
৫৫ কোটি টাকা ব্যায়ে সংস্কারসহ উন্নয়ন করা হলেও মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কে এখনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের এক সময়ের অবহেলিত মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কটি এখন উন্নত সড়কে পরিণত হয়েছে। এ সড়কটি আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। পুরাতন এ সড়কটিতে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বদলে গেছে আদি রূপ। বেড়েছে সড়কের প্রশস্ততাও। কিন্তু মান বাড়েনি যানবাহনের। এ সড়কটিতে এখন দাবিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিক্সা (ইজিবাইক), ব্যাটারিচালিত রিক্সা, মিশুক ও সিএনজিসহ নানা ধরনের ছোট ছোট যান। এ সড়কটি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯-২৭ নম্বর ওয়ার্ড (৯টি ওয়ার্ড) এলাকা দিয়েই অতিক্রম করেছে। এ সড়কটি উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে জীবন যাত্রার মানও। কিন্তু সড়কে উন্নত ছোঁয়া লাগলেও গণপরিবহনের আদি রূপই এখনো রয়ে গেছে। এ সড়কটি বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়ায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সড়কের কারণে বদলে গেছে আশপাশের পরিবেশও। এ সড়কটি দিয়ে চলাচলের একমাত্র বাহন অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, মিশুক ও সিএনজিসহ নানা ধরনের ছোট ছোট যান। এতে অহরহ ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। এলাকাবাসী এ সড়কে বিআরটিসিসহ যাত্রীবাহী বাস চলাচলের জোর দাবি জানান।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বন্দরের মদনপুর থেকে শুরু হয়েছে মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়ক। বারো কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটিতে এক সময়ে খানাখন্দে ভরপুর ছিল। তখন মদনপুর-মদনগঞ্জ ও ঢাকা-মদনগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস চলাচল করত। সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে এ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দখল করে নেয় অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, সিএনজি ও মিশুকসহ ছোট ছোট যান। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে এ সকল যান দিয়েই চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বন্দরের মদনগঞ্জ ও সদর থানার সৈয়দপুর এলাকায় ৩৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বীর মুক্তিযোদ্ধা একে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের পর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। এ সেতুকে ঘিরেই মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কটি স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সড়কটির নয়ামাটি, ভাংতি ব্রিজ, লক্ষণখোলা, নবীগঞ্জ ও আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরির সামনে পুরাতন ৪টি কালভার্ড ও কল্যাণদি এলাকায় ১টি সেতু ভেঙে নতুন করে চারলেন আয়তনে সম্প্রসারণ করে পুনর্নির্র্মাণ করা হয়। সড়কটি প্রশস্ততাও বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যয় করা হয় ৫৫ কোটি টাকা। এখন সড়কটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। সওজ সূত্রে জানা যায়, সড়কটি আগে ছিল ৫ দশমিক ৫ মিটার। প্রশস্ততা বাড়িয়ে এখন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ মিটার।
খবর নিয়ে জানা যায়, সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানোর পর এখন এ সড়কের কোথাও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে না। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ডগুলোতে সড়কের আরও প্রশস্ততা বাড়ানো হয়েছে। সব মিলেই এ সড়কটি এখন উন্নত সড়কে পরিণত হয়েছে। এ সড়কটি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯-২৭ নম্বর ওয়ার্ড (৯টি ওয়ার্ড) এলাকার লোকজন ও বন্দর উপজেলার মদনপুর, ধামগড়, মুছাপুর, বন্দর ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নবাসীও চলাচল করছেন। বর্তমানে এ সড়কটিতে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিক্সা ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা, মিশুক ও সিএনজিসহ নানা ধরনের ছোট ছোট যান। এ সকল যানই এখন এ সড়কের একমাত্র গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে ১৯-২৭ নম্বর ওয়ার্ড (৯টি ওয়ার্ড) এলাকার লোকজন ও বন্দর উপজেলার মদনপুর, ধামগড়, মুছাপুর, বন্দর ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নবাসীকে অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, মিশুক ও সিএনজিসহ নানা ধরনের ছোট ছোট যানে করেই বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
লক্ষণখোলার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কটি এখন বেশ উন্নত হয়েছে। সড়কটি প্রশস্ততাও বেড়েছে। এতে এ সড়কের মানও বেড়ে গেছে। কিন্তু গণপরিবহনের মান বেড়েনি। আমরা এখন অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, মিশুক ও সিএনজিসহ নানা ধরনের ছোট ছোট যানের ওপর নির্ভর করেই চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছি। অথচ মদনপুর থেকে মদনগঞ্জ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তা অটোরিক্সা দিয়ে চলাচল করা খুবই দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে মদনপুর-মদনগঞ্জ ও মদনগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে বিআরটিসিসহ যাত্রীবাহী বাস চলাচলের দাবি জানাচ্ছি।
নবীগঞ্জ এলাকার কলেজ ছাত্র ইমাম হোসেন একই কথা জানান। তিনি বলেন, সংস্কারের দীর্ঘদিন হলেও এখনো কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হয়নি। আবারও এ সড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ সড়কের অটোরিক্সা চালক নূর মোহাম্মদ বলেন, এ সড়কে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না। অটোরিক্সাই এখন একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আমাদের অটোরিক্সায় চড়েই গন্তব্যে যাচ্ছে। এ সড়কে প্রায় এক হাজার অটোরিক্সা চলাচল করছে। মদনপুর থেকে মদনগঞ্জ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৪০ টাকা করে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, সড়কটি যানবাহন চলাচলে বেশ উপযোগী করা হয়েছে। বাস চলাচলের বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন বিআরটিএ। আমরা এ বিষয়ে জড়িত নই। এ সড়কে যদি যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হয় তবে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর টোল আদায় আরও বাড়বে বলে আশা করছি।