সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচন ২৮ জানুয়ারি। এবার মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান এবং ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ প্যানেল দুটির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। দুই প্যানেলেই রয়েছে একঝাঁক তারকা প্রার্থী।
আসন্ন নির্বাচনেও গত দুইবারের মতো যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান। তারা গত দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে তারা সেই দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ছেড়ে দিয়েছেন এবং এফডিসিতে আয়োজিক সাধারণ সভায় বিদায়ী কমিটি তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং নানা কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন।
মিশা-জায়েদ কমিটির নানা কাজের ভিড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে করোনাকালীন শিল্পীদের নানাভাবে সহায়তা দেয়ার বিষয়টি। অনেকেই এটিকে ভিন্ন চোখে দেখছেন এবং ওই সমস্ত সহায়তামূলক কর্মকা-ের প্রচারের বিষয়টি নিয়ে করছেন নানা প্রশ্ন, যা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এবার সে সব সমালোচনার জবাব দিলেন আশির দশকের দর্শকপ্রিয় নায়িকা রোজিনা। যিনি এবারের নির্বাচনে মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে লড়ছেন। তার মতে, ‘কেউ যদি ভালো কাজ করে তার প্রচার অবশ্যই করতে হবে। কারণ, তা দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে। যারা সমালোচনা করছেন, প্রচার না করলে আবার তারাই বলতেন, আমরা সব খেয়ে ফেলেছি, আত্মসাৎ করেছি। প্রচার করলেও দোষ আবার না করলেও দোষ। নায়িকা বলেন, পুরো বিশ্ব ভালো কাজের প্রচার করে আসছে। যারা প্রচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা হিংসা থেকে এগুলো বলেছেন। করোনার দুঃসময় যারা সহযোগিতা পেয়েছেন, আমার মনে হয় না তারা মিশা-জায়েদকে ছেড়ে যাবে। করোনা মহামারীতে স্বামী স্ত্রীকে ফেলে গেছে, সন্তান মাকে ফেলে গেছে। কিন্তু মিশা-জায়েদ কাউকে ফেলে যায়নি। অভিনেত্রী আরও বলেন, করোনায় আমাদের অনেক শিল্পী মারা গেছেন। নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে তাদের পাশে কিন্তু মিশা-জায়েদই ছুটে গেছেন। করোনা রোগীকে কাঁধে উঠিয়েছিলেন তারাই। অন্য কেউকে যেতে দেখিনি। এন্ড্রু কিশোর শিল্পী সমিতির সদস্য না। কিন্তু জায়েদ রাজশাহী ছুটে গিয়েছিল শিল্পীর প্রতি ভালোবাসা থেকে। করোনা মহামারীর সময় যখন নিম্ন আয়ের শিল্পীরা কাজহীন, তখন শিল্পী সমিতি একাধিকবার তাদের সহায়তা করেছে।
মিশা-জায়েদ প্যানেলের দুই মেয়াদের কাজের প্রশংসা করে রোজিনা বলেন, চার বছর মিশা-জায়েদ নির্বাচিত হয়ে যে সব কাজ করেছে তা প্রশংসনীয়। তবে ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। মানুষই ভুল করে। ছোট ছোট ভুল করলেও অধিকাংশ কাজই ভালো করেছেন তারা। জায়েদ চলচ্চিত্রকে ভালোবাসে। তার কোনো পিছুটান নেই, যার কারণে করোনার সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিল্পীদের জন্য রাতদিন কাজ করেছে। শিল্পের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এসব সম্ভব নয়। রোজিনা আরও বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে শুনেছি বিপরীত প্যানেলের কেউ কেউ বলেছেন, বিজয়ী হলে তারা সিনেমা বানাবেন। বিগত দিনে আমরা অনেক শিল্পীই সিনেমা প্রযোজনা করেছি। আমরা তো পদে এসে সিনেমা নির্মাণ করিনি। আমার যদি শিল্পের প্রতি ভালোবাসা থাকে তাহলে শিল্পী সমিতিতে এসে সিনেমা নির্মাণ করব কেন? নিজে প্রযোজনা করে কাজ করতে পারি না? আবার বলেছেন, জয়ী হলে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে সিনেমা করবে। শিল্পের প্রতি ভালোবাসা থাকলে পদে না এসেও এসব কাজ করা যায়। চেয়ারে বসে করবে এসব কথার মানে নেই। আমি যদি চলচ্চিত্রকে ভালোবাসি, সহযোগিতা করতে চাই তাহলে পদে না থেকেও করা যায়। তার জন্য গদিতে বসার দরকার হয় না।
শিল্পী সমিতি হলো শিল্পীদের জন্য। এটি সিনেমা নির্মাণের জন্য না বলে উল্লেখ করেন রোজিনা। বলেন, সিনেমা নির্মাণ করা শিল্পীদের কাজ নয়। তবে যাদের অর্থ আছে তারা সিনেমা বানাবেন। তার জন্য শিল্পী সমিতির দরকার হয় না। শিল্পী সমিতি হচ্ছে শিল্পীদের সেবা করার জন্য। কেউ যদি মনে করেন, সবাই মিলে সিনেমা নির্মাণ করবেন সেটি ভিন্ন বিষয়। তার সঙ্গে শিল্পী সমিতির সম্পর্ক নেই।