ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ খুবই দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয় একটি আন্ডারপাস হলো রাজধানীতে। ব্যবহারের উপযোগী তো বটেই, নির্মাণশৈলীটাও চমৎকার। দেখার মতো। ঢাকা বিমানবন্দর মহাসড়কে নির্মিত সুরসপ্তক নামের এ আন্ডারপাস বুধবার খুলে দেয়া হয়েছে। সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে পথচারী পারাপার। তারও আগে থেকে আন্ডারপাসটি ঘিরে এক ধরনের বাড়তি কৌতূহল লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। অবকাঠামো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ভাল কিছু হচ্ছে। শেষতক যা হলো তা ভালর অধিক। ভীষণ পরিপাটি ঝকঝকে তকতকে এবং বাসার ড্রইংরুমের মতো করে সাজানো দেয়াল। অত্যাধুনিক আন্ডারপাসে চলাচলের জন্য আছে ৩২০ মিটার র‌্যাম্প। হাঁটার পথ ছাড়াও চলন্ত সিঁড়ি, লিফট ও হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আছে দৃষ্টিনন্দন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডর্ম। দেয়াল সাজানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আলোকচিত্র দিয়ে। ব্যবহারকারীরা তাই বেশ উৎফুল্ল। কারণ এখানে আগে কোন ফুটওভারব্রিজ ছিল না। একটিমাত্র জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করে চলত পথচারী পারাপার। শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের তীব্র ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পার হতে হতো। এ প্রসঙ্গেই স্মরণ করিয়ে দেয়া আবশ্যক যে, নতুন আন্ডারপাস নির্মাণের পেছনেও রয়েছে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার গল্প। দুর্ঘটনাটি সে সময় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। অনেকেরই মনে থাকার কথা, ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই এ রাস্তা পার হতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর। দিয়া খানম ও আবদুল করিম রাজীবের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীজুড়ে বিপুল প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। নিারপদ সড়কের দাবিতে শুরু হয় অভূতপূর্ব এক আন্দোলন। তখনই সেখানে একটি আন্ডারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে আন্ডারপাসটি নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীকে। বক্সপুশিং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কাজটি তারা সম্পন্ন করেছে। আন্ডারপাস নির্মিত হওয়ার ফলে বিষয়টি যে সরকার গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছে তা অনুমান করা যায়। একই কারণে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এটি উদ্বোধন করেছেন। বর্তমানে প্রতিদিন বহু মানুষ আন্ডারপাসটি ব্যবহার করছেন। এটি নির্মাণের ফলে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের সড়ক পারাপার নিরাপদ হওয়ার পাশাপাশি এয়ারপোর্ট মহাসড়কের বড় একটি অংশ যানজট মুক্ত থাকবে বলেও আশা করা হচ্ছে। কী হবে বইমেলার ॥ বইমেলার কী হবে? গত বছর করোনাকালেও বৃহৎ মেলাটি আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু ফল বিশেষ ভাল হয়নি। আয়োজক বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারী লেখক প্রকাশকরা মেলা ঘুরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বইপ্রেমী মানুষ মেলায় এসেছেন দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে। এ অবস্থায় বহু চেষ্টা করেও মেলাটিকে আর বই উৎসবের রূপে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে এবার কী হবে? এবার যখন মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে একাডেমি তখন করোনা বিধিনিষেধের বিষয়টিও বড় হয়ে সামনে এসেছে। এরই মাঝে পূর্ব ঘোষিত বহু উৎসব অনুষ্ঠান বিয়ে পিকনিক গণজমায়েত বন্ধ হয়ে গেছে। আরও অনেক বন্ধ বা স্থগিতের কথা জানা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ অবস্থায় এত বিশাল লোকসমাগমের মেলাটি কী করে চলবে? প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু উত্তর জানা নেই কারও। একাডেমির মতটাকেই সরকার বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আবার একাডেমি চেয়ে আছে সরকারী সিদ্ধান্তের দিকে। এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। বৃহস্পতিবার প্রাঙ্গণটিতে ঘুরে দেখা যায়, বড় অংশের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এর ভবিষ্যত কী? কোন চিন্তা থেকে কাঠামো নির্মাণ? জানতে কথা হচ্ছিল মেলার পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমদের সঙ্গে। তার কথায়ও দোলাচল। বলছিলেন, আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাইছি। যাতে করে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল হলে মেলায় ফিরতে পারি। কিন্তু ফেরা কতটা আসলে সম্ভব? বস্তুত সময়ের দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। আবারও বিধিনিষেধ ॥ আবারও বিধিনিষেধ। করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ ব্যাধির হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ঢাকা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও এখানেই বেশি। এ বাস্তবতায় বৃহস্পতিবার থেকে করোনা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। বিধিনিষেধ কার্যকরে মাঠে নেমেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতও। প্রথম দিনে রাজধানীর শাহবাগে অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়। দুপুর সোয়া ১২টা থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গণপরিবহনে মাস্ক ছাড়া চলাচলকারী যাত্রী ও পথচারীদের সতর্ক করে দেয়া হয়। মুচলেকা নেয়া হয়। এ সময় অপরাধ বিবেচনায় অর্থদ-ও দেন ম্যাজিস্ট্রেট। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডাঃ সঞ্জীব দাস। তিনি বলছিলেন, এখনও অনেকে মাস্ক ছাড়া বের হচ্ছেন, কেউ মাস্ক পকেটে পুরে রাখছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী দিনগুলোতে কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে বলে জানান তিনি। তবে রাজধানীবাসী নিজ থেতে সচেতন না হলে অন্য সব চেষ্টাই ব্যর্থ হবে। আমরা কি সচেতন হবো না?
×