ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

ঐতিহ্যের ফেরিওয়ালা

হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের তৈরি তৈজসপত্র ॥ ধুঁকছেন পেশাজীবীরা

মো. খলিলুর রহমান 

প্রকাশিত: ০১:০৭, ১ জুলাই ২০২৪

হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের তৈরি তৈজসপত্র ॥ ধুঁকছেন পেশাজীবীরা

বাঁশের তৈরি সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন মুজিবুর রহমান

বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র- গ্রাম বাংলার এক সময়কার ঐতিহ্য। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এসব হস্তশিল্প। নিভু নিভু প্রদীপের মতো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকে থাকাও কঠিন হয়ে উঠেছে এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কিছু মানুষের। তার পরও বাপ-দাদার সেই পেশা এখনো ধরে রেখেছেন তারা। হাজার বছরের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে তারা তৈরি করছেন ঝুড়ি, ডালা, পলো, কুলা, ডুলা, চালুনি, ওড়া, চাঙ্গারি, খলুই ও হাতপাখাসহ নানান ধরনের জিনিসপত্র।
উদ্ভাবিত প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড়ে অনেকেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের পেশা পাল্টে ঝুঁকে পড়ছেন অন্য পেশায়। তবে, এখনো গ্রামীণ এসব ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র হাটে-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। প্রায় প্রতিটি হাট-বাজারে বাঁশের তৈরি এসব জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের বিক্রি কমে গেলেও এখনো পেশাদার বিক্রেতারা গ্রামাঞ্চল থেকে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র কিনে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে তৃপ্তি অনুভব করেন। তাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের সনমান্দি এলাকার বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমান একজন। ছোট বয়স থেকে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। সম্প্রতি বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দ হাটে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের নানা আদ্যোপান্ত জানান। 
সত্তরোর্ধ্ব মজিবুর রহমানের পিতা আক্কাস আলী। বাঁশের তৈরি এসব জিনিসপত্র বিক্রি করা ছিল তার বাপ-দাদার পেশা। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন আক্কাস আলী। তবু বংশ পরম্পরার এই পেশাটি এখনো আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। 
বাঁশের তৈরি পলো, কুলা, ডুলা, চালুনি, ওড়া ও চাঙ্গারিসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র বিক্রি করে আসছেন। তার মতে, বাঁশের তৈরি এসব জিনিসপত্র গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য। 
তিনি বলেন, লাঙ্গলবন্দ, সোনাকান্দা, আনন্দাবাজার ও কাইকারটেক হাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে ঐতিহ্যবাহী এসব জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, এখনো বাঁশের তৈরি মাছ ধরার পলো একশ’ থেকে দুইশ’ টাকা, কুলা একশ’ টাকা থেকে দেড়শ’ টাকা, ডুলা ত্রিশ টাকা থেকে ষাট টাকা, চালনি আশি টাকা থেকে একশ’ টাকা, ওড়া আশি টাকা ও চাঙ্গারি একশ’ টাকা থেকে দুইশ’ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসব জিনিসপত্র সংগ্রহ করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। 
লাঙ্গলবন্দ এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণ ভৌমিক বলেন, এক সময় সাংসারিক কাজকর্মে গ্রাম-বাংলার তৈরি ঐতিহ্যবাহী এসব জিনিসপত্রের চাহিদা ছিল প্রচুর। তখন লাঙ্গলবন্দ হাটে অসংখ্য বিক্রেতা এসব জিনিসপত্র নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসতেন। তিনি বলেন, গ্রাম-বাংলার ঐত্যিবাহী এসব জিনিসপত্র আধুনিক যুগের প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের কাছে হার মানছে। কারণ প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্রের দাম কিছুটা সস্তা হওয়ায় দিন দিন এগুলোর কদর কমছে। দিন দিন এগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। 
মজিবুর রহমান বলেন, এক সময়ে হাট-বাজারে এসব জিনিসপত্র নিয়ে গেলে অবিক্রীত থাকত না। এখন হাট শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এসব জিনিসপত্র আগের মতো আর বিক্রি হয় না। তাই আবারও বিক্রি না হওয়া জিনিসপত্র নিয়ে ফিরে যেতে হয়। তবু আমি বাপ-দাদার পেশাটি এখনো পর্যন্ত ধরে রেখেছি। আজীবন এই পেশা ধরে রাখতেই চাই।
 

×