ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৫ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে সুস্বাদু বৈরালী মাছ

এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ত, এখন খুবই কম

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২ জুলাই ২০২৪

এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ত, এখন খুবই কম

তিস্তা ও ধরলা নদীর বৈরালী মাছ এখন বিলুপ্তির পথে

এ অঞ্চলের নদীতে এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ত বৈরালী মাছ। এখন তা বিলুপ্তির পথে। ২০১৫ সালে মাছটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা আই ইউ সি এম। আশার কথা, স্থানীয় মৎস্য গবেষকদের দীর্ঘদিনের গবেষণার পর পুকুরে সফলভাবে প্রজনন করতে সক্ষম হয়েছে বৈরালী। ধরলা ও তিস্তা নদীতে প্রতিবছর শীত মৌসুমে সামান্য পরিমাণে বৈরালী মাছ পাওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে একদমই তার দেখা মেলে না। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলার ১৬টি নদ-নদীতে বৈরালী, টেংরা, নাড়োয়া বালিয়া, বাইম, কাজলী, রুই, বোয়াল মাছ পাওয়া গেলেও পরিমাণে খুবই কম।
জেলার তিস্তা ও ধরলা নদীতে কয়েকশ’ জেলে প্রতিদিন জাল ফেলেন। তবে, আশানুরূপ বৈরালী মাছ পাওয়া যায় না। যেটুকু পাওয়া যায় তাও কেজিপ্রতি ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়। ধরলা ও তিস্তা নদীতে যতটুকু বৈরালী এখনো অবশিষ্ট আছে সেটিও হুমকির মুখে। নদীতে কারেন্টের শক দিয়ে কিছু অসাধু জেলেরা মাছ ধরছেন। এতে মাছের ডিমসহ পোনা মাছগুলোও মারা যায়। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম বৈরালীসহ নদীর অন্য কোনো মাছের দেখা পাবে না। এ ছাড়া, উজানে একাধিক জায়গায় বাঁধ দেওয়ায় নদ-নদীগুলোতে পানির সরবরাহ কমে গেছে। মাত্রারিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার, কারেন্ট জাল দিয়ে পোনা শিকারসহ অভয় আশ্রম থেকে মা মাছ স্বীকারের ফলে আজ বিলুপ্তির পথে সুস্বাদু বৈরালী মাছ। 
জেলে হায়দার আলী (৩৫) ও মো. আজিজ বলেন, এক সময় ধরলা ও তিস্তা নদীতে প্রচুর বৈরালী পাছ পাওয়া যেত। এখন সারাদিন জাল টেনে এক কেজিও মাছ পাওয়া যায় না। খুব কষ্ট হয় আমাদের। কিন্তু উপায় নেই। বাপ-দাদার পেশা বেছে নিয়েছি ; এখন নতুন করে অন্য পেশায় যেতে পারি না। তাদের মতে, বিভিন্ন জায়গায় চর জেগে ওঠায় ও পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীদূষণ আর ব্যাটারি শকে ছোট পোনা ও ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে বৈরালীসহ নদীর মাছ বাঁচতে পারছে না। এ কারণে নদীতে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা এ অঞ্চলে কারেন্ট জাল ও ব্যাটারি দিয়ে মাছ ধরা বন্ধে সরকারকে জরুরি কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়োর দাবি জানান। 
কুড়িগ্রাম মাছ বাজারের ক্রেতা নাইমুর হোসেন জানান, বৈরালী মাছ প্রতিদিন বাজারে ওঠে না। মাঝে মধ্যে ছোট বৈরালী ওঠে, তা-ও প্রচুর দাম। আগে জেলেরা বড় বড় বৈরালী মাছ নিয়ে বাজাতে আসত। এখন তা অনেক কমে গেছে। ছোট বৈরালী পাওয়া গেলেও তা দামে খুব বেশি। 
পৌর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সমশের আলী জানান, বৈরালী মাছ এ অঞ্চলের খুব সুস্বাদু একটি মাছ। আমরা প্রতিদিন ধরলা ও তিস্তা পার থেকে সাড়ে তিনশ’ থেকে ৪শ’ টাকা কেজি দরে মাছ কিনে আনি। তবু চাহিদা অনুযায়ী মাছ পাওয়া যায় না। 
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোক্তাদির খান জানান, এ অঞ্চলের প্রকৃতিগত মাছ এটি। ধরলা ও তিস্তা নদীতে এক সময় প্রচুর বৈরালী মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদীর নব্য কম, নদী দূষণের কারণে বৈরালী মাছের প্রজনন কমে গেছে। ফলে, নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, এ মাছ নিয়ে গবেষণা চলছে। পুকুরে যেন এটি চাষ করা যায়।

×