বর্তমানে ক্ষমতাসীন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের হাত ধরেই দেশের যা কিছু অর্জন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তা সে আইন থেকে উন্নয়ন যাই হোক না কেন। এরই অনিবার্য অংশ হিসেবে সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে এদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রায় অনুরূপ প্রস্তাব করে রাষ্ট্রপতির কাছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে ইসি গঠনে একটি আইন প্রণয়ন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত, ইসির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোসহ ৪ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়। অবশ্য আপাতত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। আসন্ন নির্বাচন কমিশন এই আইনের মাধ্যমে হবে কি না, তা জানতে চাওয়া হলে আইনমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। সরকার চলতি সংসদ অধিবেশনে আইনটি পাস করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কিছুদিন ধরেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কেননা, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। দেশে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের উল্লেখ আছে। তবে দুঃখজনক হলো, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও কোন সরকারই এ সংক্রান্ত কোন আইন প্রণয়ন করেনি। আইন প্রণীত না হওয়ায় ২০১২ ও ২০১৭ সালে দুই দফায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করেন নির্বাচন কমিশন। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এবারও সংসদে নতুন আইন না হওয়া পর্যন্ত নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হতে পারে এই পদ্ধতিতে। এরই অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ২০ ডিসেম্বর থেকে সংলাপ তথা মতবিনিময় করেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগসহ ২৫টি দল অংশগ্রহণ করে সংলাপে। ব্এিনপিসহ ৭টি দল সংলাপে অংশগ্রহণ করেনি। আমন্ত্রিত প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে সার্চ কমিটি ও পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা করেন রাষ্ট্রপতি। গত দু’বার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে সার্চ কমিটি। এর সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব। সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ৫টি করে নাম চাওয়া হয়। এরপর তারা ১০জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করে সুপারিশ পাঠায় রাষ্ট্রপতির কাছে। এই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্য চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেন। যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মোটকথা, একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনই রাষ্ট্রপতি আহূত সংলাপ এবং এর মাধ্যমে গঠিত সার্চ কমিটির অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ পাস হলে তা হবে দেশ ও জাতির জন্য আরও একটি মাইলফলক অর্জন।