ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

পিজিআরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভাষণ

অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে দেশ ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ৭ জুলাই ২০২৪

অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে  যাবে দেশ ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আমার বাবার হাতে গড়া সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হওয়ায় সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত বৈশ্বিক মানদন্ডে গড়ে তোলার জন্য তার সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।

রবিবার ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) সদর দপ্তরে এর ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে বলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছে। কালের পরিক্রমায় প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট একটি অত্যন্ত সুসংহত বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র এবং নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে প্রমত্ত পদ্মার বুকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে জাতির পিতার মার্চের ভাষণের অমোঘ মন্ত্রআমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটা আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি যে কারো রক্তচক্ষুকে বাংলাদেশ ভয় পায় না। আমরা ইচ্ছা করলে নিজেরাও পারি। এদেশকে কেউ আর পেছনে টানতে পারবে না। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। কারও কাছে মাথা নিচু করে নয়। ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ   সোনার বাংলাদেশ তথা আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্নস্মার্ট বাংলাদেশগড়ে তোলারও দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ কামাল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকালে আত্মাহুতি দানকারী পিজিআর সদস্যদের পরিবারের কাছে অনুষ্ঠানে অনুদান উপহার হস্তান্তর করেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রী পিজিআর সদর দপ্তরে পৌঁছালে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি গাছের চারাও রোপণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ একুশ বছর পর৯৬ সালে তার সরকার গঠনের উল্লেখ করে বলেন, যে সশস্ত্র বাহিনী আমার বাবার হাতে গড়া তাকে আরও উন্নত করা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার সেই পদক্ষেপ আমি নিয়েছিলাম পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি যাতে হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা শুরু করি।

টানা চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর  সামরিক স্বৈরশাসন এবং বার বার ক্যু এবং এর জের তুলে মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার হত্যা এবং প্রবাসে তার বছর রিফিউজি জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়ার পর৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে একরকম জোর করেই দেশে ফিরে আসার প্রেক্ষাপট স্মরণ করে৮১ সালের জুন দফা দিবস পালনকালে তার প্রথম বক্তৃতার কথাও এখানে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যে আমি সশস্ত্র বাহিনীতে আর কোনো বিধবার কান্না শুনতে চাই না। সন্ত্রানহারা পিতার বা পিতাহারা সন্তানের কান্না শুনতে চাই না। তখন থেকে আমার প্রচেষ্টাই ছিল যারা আমাদের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে সেখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সেটাকে আরও উন্নত সমৃদ্ধশালী করা। যেখানে সংঘাত নয় শান্তি থাকবে। তখন থেকে একটাই চেষ্টা ছিল যে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন সে দেশ কখনো ব্যর্থ হতে পারে না।

একটি আধুনিক যুগোপযোগী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তার সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর আরও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য৯৮ সালেন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং ওয়ার কলেজআমি গড়ে তুলি। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ’৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট), আমর্ড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ তখন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি ২০০০ সালে সেনা, নৌ বিমান বাহিনীতে নারী অফিসার অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিজিআরের সদস্যরা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, জাতির পিতার পরিবার-সকলের নিরাপত্তায় বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাছাড়া, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। পিজিআরের সকল সদস্যের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

পিজিআর সদস্যদের উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালনকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমি জানি আমার জীবনটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এখানে যারা দায়িত্ব পালনে আসনে তারাও ঝুঁকি নিয়েই এখানে আসেন। তাই তাদের নিরাপদ জীবনের জন্য তিনি তার পরিবার পরিজনের জন্য যখন দোয়া করেন তখন আশপাশে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন তাদের জন্যও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করেন বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আমি আমাদের প্রিয় গার্ডসদের বলব যেনিñিদ্র নিরাপত্তাই গার্ডসদের লক্ষ্যএই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি এই রেজিমেন্টের সদস্যগণ সাহস, আন্তরিকতা, পেশাগত দক্ষতা, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমের শপথে বলিয়ান হয়ে সর্বদা দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আপনাদের এই কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, নিয়মিত প্রশিক্ষণ পেশাগত অনুশীলনের মাধ্যমে এই গার্ড রেজিমেন্ট আগামীতে আরও দক্ষতা অর্জন করবে। বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ^াস করে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সব থেকে বেশি অবদান রেখে যাচ্ছে এবং কর্তব্য পালনস্থলের মানুষের হৃদয়ও তারা জয় করে আনেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সেটার জন্য তিনি গর্বিত। তার সরকার ২০০৯ থেকে এই পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকাতে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ধারাটা সূচিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সময় দেশের প্রত্যেক ভূমিহীন-গৃহহীনদের বিনাপয়সায় ঘর করে দেওয়ার তার আশ্রয়ণ প্রকল্পের উল্লেখ করে দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে আনার জন্যই সবাইকে সবক্ষেত্রে কৃচ্ছ্র সাধনেরও অনুরোধ করেন।

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমি আন্তর্জাতিকভাবে যখন যেখানে গিয়েছি এর প্রতিবাদ করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। কারণ আমরা সবসময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আছি। সবসময়ই আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি এবং ন্যায়ের সঙ্গে থাকি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই- মহাকশে উৎক্ষেপণ করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা ইন্টারনেট সংযোগ, বিনামূল্যে মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক, সাধারণ বৃত্তি-উপবৃত্তি এবং গবেষণা উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশটাকে আর্থসমামাজিকভাবে আরও উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। যারা স্বাধীনতার সময় বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কি হবে এটাতোবটমলেস বা্েস্কট’ (তলাবিহীন ঝুড়ি) হবে- সেটা আর তারা বলতে পারে না। বরং বলতে হয় বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে আমরা ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।

×