ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০১ জুলাই ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

​​​​​​​এক বছরেও বগুড়া ফতেহ আলী ব্রিজের  পুনর্নির্মাণ শেষ হয়নি ॥ দুর্ভোগ-ভোগান্তিতে ক্ষুব্ধ শহরের পূর্বাংশের লোকজন

বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন লাখো মানুষের পারাপার

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ২৮ জুন ২০২৪

বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন লাখো  মানুষের পারাপার

ফতেহ আলী সেতুর পুনর্নির্মাণ শেষ না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোতে পার হচ্ছেন মানুষ

শহরের ফতেহ আলী ব্রিজ নিয়ে ভোগান্তি কমেনি শহরের পূর্বাংশের মানুষের। পুনর্নির্মাণ শুরুর আগে জীর্ণ ব্রিজের কারণে চলাচলে ছিল ঝুঁকি শঙ্কা আর ভোগান্তি। আর পুনর্নির্মাণ কাজ শুরুর এক বছর পার হলেও একই দুর্ভোগ ঝুঁকি রয়ে গেছে। এপার থেকে ওপারের এলাকায় যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম বাঁশের সাঁকো। শহরের পূর্বাংশের মানুষদের নিকট এটি এখন ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠছে। ধীর গতির নির্মাণে কাজ শেষে নির্ধারিত সময় পার হলেও দুর্ভোগ কমছে না। বর্ষা আসতে শুরু করায় করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধিতে বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো দিয়ে চলাচল আরও ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়েছে। এই সাঁকো দিয়ে শুধু শহর এলাকার মানুষরাই চলাচল করছে না। জেলার পূর্ব এলাকার গাবতলী সারিয়াকান্দি সোনাতলা এলাকার লোকজনের মূল শহরের আসার এটি অন্যতম মাধ্যম। চলাচলের ঝুঁকি কমাতে শহরের করতোয়া নদীর ওপর ফতেহ আলী পুরাতন ব্রিজটি এক বছর আগে ভেঙে নতুন ব্রিজ নির্মাণ শুরু হলেও দীর্ঘ সময়ে এর অর্ধেক কাজও হয়নি।

ব্রিজ নির্মাণ বিলম্বিত হওয়ায় তাই লোকজনের ঝুঁকি দুর্ভোগ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। মন্থর গতিতে কাজের কারনে ব্রিজ নির্মাণ কবে শেষ হবে তা নিয়ে এলাকাবাসী আরো দুর্ভোগের ভাবনায় চিন্তিত ক্ষুব্ধ।

শহরের অন্যতম বৃহৎবাজার ফতেহ আলী বাজারের পাশের্^ ১৯৬২ সালে করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত হয়েছিল ফতেহ আলী ব্রিজ। ৬৫ মিটারের ব্রিজটি জেলার পূর্বাংশের সঙ্গে শহরের মূল অংশে পারাপারের অন্যতম পথ। পূর্বাংশে পৌর এলাকার ২টি ওয়ার্ড রয়েছে। রয়েছে ৩টি উপজেলা।

শুধু চলাচল নয়, পূর্বাংশের তিন উপজেলার কৃষিপণ্য শহরে আসার নেয়ার অন্যতম মাধ্যম এই ব্রিজ। একারণে ব্রিজটির বাণিজ্যিক গুরুত্বও অনেক। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বহু ব্যবহার স্থায়িত্বের মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ায় ফতেহ আলী ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কারণে ২০১৮ সাল থেকে ব্রিজ ভেঙে ফেলা পর্যন্ত এর ওপর দিয়ে দিয়ে সব ধরনের ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। রিক্সা ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচলও বন্ধ থাকে।  বগুড়াবাসীর প্রত্যাশায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্রিজটির স্থানে বগুড়া সড়ক জনপথ বিভাগ করতোয়া নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। এই প্রকল্প অনুমোদনের পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নির্ধারণ এবং গত বছরের জুন নতুন ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ এ্যপ্রোচ রোড নির্মাণ বাবদ ব্যয় রয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। এক মাসের মধ্যেই পুরাতন ব্রিজটি অপসারণ করে লোকচলাচলে বিকল্প হিসাবে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। এর পাশের পানির ওপর ড্রাম দিয়ে আরেকটি চলাচলচল ব্যবস্থা করা হলেও এটি নিচু পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয় থেকেই শুরু থেকেই প্রায় আকার্যকর। ফলে প্রতিদিন লক্ষ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে বাঁশের সাঁকো। সরু বাঁশের সাঁকো হওয়ায় একপাশ দিয়ে লোকজন যাওয়া শেষ হলে অন্য পাশ থেকে লোকজ সাঁকোতে ওঠেন। আবার একই সঙ্গে যাতায়াত করতে গিয়ে সাঁকোর ফতেহ আলী বাজার প্রান্তে সরু হওয়ায় লোকজনকে ব্যাপক বিড়ম্বনা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে নারী শিশু বয়বৃদ্ধরা এই সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে নানামুখী দুর্ভোগ ভোগান্তি ঝুঁকিতে থাকেন বেশি।

ব্রিজ নির্মাণে ধীর গতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্রিজের পুর্ব পাশে নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পরিমল কুমার দাস জানান, এই ব্রিজ পৌরসভার ২টি ওয়ার্ডের লক্ষাধিক মানুষের জন্য শহরের মূল অংশে প্রবেশের অন্যতম পথ। ধীর গতিতে ব্রিজের নির্মাণ কাজের জন্য শুধু যাতায়াতের ভোগান্তি নয়, চেলোপাড়া, নাটাইপাড়া,সাবগ্রামসহ আশপাশের কয়েক এলাকায় ব্যবসায় স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। ঘুরপথে যাতায়াতের জন্য শিক্ষার্থীসহ অনেকের জীবনযাত্রার ব্যয় বড়েছে। তাদের এলাকায় কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া বর্তমান পরিস্থিতিতে অসম্ভব।

তিনি জানান কাজের ধীর গতির বিষয়ে প্রশাসন এবং সড়ক জনপথ বিভাগকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জানান হয়েছে। তার অভিযোগ ঠিকাদার গুটি কয়েক শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এতে ব্রিজের কাজ কবে শেষ হবে তা নিয়ে আর ভোগান্তি বেড়ে যাওয়া নিয়ে এলাকার লোকজন চিন্তিত। তিনি জানান, ব্যস্ততম গুরুত্বপুর্ণ ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও এতে বিকল্প বেইলি ব্রিজ রাখা হয়নি। বিকল্প বেইলি ব্রিজ থাকলে লোকজনের ভোগান্তি কমত। করতোয়া নদীর পানি বাড়ছে। এতে বর্তমান বাঁশের সাঁকো আরও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ব্রিজ নির্মাণ শুরুর এক বছর হলেও মাত্র ২০ ভাগ কাজও হয়নি বলে তার দাবি। এদিকে শুধু শহরের পূর্বাংশ নয়, জেলার পূর্বাংশের ৩টি উপজেলার লোকজনের অন্য ব্রিজটি সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিজ থাকলে পূর্ব বগুড়ার লোকজন সরাসরি শহরের প্রবেশ করতে পারতেন। এখন তাদের বিভিন্ন ঘুরপথে শহরে আসতে হচ্ছে। এর কারণে শহরের চেলোপাড়াসহ অন্যান্য ফিডার রোডগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দুর্ভোগ নিয়ে চাকরিজীবী শহিদুল জানালেন, তাকে প্রতিদিন যাতায়াত করতে অতিরিক্ত খরচ বহন করার সঙ্গে সময়েরও অপচয় হয়। বাড়ি থেকে ব্র্রিজের চেলোপাড়া প্রান্তে নেমে ঝুঁকি দুর্ভোগ নিয়ে গাদাগাদি মানুষের ভিড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে সাতমাথায় পৌঁছাতে প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটতে হয়। শিক্ষার্থী কেয়া আরেক চাকরিজীবী একই ধরনের দুর্ভোগের কথা বললেন। এদিকে  ধীর গতির কাজের বিষয়ে বগুড়ার সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান জানান, অ্যাপ্রোচ রোডের  জন্য  ব্রিজের ফতেহ আলী বাজার অংশে ভূমি অধিগ্রহণে কিছু জটিলতা ছিল। এখন সেটি নেই।

মোট ৭০টি পাইলের মাধ্যে এখন বাকি রয়েছে ১৫টি। তারা আশা করছেন ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। নির্ধারিত সময় পার হওয়ায় নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত মাসের সময় আবেদন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। পুনর্নির্মিতব্য ব্রিজটি হবে ৬৯ মিটার এর ব্যয় ধরা হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রায় ৩৯ কোটি টাকা।

×