ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

আকালের কালে অপরূপ দেবকাঞ্চন

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ২২ নভেম্বর ২০২৩

আকালের কালে অপরূপ দেবকাঞ্চন

শুষ্ক প্রকৃতিতে অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে ফুটেছে দেবকাঞ্চন

সামনে শীতের কাল। গোলাপ গাঁদা চন্দ্রমল্লিকাসহ নতুন অনেক ফুল ফুটবে। তবে তার আগের সময়টা মানে, এখন কিন্তু বেশ রুক্ষ শুষ্ক প্রকৃতি। গাছ থেকে অনবরত পাতা ঝরছে। ফুলও কম। তবে এমন আকালের কালেও দিব্যি ফুটে আছে দেবকাঞ্চন! হ্যাঁ, এই ফুল হেমন্তের শক্ত প্রতিনিধি। আসছি সে প্রসঙ্গে। তার আগে বলি, কাঞ্চন বললে, কয়েকটি জাতপাতের কথা চলে আসে। গাছ মোটামুটি এক। কা- ডালপালা ও পাতার বিন্যাস, বলা চলে, অভিন্ন।

পার্থক্য যা, ফুলে। একেক গাছে একেক রঙের ফুল হয়। পাপড়ির রঙ অনুযায়ী বদলে যায় ফুলের নাম। রক্তকাঞ্চনের কথা হয়তো অনেকেই জানেন। এটিই সবচেয়ে আকর্ষণীয়। কেউ প্রথমবার দেখলে, নিশ্চিত করে বলতে পারি, চোখ সরাতে পারবেন না। রক্তের মতো লাল বলেই রক্তকাঞ্চন নাম। একইভাবে যে ফুলটি সাদা, সেটির নাম সাদাকাঞ্চন। রঙের দিক থেকে সাদাটির সঙ্গে দেবকাঞ্চনের স্পষ্ট পার্থক্য আছে। তবে রক্তকাঞ্চনের রঙের সঙ্গে দেবকাঞ্চনের রঙের পার্থক্য সামান্য। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে, দেবকাঞ্চনের পাপড়ির রং সাদা, মৃদু রক্তিম কিংবা ম্লান বেগুনি। আকারে রক্তকাঞ্চনের চেয়ে এটি লম্বা ও উগ্রগন্ধী। 
দেবকাঞ্চনের বৈজ্ঞানিক নাম ইধঁযরহরধ ঢ়ঁৎঢ়ঁৎবধ। ইংরেজি নাম চঁৎঢ়ষব ইধঁযরহরধ। আর আদি আবাস ভারতের শুষ্ক অঞ্চলের অরণ্যভূমি। হিমালয়ের পাদদেশ। এটি আসামের প্রজাতি। গাছ সাধারণত ৮ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতাভর্তি গাছের ওপরের দিকটা এলেমেলোভাবে ছড়ানো থাকে। ফুলই মূল আকর্ষণ। দেবকাঞ্চনের ফুল ছয় থেকে আট সেন্টিমিটার চওড়া হয়। পাপড়ি পাঁচটি। একটির সঙ্গে অন্যটি বিযুক্ত, অসমান ও লম্বাটে। ফল অনেকটা শিমের মতো। ভেতরে ১২ থেকে ১৬টি বীজ থাকে। শীতের শেষে বীজ ফেটে নিচে পড়ে। তাতেই হতে পারে নতুন গাছ।  
দেবকাঞ্চনকে আরও ভালোভাবে চিনতে বা জানতে ঢু মারতে পারেন রমনা পার্কে। রাজধানীর প্রাচীন উদ্যানে সবকটা জাত ফোটে। আপাতত পাবেন দেবকাঞ্চনকে। মিরপুর এলাকার ফুলপ্রেমীরা চলে যেতে পারেন বোটানিক্যাল গার্ডেনে।  সেখানেও দেখা যায় দেবকাঞ্চন। ঢাকার বাইরে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে আপনিই হয়। এখন ফুল ফোটার মৌসুমে সহজেই চোখে পড়বে। খেয়াল রাখুন। শীতের পুরোটা সময় উপভোগ করতে পারবেন দেবকাঞ্চনের সৌন্দর্য।

×