ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ব্যবসায় আত্মবিশ্বাস জরিপ

করোনার ধাক্কা সামলেছে ৬০ ভাগ প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

করোনার ধাক্কা সামলেছে ৬০ ভাগ প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের প্রায় ৬০ ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গত এক বছরে করোনা সংক্রমণের ধাক্কা সামলে উঠেছে। একইসঙ্গে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে চলমান তৃতীয় ঢেউয়ে ব্যবসা পুনরুদ্ধার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে ৩৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজ পায়নি। উল্টো দুর্নীতিসহ নানা কারণে বেড়েছে ব্যবসার খরচ। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) ব্যবসায় আত্মবিশ্বাস জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। করোনা মহামারীর সময়ে বাংলাদেশের শিল্প ও সেবা খাতের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে তিন মাস অন্তর জরিপ পরিচালনা করছে সানেম। এই পর্যায়ের জরিপে, সার্বিক ব্যবসা পরিস্থিতির ওপর জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং ওমিক্রন ঢেউয়ের প্রভাবও তুলে ধরা হয়েছে। সোমবার এক অনলাইন প্ল্যাটফরমে জরিপের ফল তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। দেশের ৮টি বিভাগের ৩৮টি জেলার মোট ৫০২টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। উৎপাদন খাতের তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ প্রস্তুতকারক, হালকা প্রকৌশল এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপের আওতাভুক্ত ছিল। আর সেবা খাতের পাইকারী ও খুচরা ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশন, আর্থিক খাত এবং রিয়েল এস্টেট খাতও জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। চলতি বছর জানুয়ারির ৩-২৪ তারিখের মধ্যে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টেলিফোন আলাপের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। তাতে দেখা গেছে, করোনা শুরুর পর ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়াতে না পারলেও ২০২১ সালের একই সময়ে প্রায় ৬০ শতাংশই জানিয়েছে যে তারা ব্যবসা সচল করেছে। যদিও এই যাত্রায় সব খাত সমভাবে এগুতে পারেনি। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং করোনার নতুন ধাক্কা সত্ত্বেও গড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ পুনরুদ্ধার হয়েছে। মূল প্রবন্ধে সেলিম রায়হান বলেন, জরিপ চালানো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭১ শতাংশ জানিয়েছে যে ওমিক্রন সংক্রমণের প্রভাবে তাদের রফতানি বা বিক্রি কমেছে। অন্যদিকে ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ায় ব্যয় বেড়েছে। ৮২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে ওমিক্রনের জন্য সার্বিকভাবে পুঁজি ও শ্রমের খরচ বেড়েছে। ওমিক্রণের কারণে রফতানি কমার ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ৮৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। জরিপে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবও উঠে এসেছে। ৯৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে যানবাহনের খরচ বেড়েছে। আর ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে তাদের উৎপাদন শক্তির খরচ বেড়েছে। আগের পর্যায়ের জরিপের মতোই এ পর্যায়ের জরিপেও দেখা গেছে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, বন্ধক, দীর্ঘসূত্রতা, ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হয়।
×