ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

শিক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি

শিক্ষা খাতে বাজেট কম, স্বীকার করলেন পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০০:১৬, ২৪ এপ্রিল ২০২২

শিক্ষা খাতে বাজেট কম, স্বীকার করলেন পরিকল্পনামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটা জাতির মেরুদ- বলা হয় শিক্ষাকে। কিন্তু এই শিক্ষা খাতেই প্রয়োজনের চাইতে বাজেট অত্যন্ত কম। ফলে শিক্ষা খাতে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন এখনও অনেক দূরে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর বিষয়টা স্বীকার করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও। তিনি বলেছেন, আমি স্বীকার করছি শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অনেক কম। তাই এই খাতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। বরাদ্দ বাড়াতে হবে এ কথা আমরা সবাই বলছি। কিন্তু টাকাটা কোথা থেকে আসবে সেটা কেউই বলছে না। এটার জন্য আমাদের রাজস্ব আহরণে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। শনিবার শিক্ষা বাজেট নিয়ে ইউনিসেফের সহযোগিতায় গণস্বাক্ষরতা অভিযান (ক্যাম্পেন ফর পপুলার এডুকেশন-ক্যাম্প), এডুকেশন ওয়াচ এবং সেন্ট্রার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র আয়োজনে ‘শিক্ষার বাজেট : বাজেটের শিক্ষা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন : কোথায় আছি আমরা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পরিকল্পনা মন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষার বাজেট নিয়ে আমি স্বীকার করি এক বাক্যে শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়াতে হবে। যদিও আমাদের শিক্ষার হার কম। আমাদের সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা উচিত শিক্ষা খাতে। আমি একজন পরিসংখ্যান সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করি। সারা দেশের তথ্য সংগ্রহ করি। তারপর সেসব তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা করতে চেষ্টা করি। আমাদের দেশের বড় সমস্যা হচ্ছে বাস্তবায়ন। আমরা অনেক কিছুই ভাবি কিন্তু বাস্তবায়ন হয় কম। তবে শিক্ষা নিয়ে আমি বলব শিক্ষায় বাজেট অবশ্যই বাড়ানো উচিত। আমি এটা নিয়ে বারবার কথা বলি সংসদে। সামনে আরও বেশি করে বলব যেন শিক্ষায় বাজেট বাড়ানো হয়। সবাই বলে আমাদের গবেষণা ভাল, নীতি ভাল। কিন্তু মূল সমস্যা বাস্তবায়ন। এখানে আমরা তেমনভাবে জোর দিতে পারছি না এখনও। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো ড. মুনতাসির কামাল। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, শিক্ষা সব জায়গায় একটা প্রায়োরিটি সেক্টর হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে বাজেটের খরচের দিকে তাকালে দেখা যায় তা সাংঘর্ষিক। বাজেট যদি বাড়ানো না হয় তাহলে শিক্ষায় উন্নয়ন হবে কিভাবে। আমরা গত বছরগুলো থেকে যদি দেখি তাহলে দিনদিন শিক্ষায় বাজেট বাড়ার চেয়ে কমছে। এ সময় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও এডুকেশন ওয়াচের সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, অনেক বছর ধরে শিক্ষা আইনের খসড়া ঝুলে আছে। এই আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা খাতে যেসব সমস্যা আছে তা সমাধান করা যাবে না। যখন জাতীয় শিক্ষানীতি করা হয়, তখন শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির আড়াই শতাংশ। বলা হয়েছিল, এই বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশ উন্নীত করা হবে। বর্তমানে সেটা উল্টো কমে দাঁড়িয়েছে দেড় শতাংশে। পৃথিবীর অনেক দেশ, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ ও ব্যয় আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। ভারতে বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ সে দেশের জিডিপির পৌনে ৪ শতাংশ, নেপালে সাড়ে ৪ শতাংশ, পাকিস্তানে আড়াই শতাংশ, ব্রাজিলে ৬ শতাংশ ও আফ্রিকার দেশ ঘানায় ৪ শতাংশ। আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণীদের কাছ থেকে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। মূল সমস্যা হচ্ছে বাস্তবায়ন। সরকারী কর্মকর্তারা কাজগুলো কেন জানি ঠিকমতো করতে চায় না, তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, শিক্ষা নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। শিক্ষানীতিতে অনেক কিছুই আছে যা বাস্তবায়ন হয়নি এখনও এবং শিক্ষা আইন ছাড়া করা সম্ভবও নয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। সরকার বলেছে শিক্ষা আইন করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আড়াই বছর চলে গেলেও সেই আইন আর হয়নি। কবে নাগাদ হবে তা জানতে ইচ্ছে করছে। শিক্ষা আইন ছাড়া শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য এ্যারোমা দত্ত বলেন, করোনার কারণে যেসব শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে তাদের পুনরায় শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। সেমিনারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষাবঞ্চিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সেগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান। এর প্রেক্ষিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়নি। অনেক মেয়েরই এ সময়ে বিয়ে হয়ে গেছে।
×