ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

৬৫ ভাগ শিক্ষকের পদ শূন্য

শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল

প্রকাশিত: ২১:৪২, ৫ জুলাই ২০২৪

শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ

দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ

দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের- বাংলা মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৩১ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫১ জন। ১৮০টি পদে কোন শিক্ষক শিক্ষা কর্মকর্তা নেই।

ফলে অনুমোদিত পদের প্রায় ৬৫ ভাগেরও বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬০ বছর পরও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, কিউরেটর, প্রভাষক, প্যাথলজিস্ট, মেডিক্যাল অফিসার বায়োকেমিস্টের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর অর্ধেকেও পদায়ন নিশ্চিত হয়নি।

সূত্রমতে, বছর দুয়েক আগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক সহকারী অধ্যাপকের কিছু নতুন পদ সৃষ্টি করা হলেও সে আলোকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে শূন্য পদের সংখ্যাটা বেড়ে সংকট আরও তীব্রতর হয়েছে। কলেজে শিক্ষক সংকটের কারণে হাসপাতালটিতেও চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভয়াবহ সংকট চলছে। পুরো হাসপাতালটিতে নানা অব্যবস্থা-অনিয়ম আর চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা সংকটের মধ্যে অতিসম্প্রতি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বদল হয়েছে। নতুন সভাপতি বরিশাল সদর আসনের এমপি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম গত ২৮ জুন রাতে বরিশালের সর্বস্তরের জনগণসহ হাসপাতাল কলেজ প্রশাসন নিয়ে এক বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে আগামী তিন মাসের মধ্যে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা উন্নত করাসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এখানে মেডিক্যাল কলেজ ব্যবস্থাপনায় কোন বেসরকারি কমিটি নেই।

সচেতন বরিশালবাসী মনে করছেন, সদর আসনের এমপি এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে কলেজের শিক্ষক সংকটসহ শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে তার নৈতিক দায় রয়েছে। সেই দায় থেকে জাহিদ ফারুক শামীমের হাত ধরে অতিদ্রুত সকল সমস্যার সমাধান হবে বলেও সচেতন বরিশালবাসী মনে করছেন।

সূত্রমতে, ১৯৬৪ সালের নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আব্দুল মোনয়েম খান বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালের ২০ নভেম্বর দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার একমাত্র মেডিক্যাল কলেজটির উদ্বোধন করা হয়। ১৯৭৮ সালে মেডিক্যাল কলেজটি সংযুক্ত করে হাসপাতালের নিজস্ব ভবন উদ্বোধন করা হয়। ওইসময় অবিভক্ত বাংলার গভর্নর বরিশালের কৃতী সন্তান শের- বাংলার নামে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালটির নামকরণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষক সংকটে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ব্যবস্থা এখন চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে শিক্ষক সংকটের মধ্যেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে মঞ্জুরিকৃত পদের ৮০ ভাগ শিক্ষকও নিয়োগ না দেওয়ার কারণে সংকট ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল বাশার। তিনি বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টি আমরা নিয়মিত অবহিত করছি। শিক্ষক সংকটে এখানে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এমনকি চিকিৎসা শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৬৫ ভাগ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী শের- বাংলা মেডিক্যাল কলেজে নতুন ১০টিসহ ৫০ জন অধ্যাপকের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। নতুন ২৪ জনসহ ৫০ সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে রয়েছেন ৪২ জন। ৪৩টি নতুন পদসহ ১২৩ জন সহকারী অধ্যাপকের মধ্যে আছেন মাত্র ৫৭ জন। ছাড়া চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৮২ জন প্রভাষক, মেডিক্যাল অফিসার, প্যাথলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট্রি ফার্মাসিস্ট পদের বিপরীতে  কর্মরত আছেন ৪৫ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে ১০-২০তম গ্রেডের ২০৫ জন কর্মচারীর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৯২ জন। ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ১২৩ জন সহকারী অধ্যাপক পদের ৬৬টি পদই শূন্য পড়ে আছে। ফলে অনেক বিভাগে কোনো শিক্ষকই নেই। প্রভাষক বা মেডিক্যাল অফিসার দিয়েও পুরো বিভাগের শিক্ষাক্রম চলছে কয়েকটি বিভাগে। কিন্তু প্রভাষক, মেডিক্যাল অফিসার, প্যাথলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ফার্মাসিস্টের ৮২টি পদের ৩৭টি শূন্য পড়ে আছে।

সূত্রমতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডেন্টাল বিভাগে প্রতি বছর প্রায় অর্ধশত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হলেও সেখানে শিক্ষা দেওয়ার মতো তেমন কোনো শিক্ষকই নেই।

ফলে শের- বাংলা মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল বিভাগ থেকে যারা পাস করে বের হচ্ছে তাদের বিষয়েও নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। এমনকি বিভাগের ক্লিনিক্যাল শিক্ষার জন্য সংলগ্ন হাসপাতালটির ইনডোরের অবস্থাও চরম নাজুক।

দেশের ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকের শূন্যপদ নিয়ে শের- বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল বাশার বলেন, করোনাকালে ১৯ মাস ক্লাস বন্ধ ছিল। সময়ে অনেক শিক্ষক অবসরে গেছেন। ফলে ওইসব শূন্যপদে জনবল নিয়োগে যে বিলম্ব ঘটেছে তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগছে। তিনি আরও বলেন, সমস্যা থাকলেও কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম নির্বিঘœ রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

 

×