ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ, ৪০ কিমি যানজট

কাফনের কাপড় পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

কাফনের কাপড় পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা ॥ লাকসাম পৌর এলাকার প্রাচীন ‘দোগাইয়া আশরাফিয়া ইসলামিয়া সুন্নীয়া সিনিয়র মাদ্রাসা’ নামে একটি মাদ্রাসার লাগোয়া শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, কুমিল্লা জেলা শাখার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার কয়েক হাজার লোক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পদুয়ারবাজার বিশ^রোড এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় বিক্ষুব্ধরা কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অবরোধের ফলে সকাল ১০টা থেকে দেড় ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দুদিকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ওই সম্পত্তিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের নামে খেলার মাঠ দখলের অভিযোগ এনে আন্দোলনকারীরা লাকসামের সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম ও লাকসামের ইউএনও একেএম সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয় এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের অপসারণ দাবি করে। এর আগে সকাল ৯টা থেকে মহাসড়কের দু’পাশে হাজারো বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যানার-ফ্যাস্টুন নিয়ে মানববন্ধন করে। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, কুমিল্লার আহ্বায়ক মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দীন বখশীর সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তরিকত ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ মুহাম্মদ আলী ফারুকী, সংগঠনের নেতা শাহ মুহাম্মদ আলী হোসাইন, জাহিদ বাহার শিপলু, এ্যাডভোকেট ফেরদৌস আহমদ আসিফ, ড. খাজা বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী, কুমিল্লার জেলা সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তরিকত ফেডারেশন কুমিল্লার সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ লিখিত বক্তব্য ও সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, জামায়াত ও হেফাজতের নীলনক্সা বাস্তবায়নে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সন্ত্রাসী বাহিনী ও লাকসামের ইউএনও একেএম সাইফুল আলমের মাধ্যমে দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তাদেরকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণসহ ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার পরিবেশ বজায় রাখতে ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুরী শাহ দরবার শরীফের ‘দোগাইয়া আশরাফিয়া ইসলামিয়া সুন্নীয়া সিনিয়র মাদ্রাসা’ ও মাদ্রাসার খেলার মাঠ থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও স্থাপনা বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তারা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প করার জন্য অনেক খাস জায়গা রয়েছে, কিন্তু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মাদ্রাসা লাগোয়া শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠে তড়িঘড়ি করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে মাদ্রাসাটি ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তা বন্ধ করা না হলে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ জনগণকে সাথে নিয়ে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে এবং যে কোন পরিস্থিতির দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। পরে তারা একই দাবিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি দাখিল করেন। এ বিষয়ে লাকসামের ইউএনও একেএম সাইফুল আলম জানান, তাদের দাবিকৃত ওই মাদ্রাসাসংলগ্ন ১১ শতক জমি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ এর অধীনে ওই সম্পত্তিতে ৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। এ অবস্থায় ওই সম্পত্তি বন্দোবস্ত নেয়ার জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছিল, কিন্তু তা না পেয়ে তারা আন্দোলনে নামে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায়নি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সরকারের ওই খাস জমিতে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজ করছে। এক্ষেত্রে মাদ্রাসার সম্পত্তি দখলের অভিযোগ সঠিক নয়।
×