ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আলিয়ঁসে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২৬ জুন ২০২৪

আলিয়ঁসে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি’

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে ‘যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি’ শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন এক দর্শনার্থী

প্রদর্শনালয়ের দেওয়ালজুড়ে ঝুলছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারীদের মুখচ্ছবি। নারী মুক্তিযোদ্ধাদের আলোকচিত্রের সঙ্গে রয়েছে তাদের ভাষ্য। সেই বয়ানে উঠে এসেছে তাদের আত্মত্যাগের কথাসহ জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা। গবেষণাধর্মী প্রদর্শনীটিতে আলোকচিত্রের সঙ্গে রয়েছে চলচ্চিত্র এবং আর্কাইভের বিভিন্ন উপাদান। তরুণ আলোকচিত্রী মাশরুক আহমেদের গবেষণানির্ভর এই প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি’। ফরাসি সাংস্কৃতিক আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীটির কিউরেট করেছেন এএসএম রেজাউর রহমান। 
প্রদর্শনীতে নীল ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবিতে মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর দেখা মেলে। এই মুখচ্ছবির পাশেই রয়েছে তার ব্যবহৃত টেলিফোন ও অন্যান্য ব্যবহার্য বস্তুর ছবি। এ সবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রিয়ভাষিণীর ভাষ্য- ‘মাত্র সতেরো বছর বয়স তখন। যখন জুট মিলে চাকরিতে যোগদান করেছিলাম। মানুষ কীভাবে বুঝবে! চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েছে। জীবনে ভুলের বিষণ্ণ কালো ছায়া।’

আরেক মুক্তিযোদ্ধা আসিয়ার ছবির পাশে লেখা, ‘যুদ্ধের সময় কয়েক মাস পাবনা হাসপাতালে নিজ হাতে অনেক নির্যাতিত মেয়েদের বাচ্চা ডেলিভারির কাজ করেছি। কারও কারও চার, ছয় মাসের বাচ্চাও ডেলিভারি করেছি। শত শত জীবিত ও মৃত বাচ্চা।’  বহুমাত্রিক এই প্রদর্শনীতে ঠাঁই  পেয়েছে বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের ময়মুনা খাতুন, সিরাজগঞ্জের রাহেলা বেগম, সুনামগঞ্জের কাঁকন বিবির মতো ৩০ জন নারী মুক্তিযোদ্ধার আলোকচিত্র, যুদ্ধকালীন তাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানের ছবি ও সাক্ষাৎকার। সাত বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে এসব নারী বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা তুলে এনেছেন আলোকচিত্রী মাশরুক আহমেদ।
কোটালীপাড়ার ছালেহা বেগমকে একাত্তরের মে মাসের মাঝামাঝিতে হানাদার বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় তার ওপর। একপর্যায়ে তাকে মেরে ফেলতে খুলনার গল্লামারী সেতুতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে বাঁচেন তিনি। বাড়িতে ফেরার পর পরিবার ও এলাকাবাসী তাকে গ্রহণ করেনি। উল্টো নানা রকম তিরস্কার জোটে। ছালেহা তখন বীর বিক্রম হেমায়েত বাহিনীর অধীনে সশস্ত্র সংগ্রামে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর আর বাড়ি ফেরেননি।

ঢাকায় বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যান। বর্তমানে এক কন্যা সন্তান নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি। ছালেহার এই পুরো ঘটনাটি একটি চিঠির মাধ্যমে প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে তার একটি পৃথক প্রতিকৃতি ও একটি পারিবারিক ছবি। 
প্রদর্শনীটির কিউরেটর এএসএম রেজাউর রহমান বলেন, যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি  প্রদর্শনীটি মাশরুক আহমেদের একটি চলমান গবেষণানির্ভর প্রকল্প। স্থির আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র এবং আর্কাইভের বিভিন্ন উপাদান সহযোগে শিল্পী এই প্রদর্শনীতে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব বয়ান তুলে ধরতে ব্রতী হয়েছেন। এভাবেই এই প্রদর্শনীটি হয়ে উঠতে চেয়েছে তাদের কথা, তাদের অভিজ্ঞতার এক অভয়ারণ্য। স্বাধীনতাযুদ্ধের যে বয়ান আমরা দেখি, তা অনেক বেশি পুরুষতান্ত্রিক। সেখানে নারীদের কণ্ঠস্বর খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই কাজটি গুরুত্বপূর্ণ।
আলোকচিত্রী মাশরুক আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে  অদ্যাবধি  সেই সমস্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা যারা পুরুষ সহযোদ্ধাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন, তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকুও পাননি। তাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। 
দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (ডিবিএফ) ২১ জুন সূচনা হওয়া এ প্রদর্শনীর শেষ দিন বুধবার।

×