অনলাইন ডেস্ক ॥ সারের ভর্তুকি নিয়ে সরকার উভয় সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, একদিকে এত ভর্তুকি দিলে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে, অন্যদিকে সারের দাম বাড়ালে কৃষকের কষ্ট বৃদ্ধি পাবে, উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং খাদ্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
সোমবার সচিবালয়ে সারের মজুত, দাম, ভর্তুকিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, কোভিড পরিস্থিতির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩ গুণ। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজ ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সারের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, সারের জন্য ভর্তুকি দিতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকি লেগেছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বাজেট ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আরও প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন।
সরকার সারের দাম বাড়াবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে আমরা যেকোনো ভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা উদারভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ইনটেনশন দাম বাড়ানো না, কমিয়ে আনা। কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে চিন্তা করতে হচ্ছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আলোচনা চলছে।
সারে ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে কোনো চাপ আছে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এরাই চাপ দেয়। আগে বিএনপি সরকার ভর্তুকি দিতো না, ওদের কথা শুনতো। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- কৃষককে সারে আমরা যে সহযোগিতা দেয়, এটা প্রণোদনা। এটা কোনো ক্রমেই ভর্তুকি না। তার ফলেই আজকে আমরা খাদ্যে অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ।
কৃষিমন্ত্রী জানান, সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়াতে ৮২ টাকা, টিএসপিতে ৫০ টাকা, এমওপিতে ৪১ টাকা এবং ডিএপিতে ৭৯ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। এতে ৯৬ টাকা কেজির ইউরিয়া কৃষক পাচ্ছে ১৬ টাকায়। ৭০ টাকার টিএসপি ২২ টাকা, ৫৪ টাকার এমওপি ১৫ টাকা এবং ৯৩ টাকার ডিএপি ১৬ টাকা কেজিতে পাচ্ছে কৃষকরা।
এসময় মন্ত্রী বলেন, গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের কোনো সংকট হয়নি। ফলে কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট দানাদার শস্যের উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন।
এর মধ্যে চাল ৩ কোটি ৭৬ লাখ টন, গম ১২ লাখ ৩৪ হাজার টন এবং ভুট্টা ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার টন উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ টন। ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে চালের উৎপাদন বেড়েছে ৪২ শতাংশ। এছাড়া গমের ৪৮ শতাংশ, ভুট্টার ৯৮৫ শতাংশ এবং আলুর ১৩৮ শতাংশ উৎপাদন বেড়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।