ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আকাশছোঁয়া দাম স্যানিটারি প্যাডের প্যাড ব্যবহার না করলে ঝুঁকি বহুগুণ

নারী প্রজনন স্বাস্থ্য হুমকির মুখে

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

নারী প্রজনন স্বাস্থ্য হুমকির মুখে

স্বপ্না চক্রবর্তী ॥ রাজধানীর মগবাজার নয়াটোলার মধুবাগ বস্তির বাসিন্দা আফরোজা বেগম। এক ছেলে এক মেয়ের মা তিনি। নীলফামারী থেকে জীবিকার তাগিদে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ১০ বছর আগে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে স্বামী আব্দুর রহমান কোন কাজ না পেয়ে রিক্সা চালাতে শুরু করেন। আর বাসা-বাড়িতে ছুটা বুয়ার কাজ নেন আফরোজা। এক মেয়েকে গ্রামে মায়ের কাছে রেখে এলেও ছেলেকে নিয়ে আসেন সঙ্গে করেই। সুখেই চলছিল জীবন। হঠাৎ বিপত্তি ঘটল কাজে গিয়ে। তলপেটের তীব্র ব্যথায় কাতর অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে সবাই মিলে নিয়ে যায় ওয়্যারলেস রেলগেটের কমিউনিটি ক্লিনিকে। ডাক্তার কয়েকটি টেস্ট দিলে ধরা পড়ে জরায়ুতে ইনফেকশন হয়েছে। আর এই জন্যই তীব্র ব্যথা। আপাততঃ ওষুধে কাজ হলেও ভবিষ্যতে জরায়ু কেটেও ফেলে দিতে হতে পারে। প্রায় একই সমস্যায় ভুগছেন এই বস্তির অন্তত : ২০ নারী। এদের কারও জরায়ুতে ইনফেকশন, কারও মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা আবার সন্তান সম্ভবনা হলেও গর্ভপাত হয়ে যাচ্ছে কোন কারণ ছাড়াই। আফরোজা বেগমের কাছে মাসিকের সময় কি ব্যবহার করেন চাইলে একগাল হেসে বলেন, কি আর ব্যবহার করমু! কাপড়ই। আপনারা বস্তির অন্যরা কি ব্যবহার করে জিজ্ঞেস করলে একই উত্তর। ‘সবাই তো কাপড়ই ব্যবহার করে।’ কাপড় ব্যবহার অস্বাস্থ্যকর তারচেয়ে প্যাড ব্যবহার করা ভাল তা জানেন কি না এমন প্রশ্নে একটু হেয়ালির সুরে বলেন, পাই না খাইতে আর প্যাড! তার পাল্টা প্রশ্ন, একটা প্যাডের প্যাকেটের দাম কত আপনি জানেন? ১০০ টেকার নিচে লয়! প্যাড কি আমাগো মতো গরিবের লাগি? প্রায় একই অবস্থা রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তির নারীদেরও। সরেজমিনে এই বস্তিতে গিয়ে জানা যায়, বস্তির বয়স্ক মহিলারা তো দূরে থাক উঠতি তরুণীরাও মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন না বা করার সামর্থ্য নেই। বস্তির বাসিন্দা সুজাতা বলেন, আমার ৪টা মাইয়া। কম বয়সে বিয়া হইছিল। ১৪ বছরে বিয়া আর ১৫ বছরের মাথায় প্রথম মাইয়ার জন্ম। একে একে বাকি তিনটারও জন্ম হয়। হেরা সবই এখন বড় হইছে। আমার নিজেরও মাসিক হয়। এক মাসে ৫ প্যাকেট প্যাড কিনমু কি দিয়া? হেই সামর্থ্য থাকলে কি আর বস্তিতে থাকতাম? থাকতাম তো ফ্ল্যাট বাড়িতে। স্যানিটারি প্যাডের এ উর্ধমূল্য নাভিশ্বাস শুধু বস্তিবাসীদের মধ্যে নয়। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব এলাকার নি¤œ-মধ্যবিত্ত, থেকে মধ্যবিত্তদেরও। এক পরিবারে একাধিক নারী সদস্য থাকলে সেই চিত্র আরও ভয়াবহ। প্রজনন স্বাস্থ্যে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করার অন্যতম প্রধান উপাদান হলেও উচ্চমূল্যে অনেক অভিভাবককেই তাদের মেয়ে সন্তানদের জন্য এটি কিনতে বেগ পেতে হয়। আর বয়স্ক নারী তো এসবের ধারই ধারেন না। কোনমতে কাপড় ব্যবহার করেই কাটিয়ে দেন মাসিককালের ৭ দিন। ব্যবহৃত কাপড়ও কড়া রোদে শুকাতে দেন না অনেকে সামাজিক চক্ষুলজ্জার ভয়ে। ফলে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা। দেশের বাজারে বহুল ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাডগুলোর মধ্যে রয়েছে সেনোরা, ফ্রিডম সুপার ড্রাই ন্যাপকিন, হুইসপার, জয়া। এর মধ্যে উঠতি তরুণীদের সবেচেয়ে বেশি পছন্দ আমেরিকান ব্র্যান্ড হুইসপারের প্যাডটি। যার ১৫ পিসের এক প্যাকেটের মূল্য ৩১০ টাকা। আর ২৭ পিসের এক প্যাকেট কিনতে খরচ হয় ৭২৫ টাকা। এরপরেই রয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান স্কয়ারের তৈরি সেনোরা। যার ১০ পিসের এক প্যাকেটের দাম ১০০ টাকা আর ১৫ পিসের দাম ১৩০ টাকা। এছাড়া ফ্রিডমের ১৫ পিসের এক প্যাকেট কিনতে হয় ৩১০ টাকা দিয়ে। তবে কিছুটা কম মূল্যে পাওয়া যায় দেশীয় সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি) তৈরি জয়া স্যানিটারি প্যাডটি। এর ৮ পিসের এক প্যাকেটের দাম পড়ে ৬০ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়শীল দেশের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তখন ভবিষ্যত দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেনস্টুয়েশন বা ঋতু¯্রাব নারীর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া। তাই প্রজননতন্ত্র সুস্থ্ রাখতে দরকার খুব বেশি সচেতনতা ও যতেœর। ঋতু¯্রাবের সময়ে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় পরিচ্ছন্ন থাকার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার খুব জরুরী। কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ এ পণ্যটি কমমূল্যে উৎপাদনে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তো দূরে থাক সরকারেরও কোন উদ্যোগ নেই। ভর্তুকির বদলে বরং বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ভ্যাট আরোপের চেষ্টা করা হয়েছে এটি উৎপাদনে ব্যবহৃত আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর। ২০১৯-২০ সালের বাজেটে স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদনে ব্যবহৃত আমদানিকৃত অপরিশোধিত উপাদানের ওপরে ৪০ শতাংশ ভ্যাট ধরা হয়। এরপর অনেক ক্যাম্পেনিং ও প্রতিবাদের ফলে ৩০ জুন এনবিআর একটি এসআরওর মাধ্যমে ওই আমদানিকৃত অপরিশোধিত উপাদানের ওপর ভ্যাট অপসারণ করা হয়, যা ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর। কিন্তু এখানেও কিছু শর্ত দেয়া হয়। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে দেশে উৎপাদিত ন্যাপকিনের সমুদয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি দেয়া হয়। পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এ খাতে ভর্তুকি দেয়ার কোন পরিকল্পনার কথা কেউ কখনও জানাননি। জানা যায়, ১৯৯৮ সালে স্যামসন এইচ চৌধুরীর হাত ধরে স্কয়ার প্রথম বাংলাদেশী কোম্পানি হিসেবে সেনোরা স্যানিটারি ন্যাপকিন বাজারে আনে। যখন বাংলাদেশে কোন কোম্পানি স্যানিটারি ন্যাপকিনের কাজ শুরু করেনি তখন এই কোম্পানিটি প্যাড তৈরির কাজ শুরু করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বলছে বর্তমানে ১৪০ এসআরের যে সুবিধাগুলো পাওয়া যেতো তা এখন ২৪০ এসআরের মাধ্যমে পেতে হয়। তাই এই মুহূর্তে দাম কমানো অসম্ভব। একই অবস্থা অন্যান্য কোম্পানিগুলোরও। সামর্থ্যরে তুলনায় উচ্চমূল্যে কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়ে এর দাম কমানোর সুযোগ থাকছে না জানিয়ে কোম্পানিগুলো বলছে, বিদ্যুত, জ্বালানি, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো বিভিন্ন খাতে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি থাকলেও এমন জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে ভর্তুকি তো দূরের কথা বরং এর কাঁচামাল আমদানিতেও প্রতিবছরই ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে করে দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উর্ধমূল্যের স্যানিটারি ন্যাপকিনই কিনতে হচ্ছে নারীদের। যারা স্যানিটারি প্যাড কিনতে না পেরে কাপড় বা ন্যাকরা ব্যবহার করছেন মাসিকের সময় তাদের ক্যান্সারসহ নানাধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে জানিয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মোঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার জনকণ্ঠকে বলেন, নারীদের পিরিয়ড চলাকালে জরায়ুতে খুব দ্রুত জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। সচেতনতা হিসেবে আমরা বলে থাকি প্যাড ব্যবহারের আগে তাই হাত সাবান দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে নিতে হবে, যাতে হাতের মাধ্যমে জীবাণু কোনভাবেই প্যাডে না লাগে। এক্ষেত্রে যারা প্যাডই ব্যবহার করেন না তারা তো বহুগুণ ঝুঁকির মধ্যে থাকছেন। আমরা মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণার কাজে দেখেছি গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ নারীই এখনও স্যানিটারি ন্যাপকিনের বদলে কাপড় ব্যবহার করছেন। সেই কাপড়ও আবার চক্ষুলজ্জার ভয়ে কড়া রোদে শুকাতে দিচ্ছেন না। ফলে জীবাণুর সংক্রমণের শঙ্কা কতগুণ থেকে যাচ্ছে তা চিন্তা করাই যায় না। এতে করে ক্যান্সারসহ নানা ধরনের যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ লুৎফা বেগম লিপি জনকণ্ঠকে বলেন, নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাসিকের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের সমাজব্যবস্থায় আমরা যেমনটা দেখি মেয়েদের মাসিকের সময় একটা লুকোচুরি বজায় রাখা হয়। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল বা নি¤œ আয়ের মানুষদের একটা বড় অংশই এ সময়টা কাপড় ব্যবহার করেন। কিন্তু এই কাপড়গুলো কড়া রোদে না শুকিয়ে ময়লা বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় শুকাতে দেন। এতে করে প্রজনন অঙ্গের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। এতে করে নারীদের নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। এর মধ্যে তলপেটে তীব্র ব্যথা, সাদা¯্রাব, মাসিকের সময় অধিক রক্তপাত, বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে সহবাসে ব্যথা এমনকি স্থায়ীভাবে বন্ধ্যত্বও হতে পারে। আবার অনেক সময় ইনফেকশন বেশি হলে ক্যান্সার ঝুঁকিও থাকে। এক্ষত্রে স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার জরুরী। রক্ত খুব বেশি গেলে তিন থেকে চার ঘণ্টার বেশি সময় একই প্যাড ব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর যদি কম রক্তপাত হয়, তবে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। আবার অনেকেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘন ঘন পরিবর্তন করেন। সেটাও সঠিক উপায় নয়। তবে প্যাডের পরিবর্তে কেউ যদি পিরিয়ডের সময় কাপড় ব্যবহার করে তাহলে তা হতে হবে নরম ও আরামদায়ক। কাপড় পরিষ্কারের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো কাপড় জীবাণুমুক্ত করতে জীবাণুনাশক একেবারেই ব্যবহার না করা। এতে প্রজননতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কাপড় পরিষ্কারের সঠিক উপায় হলো গরম পানি ও সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধোয়া। কাপড় ধোয়ার পর খুব কড়া রোদে ভালভাবে শুকিয়ে নেয়া। অনেকেরই এ বিষয়ে ভুল ধারণা থাকায় তারা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা, যেমন বাথরুম বা ঢাকা জায়গায় কাপড় শুকায়। এতে কাপড়ে জীবাণু থেকে যায় এবং তা জরায়ুতে সংক্রমণ ঘটায়। এ ছাড়া একই কাপড় দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়ে বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, প্যাড ব্যবহারে ক্ষেত্রে আমরা যেমনটা দেখি অনেকেই প্যাডের ব্যবহার কমাতে বা লম্বা সময় ব্যবহারের জন্য এর ওপরে টিস্যু ব্যবহার করেন। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যসম্মত উপায় নয়। কারণ টিস্যুতে থাকা উপাদানগুলো সংক্রমণ ঘটাতে বা অন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিরিয়ডের তিন দিন পর সাধারণত রক্তপাত কমে যায়। কিন্তু কম হলেও ছয় ঘণ্টার বেশি প্যাড ব্যবহার করা যাবে না। তিনি বলেন, অনেকেই বেশি রক্তপাত হলে একই সঙ্গে দুটি প্যাড ব্যবহার করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে খুব বেশি উপকার পাওয়া যাবে না। এর জন্য ব্যবহার করতে পারেন বেশি শোষণ ক্ষমতার প্যাড। এ ছাড়া কোন সুগন্ধিযুক্ত প্যাড জরায়ুর স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়, তাই স্বাস্থ্যসম্মত ও আরামদায়ক প্যাডই ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কিন্তু যারা উচ্চমূল্যের কারণে প্যাডই কিনতে পারেন না তারা কি করবে এ প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, আমরা তো চাই স্যানিটারি প্যাডের মূল্য কমুক। কারণ আমরা যারা একটা মাঝারি ধরনের জীবনযাপন করি তারা হয়তো নিয়মিতভাবেই মাসিকের সময় প্যাড ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু যারা নি¤œআয়ের বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের নি¤œ জীবনযাপনে অভ্যস্ত তাদের জন্য প্রতি মাসে এই খরচটা বাড়তি বোঝা। এক্ষেত্রে এ খাতে ভর্তুকিসহ কমমূল্যে সরবরাহ করা উচিত বলেই আমি মনে করি। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারী কাপড় ব্যবহার করে পিরিয়ডের দিনগুলোতে। আমাদের সামাজিক-পারিবারিক বাস্তবতায় নারীদের মাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। যদিও এখন অতীতের তুলনায় নারীদের অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে বদলেছে সত্য, কিন্তু পিরিয়ডের দিনগুলোতে নিজেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা থেমে যায়নি। এটা বেশ কয়েকটি কারণে হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ওইদিনগুলোতে তারা কী ধরনের প্যাড ব্যবহার করে, প্যাডগুলো তার হাতের নাগালে কতটা সহজে পাওয়া যায়, এসব বিষয় নারীর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। শহরের নারীরা বাজারে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হওয়া প্যাড ব্যবহার করে, কিন্তু গ্রামে বা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া নারীরা প্যাড ব্যবহারের সুযোগ পায় না। তারা তখন কাপড় ব্যবহার করে। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে স্যানিটারি ন্যাপকিন কোন বিলাসী পণ্য নয়। এটি প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নারীর জন্য একটি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। ২০১৪-এর ন্যাশনাল হাইজেন বেজলাইন সার্ভেতে আমরা দেখতে পাই, মাত্র ১৪ শতাংশ মহিলা সানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে। ৮৬ শতাংশ মহিলা যারা ঐতিহ্যগত ন্যাপকিন ব্যবহার করে। সেটা হতে পারে কটন অথবা পুরনো কাপড়। স্কুলে যাওয়া ৪০ শতাংশ ছাত্রী ক্লাসে গড়ে তিন দিন করে অনুপস্থিত থাকে পিরিয়ডের কারণে। বিভিন্ন রিপোর্ট ও ডাটা রিভিও করে দেখেছি, বাংলাদেশে প্রায় ছোট-বড় ১২টি কোম্পানি স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে। যাদের ৮০ শতাংশ পণ্য কনজিউম হয়। সুতরাং এই পণ্যটির প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রয়োজনকে আমরা যদি ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। যেহেতু ৮৬ শতাংশ নারী ঐতিহ্যগত ন্যাপকিন ব্যবহার করছে সেহেতু তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি এড়াতে এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের গভীরভাবে ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি। তবে এ ব্যাপারে সরকারের কোনক্ষেত্রেই নেই পর্যাপ্ত তৎপরতা। নেই পরিবার-পরিকল্পনা অধিদফতরের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে মাসিকের সময় প্যাডের ব্যবহার নিয়ে একটি শব্দও। বরং পরিবার-পরিকল্পনা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে এমসিএইচ সার্ভিসেস বিভাগে কিশোর-কিশোরীদের সেবায় স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে ‘মাসিকের সময় পরিষ্কার কাপড় না পরা’ প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিভাগের এমন জায়গায়ও স্থান পায়নি নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ এ পণ্যটি। তাহলে কিভাবে এর দাম কমানো হবে এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের!
×