ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সড়কে ব্যারিকেড দেওয়ায় চার লেনের সড়ক পরিণত হয়েছে এক লেনে, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট
গতিতে চলার স্বপ্নই যেন কাল হয়েছে নগরবাসীর। দুই ঠিকাদার কোম্পানির রশি টানাটানিতে আটকে গেছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। এদিকে, কাজের কারণে সড়কে ব্যারিকেড দেওয়ায় চার লেনের সড়ক পরিণত হয়েছে এক লেনে; সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ মুহূর্তে অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার নেই।
নিচের সড়কে ভোগান্তির বিপরীতে ওপরে নিরবচ্ছিন্ন গতির পথ দেখিয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি শুরু হয়েছে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট দিয়ে; এগিয়েছে এফডিসি পর্যন্ত।
পরের ধাপ কমলাপুর অংশের কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে বাদসাধছে দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্ব। সরেজমিন দেখা যায়, গত প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ প্রকল্পের কাজ। তবে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত রেল লাইনের ওপর দিয়ে কাজ চলায় এ প্রকল্পের কারণে তেমন বেগ পেতে হয়নি জনসাধারণের।
তবে মালিবাগ থেকে কমলাপুর পর্যন্ত জায়গা না থাকায় উড়ালপথ হচ্ছে সড়কের ওপরে। তাই মাঝের দুই লেন বন্ধ করেই চলছিল কাজ। এতদিন চোখের সামনে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ দেখে এ পথে চলাচলের সব ভোগান্তি যেন মুখ বুঁজেই মেনে নিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে হঠাৎ কাজ বন্ধে তাদের মধ্যে ভর করেছে অনিশ্চয়তা। সেইসঙ্গে রাস্তা সঙ্কুচিত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে জনসাধারণকে। বিশেষ করে কমলাপুর থেকে মালিবাগ ১০ মিনিটের এ পথ পাড়ি দিতে কোনো কোনো সময় লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা।
প্রকল্প পরিচলক এ এইচ এম সাখাওয়াত আক্তার বলছেন, ঠিকাদারের দ্বন্দ্ব মেটাতে এখন তাকিয়ে আছেন সিঙ্গাপুরের আদালতের দিকে। যদিও এখনো সেই শুনানির কোনো তারিখই পড়েনি। তা না হলে চেম্বার আদলতের দেওয়া তিন মাস অর্থাৎ ২৭ অগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই তাদের হাতে।
২০১১ সালে দেশের প্রথম এলিভেটেড এসপ্রেসওয়ের কাজ পায় থাইল্যান্ডের কোম্পানি ইতাল থাই। অর্থ জোগাড় করতে না পারায় আট বছরেও শুরু হয়নি কাজ। তাদের শেয়ার ৫১ শতাংশ। পরে ২০১৯ সালে চাইনিজ দুই কোম্পানি শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ও সিনোহাইড্রোকে যুক্ত করে শুরু হয় কাজ। এ দুই কোম্পানির যৌথ মালিকানার শেয়ার ৪৯ শতাংশ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ হলো এক্সপ্রেসওয়ের নির্বাহী প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ ব্যয়ের ৭৩ শতাংশের জোগান দেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আর ২৭ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলা দ্বন্দ্ব গড়ায় আদালত অবধি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। সেইসঙ্গে ঋণ সহায়তা বন্ধ করে দেয় দুটি ব্যাংক। আর এতে করে শঙ্কায় এখন পুরো প্রকল্প।
সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের মামলা এবং আইনগত জটিলতার জন্য কাজের গতি কিছুটা কমে গেছে। তবে উভয় পক্ষকে আমরা অনুরোধ করেছি, তারা যেন কোনোভাবেই কাজটাকে বন্ধ না করে। কারণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি আমরা তাড়াতাড়ি শেষ করতে চাই। ফলে কোনো কোনো জায়গায় তারা কাজ করছে।
চুক্তির শর্তমতে কোনো প্রতিষ্ঠান অর্থ জোগানে ব্যর্থ হলে বাকি প্রতিষ্ঠান তার শেয়ার নিয়ে নিতে পারবে। তাই সেই দিকেই আগ্রহ চীনা প্রতিষ্ঠানের।
অন্যদিকে, অর্থ জোগান না দিয়েই নিজেদের শেয়ার ধরে রাখতে চায় ইতাল থাই।