হাত হারানো মানুষের জন্য রোবটিক আর্মসহ আবিষ্কারক খুদে বিজ্ঞানী প্রীতম পাল
খুদে বিজ্ঞানী প্রীতম পাল হাত হারানো মানুষের জন্য রোবটিক আর্ম বা মানবদেহে সংযোজনের জন্য কৃত্রিম হাত আবিষ্কার করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে হাত হারানো ধনাঢ্য ব্যক্তিরা বিদেশ থেকে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কৃত্রিম হাত আমদানি করে তা সংযোজন করছেন। তবে খুদে বিজ্ঞানী প্রীতমের উদ্ভাবিত কৃত্রিম হাত তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন তথা মানবদেহে কৃত্রিম হাত সংযোজনের মাধ্যমে একজন মানুষকে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার জন্য রোবটিক আর্মের যুগোপযোগী উন্নয়ন ও সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারজাতে আগ্রহী খুদে বিজ্ঞানী প্রীতম পাল। এজন্য উদ্ভাবন নিয়ে আরও কাজ করতে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের শিহিপাশা গ্রামের বাসিন্দা ও রাজিহার ইউনিয়নের সচিব গৌতম পাল ও গৃহিনী কাজলী পালের ছেলে প্রীতম। সে গৈলা মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। বর্তমানে সে বরিশাল নগরীর অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত।
খুদে বিজ্ঞানী প্রীতম পাল জানিয়েছে, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় সারাদেশসহ সারাবিশ্বে অনেক লোক তাদের হাত হারাচ্ছেন। বেঁচে থাকার জন্য তাদের বাকি জীবন কর্মহীন হয়ে থাকতে হয়। পাশাপাশি অন্যের ওপর নির্ভর করেও তাদের সব কাজ করতে হচ্ছে। এমন সব মানুষের জন্যই তার আবিষ্কৃত রোবটিক আর্ম বা কৃত্রিম হাত মানবদেহে সংযোজন করা যেতে পারে। মানবদেহে এই কৃত্রিম হাত সংযোজন করলে যেখানে মানুষের হাত পৌঁছানো সম্ভব নয়, এমন ভারি যান্ত্রিক স্থানেও কৃত্রিম হাত অনায়াসে কাজ করতে পারবে। স্বাভাবিকভাবেই এই হাত দুই থেকে ছয় কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে সক্ষম। হেভিওয়েট হাত হিসেবে এর স্থায়িত্বও অনেক বেশি।
খুদে বিজ্ঞানী প্রীতম পাল তার সাফল্যের জন্য দেখা স্বপ্নের পরিকল্পনা নিয়ে জানিয়েছে, একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে একটি ভিডিও ক্লিপে দেখতে পায় রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধে একটি হাত হারিয়েছেন একজন সৈনিক। ওই সৈনিক একদিন ফিরলেন নিজের স্বজনদের কাছে বাড়িতে। বাড়ি ফেরার পূর্ব অপেক্ষায় স্ত্রী ও শিশু সন্তানরা। দীর্ঘদিন পর বাবা বাড়ি আসছে তাই অধীর আগ্রহে তার অপেক্ষা করে পথচেয়ে বসে আছে সন্তানরা। কলিং বেল চাঁপতেই সন্তানরা দরজা খুলে দিল। বাবা দাঁড়িয়ে রয়েছেন দরজার সামনে। সন্তানরা অপেক্ষা করছে বাবা তাদের জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নিয়ে আদর করবে। আবার সন্তানদের ভাবনা এলো বাবা ফুল দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানাতে একটি হাত হয়ত তার পেছনে রেখেছে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটল না। হতভাগ্য বাবা এর কোনোটাই যখন করলেন না, তখন সন্তানরা দেখতে পেল যে, তাদের বাবার একটি হাত নেই। কাটা গেছে। হৃদয় বিদারক দৃশ্যর এমন একটি ভিডিও চিত্র দেখে এমন হতভাগ্য বাবাদের কৃত্রিম হাত তৈরির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন প্রীতম পাল।
প্রীতম আরও জানায়, হোস্টেলে থেকে তার বাবার কাছ থেকে আনা পড়াশোনার খরচ থেকে কিছু অর্থ সঞ্চয় করে সে প্রথমে এই উদ্ভাবনী কাজে মনোযোগ দেয়। উদ্ভাবনী বিষয়টি তার সহপাঠী ও বাবা জানতে পারেন। এরপর প্রীতমের বাবা তাকে উৎসাহিত করে। নিজের সঞ্চয় ও পরিবারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করে এই রোবটিক আর্মের পেছনে। মানব কল্যাণে উদ্ভাবন করা খুদে বিজ্ঞানী প্রীতম পালের নিরলস পরিশ্রমের কারণে তার স্বপ্ন আজ বাস্তবে ধরা দিয়েছে।
সম্প্রতি সময়ে বরিশাল সদর উপজেলায় অনুষ্ঠিত ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলায় খুদে বিজ্ঞানী প্রীতম পাল তার আবিষ্কৃত রোবটিক আর্ম বা মানবদেহে সংযোজনের জন্য কৃত্রিম হাত নিয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলায় প্রদর্শন করে তুমুল হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছেন। বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে প্রীতম পাল।
প্রীতমের বাবা ইউপি সচিব গৌতম পাল জনকণ্ঠকে জানান, তার ছেলের উদ্ভাবন নিয়ে তিনি আনন্দিত। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাশাপাশি প্রীতম তার উদ্ভাবনীতে আরও সাফল্য পাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।