
.
শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটে খেলাধুলার মধ্যে। মেলবন্ধনের আবেশে ভরে ওঠে একটি শিশুর অন্তর। গ্রামীণ পরিবেশের শিশু আর শহুরে শিশুর বেড়ে ওঠার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। ফুটবল, বউচি, মোরগ লড়াই, লাটিম, মার্বেল প্রভৃতি খেলা দিয়ে গ্রামের শিশুর শৈশব শুরু হয়। তবে শহুরে জীবন একটু ব্যতিক্রম। শহুরে শিশুরা বড় হয় মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার ইত্যাদির সঙ্গ পেয়ে। এখানে মাঠের অভাব, খেলার সাথীর অভাব, বন্দী জীবন অনেকটা। তবে যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখা যায় না।
কারণ এটাই প্রকৃতির নিয়ম। সেই গ্রামীণ প্রাণের শৈশব শুরু গাছে ওঠা, পেয়ারা পেড়ে খাওয়া, বাদাম গাছের ডালে বসে বাদাম খাওয়ার চেয়ে নিচে থাকা সাথীদের লোভ দেখানোর মতো মজা আর কিছু ছিল না। পিকনিক করতে হলে সবার বাড়ি থেকে একটু একটু উপকরণ এনে সবাই একসঙ্গে ইটের বা মাটির চুলায় রান্না করা। অনেক সময় ধান ক্ষেতে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে চাষার বকুনি খাওয়া -এসবও দারুণ অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করে ছেলেবেলায়। বৃষ্টিতে ফুটবল খেলা, কাদা মাখামাখি করে নেচে ওঠা মন আজ বুড়িয়ে যাচ্ছে সময়ের ব্যবধানে।
একসঙ্গে পুকুরে গোসল করে কার চেয়ে কে বেশিক্ষণ ডুব দিয়ে থাকতে পারে সেই প্রতিযোগিতাও হতো খুব। এখন পুকুর সব ভরাট। কেউ ডুব প্রতিযোগিতাও করে না। স্থাপনার নামে কঙ্কাল হয়ে যাচ্ছে সৌম্য প্রকৃতি। সন্ধ্যে নামার আগে আগে বাড়ি ফিরে আসার সময় আগামীকাল কি খেলা হবে সেই পরিকল্পনা করাও ছিল দৈনন্দিন রুটিন। স্কুলে বন্ধুর মার খাওয়া দেখে অঝোরে কেঁদে ফেলা যেত। হারিয়ে গেছে সেসব অতীত অনুভূতি, যা বর্তমান সময়ে খুব দরকার হয়। মাস্টার মশাইয়ের বেত লুকিয়ে রাখার মধ্যেও মজা খুঁজতাম ছোটবেলায়। অথচ উনি রাগে গজগজ করতেন তখন। যাকে পাবে তাকে খাবে অবস্থা! উঁচু দালানে পানির ট্যাংকে পা ঝুলিয়ে বসে থাকার মধ্যেও আনন্দ ছিল খুব। সাইকেল চালিয়ে দাঁপিয়ে বেড়ানো দিনগুলো প্রতিনিয়ত ধরা দেয় মানসপটে।
স্কুল ছুটি হলে ভরদুপুরে তপ্ত রোদে আইসক্রিম খেয়ে খেয়ে বাসায় ফিরে আসাটাও আজ পথ হারিয়ে ফেলে। হঠাৎ হঠাৎ গ্রামে-গঞ্জে এই চিত্রগুলো দেখা যায়। তখন ব্যাকুল হয়ে ওঠে মন আরেকবার ফিরে যেতে পাগলামির শৈশবে। ধরা দিতে ইচ্ছে করে পুরনো ধান ক্ষেতের চাষার কাছে। দাঁপিয়ে বেড়াতে ইচ্ছে করে সাইকেলে আর ইচ্ছে করে ঝাঁú দিতে মাঝ পুকুরে। মন কাঁদে ফিরে যেতে টইটুম্বুর জলভরা সাগরের পাড়ে। আরেকবার ইচ্ছে করে ছেলেবেলার বন্ধুর বন্ধু হতে। স্মৃতি হয়ে থাকুক এসব, ফিরে পাক জীবনের জয়গান।