ধীরগতিতে চলছে কালুরঘাট সেতু মেরামতের কাজ
অর্থ সংকটের দোহাই দিয়ে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ। তিন মাসের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করার কথা থাকলেও নয় মাসেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে ফেরিতে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। আতঙ্কে যাতায়াত করছেন এ এলাকার লাখো মানুষ।
বোয়ালখালীতে গাছের ব্যবসা রহিম উল্লাহর। উপজেলায়ও রয়েছে তার তিনটি দোকান। ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। মেয়ে নারগিস সুলতানা পড়েন নগরের হাজী মহসিন কলেজে। প্রায় সময় বান্ধবীদের সঙ্গে কলেজে গেলেও পরিবারের ভয়- ফেরি নিয়ে। তাই বাবা রহিম উল্লাহ ব্যবসার সব ব্যস্ততা বাদ দিয়ে ফেরি পার করে দেন মেয়েকে। এ দুশ্চিন্তা শুধু রহিম উল্লাহর পরিবারের নয়, ফেরিতে স্কুল ও কলেজগামী প্রতিটি পরিবারের। দুশ্চিন্তা হবেই না কেন! সম্প্রতি ফেরিঘাটে ঘটেছে কলেজছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা।
২৯ এপ্রিল সকাল দশটা। ফেরিঘাটের বোয়ালখালী অংশে বেইলি ব্রিজে টেম্পোর ধাক্কায় ফাতেমা তুজ জোহরা নূপুর নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী ব্রিজের সঙ্গে আটকে যায়। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বোয়ালখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর পরই পুরো এলাকাজুড়ে শিক্ষার্থীদের ফেরি পারাপার নিয়ে তৈরি হয় ভয়।
শিক্ষার্থী নূপুরের মৃত্যুর দিন সকালে ফেরি পার হতে গিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পান এক মোটরসাইকেল আরোহী। তবে পানিতে তলিয়ে গেছে তার যাতায়াতের একমাত্র বাহনটি। গত ৮ মে সকাল ৭টায় কালুরঘাটের পশ্চিম প্রান্তে (শহরের অংশ) ফেরিঘাটের বেইলি ব্রিজে টেম্পোর ধাক্কায় মো. গফুর (৫৫) নামে এক বৃদ্ধের পা ভাঙে। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শুধু কলেজ শিক্ষার্থী কিংবা মোটরসাইকেল আরোহীই নয়, ফেরি পারাপার করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনা রোধে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি কেউ-ই। এর মধ্যে কালুরঘাট সেতুর মেরামত কাজ কয়েক দফা পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, এ অঞ্চলের মানুষ সব সময় অবহেলিত। আমাদের কোনো অভিভাবক নেই। এত বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে কেউ কোনো প্রতিবাদ করছে না। এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। কালুরঘাট সেতু সংস্কার করার কথা তিন মাসে। এখন হয়ে গেছে নয় মাস।
২০২৩ সালের আগস্টে কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শুরু হয়। এর আগে ১৮ জুন বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতুটি মেরামতের জন্য রেলওয়ের সঙ্গে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রথম দফায় গত বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সেতুর সংস্কারকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সংস্কারকাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত বেশ কয়েক দফায় সেতুটির সংস্কারকাজ শেষে মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ সেতুটি সংস্কার করে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে যানবাহন চলাচল উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে ৪৩ কোটি টাকায় সংস্কারের চুক্তি হয় রেলওয়ের। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানেই সেতুটির সংস্কারকাজ করছে ম্যাক্স। প্রথমবারের মতো এবার সেতুর উভয় পাশে মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপারের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানান, সেতুর উভয় পাশে প্রথমবারের মতো নির্মিত ওয়াকওয়ে কিছুদিনের মধ্যেই খুলে দেওয়া হবে। কোরবানির ঈদে উভয় পাড়ের মানুষ ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে সেতু দিয়ে গাড়ি চলবে জুলাই থেকে।