্বের বিবেচনায় এ শিল্পীর কাজে প্রাচ্য আদর্শ ও পশ্চিমের  রেনেসাঁজাত শিল্পব্যাকরণের ঐক্য খুঁজে পাওয়া যায়। নকশাধর্মিতা ও অমিশ্র রঙের ব্যবহারের পাশাপাশি রয়েছে আলো-ছায়ার বিলি-বণ্টনে জ্যুম প্রমাণের উদ্যোগ। উল্লিখিত দুই আদর্শের শিল্প রচনা করে জাহাঙ্গীর হোসেন নিজের সৃজন ক্ষমতা পরখ করে  দেখেছেন। এই  দ্বৈরথেই তাঁর চিত্তের আনন্দ চলমান রয়েছে বিচিত্র পথে। সব মিলিয়ে ৬৩টি শিল্পকর্মের সম্মিলনে সেজেছে এই শিল্পায়োজন। আগামী ২৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। 
 

×