ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

শিল্পের স্বজন সুবীর চৌধুরীকে স্মরণে  ব্যাপক আয়োজন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৪৪, ১ জুলাই ২০২৪

শিল্পের স্বজন সুবীর চৌধুরীকে স্মরণে  ব্যাপক আয়োজন

ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে সুবীর চৌধুরীর স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান

চারুশিল্পের ভুবনে নিবেদিতপ্রাণ এক শিল্প  সংগঠকের  নাম সুবীর চৌধুরী। নিজের শিল্পীসত্তাকে আড়াল করে শিল্পের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সংগঠকের ভূমিকায়।  প্রায় চার দশকের কর্মজীবনে তিনি  দেশের চারুকলা চর্চার বিকাশ ও  বিস্তারে নব প্রাণশক্তির উন্মেষ ঘটিয়েছেন। দেশের চিত্রকলা আন্দোলনকে সঞ্জীবিত করেছেন। শিল্পীদের শিল্পচর্চায় সহযোগিতার বহুবিধ উপায়-সন্ধানে নিজেকে ব্যাপৃত  রেখেছিলেন তিনি। তার বহুমুখী কর্মোদ্যোগ ও কর্মতৎপরতা দেশের চিত্রকলার প্রয়াসকে নবীন মাত্রায় উজ্জীবিত করেছেন। রবিবার ছিল এই শিল্পের স্বজন ও বেঙ্গল গ্যালারির পরিচালকের দশম প্রয়াণবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সন্ধ্যায় ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। 
স্মরণানুষ্ঠানে সুবীর চৌধুরীকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেন  প্রখ্যাত শিল্পী হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, কনক চাঁপা চাকমা এবং নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন  বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ও সহ-সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক  সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
সুবীর  চৌধুরী স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পর তাঁর জীবনপঞ্জী পাঠ করেন সঞ্চালক ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।  প্রদর্শিত হয় সুবীর চৌধুরীর জীবনের ওপর নির্মিত ভিডিওচিত্র।  তাকে নিয়ে  সৈয়দ শামসুল হকের কণ্ঠে পাঠ করা কবিতা প্লে-ব্যাক করে  শোনানো হয়। স্মরণের এ আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন শুক্লা পাল। তিনি গেয়ে শোনানÑ ‘আমার সকল দুঃখের প্রদীপ’ এবং ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর’ শীর্ষক সংগীত।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মনজরুল ইসলাম বলেন, নিজের  ভেতরে শিল্পীসত্তাকে দূরে সরিয়ে শিল্প সংগঠকের ভূমিকায়  অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তাই শিল্পের সংগঠক হিসেবে তিনি ছিলেন তুলনাহীন। তার কাজের নেপথ্যে ছিল ভিন্ন এক উদ্যোম। সব সময় প্রান্তিক মানুষকে শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছেন।  দেশের শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে কাজ করেছেন।  
হাশেম খান বলেন, শিল্পকলা জগতে তিনি ছিলেন অপরিহার্য এক মানুষ। চারুকলায় দীক্ষা নিয়ে নিজে ছবি না এঁকে আমৃত্যু চারুকলার বিকাশে কাজ করেছেন। এখন আমরা তার প্রশংসা করি। কিন্তু সে  কর্মজীবনে তাকে অনেক নিগৃহীত হতে হয়েছে।   
রামেন্দু মজুমদার বলেন, শিল্পী হিসেবে অনেককে উদ্দীপ্ত করেছেন সুবীর চৌধুরী। প্রতিভাবান নবীন শিল্পী প্রদর্শনী করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। 
কনক চাঁপা চাকমা বলেন, বাংলাদেশের শিল্পকলাকে বিদেশের মাটিতে প্রস্ফুটিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। শিল্পকলাকে বিদেশের মাটিতে প্রচার করেছেন। তিনি চাইতেন দেশের শিল্পীরা সব সময় বিদেশে সম্মানিত হোক। অস্ট্রেলিয়াসহ তিনি বিভিন্ন দেশে শিল্পীদের প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। 
স্মরণানুষ্ঠানে সুবীর চৌধুরী স্মরণগ্রন্থ জুলাই মাসে প্রকাশের কথা উল্লেখ করেন লুভা নাহিদ  চৌধুরী। তিনি বলেন, বইটিতে আছে ১৯টি নতুন লেখা, ৯টি বক্তৃতার অনুলিখন, সুবীর  চৌধুরীকে নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক ও কাইয়ুম চৌধুরীর দুটি কবিতা, কিছু উক্তি, সুবীর  চৌধুরী ছবি ও কিছু চিঠি, তাঁর জীবনপঞ্জী এবং কালি ও কলমে প্রকাশিত  লেখা এবং প্রথম আলোয় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে সুবীর চৌধুরীর নিজের লখার পুনর্মুদ্রণ। জামালপুরে কাটানো তার  ছেলেবেলা, ছাত্রজীবন, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, পরিবার, কর্মজীবনÑসবকিছুই ধরার  চেষ্টা করা হয়েছে গ্রন্থটিতে। বইটির মধ্য দিয়ে সুবীর চৌধুরীর জীবন ও কমের্র প্রসারিত বলয়কে মেলে ধরা হবে।
 

×