ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

প্রতিমন্ত্রী পলককে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেওয়ার খবর গুজব এবং ভিত্তিহীন

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৭ জানুয়ারি ২০২২

প্রতিমন্ত্রী পলককে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেওয়ার খবর গুজব এবং ভিত্তিহীন

অনলাইন ডেস্ক ॥ কিছুদিন আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে। এবার গুজব ছড়িয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবকারীরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সফর থাকার পরও প্রতিমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারেননি। তবে বিষয়টিকে মিথ্যাচার দাবি করেছেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তার সফরের বিস্তারিত উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাল্টা পোস্টও দিয়েছন তিনি। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) আবুল কালাম আজাদ নামের একটি আইডি থেকে প্রতিমন্ত্রী পলকের একটি ছবি এবং বাংলাদেশ সরকারের জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) সংযুক্ত করে একটি পোষ্ট করা হয়। আইডির ব্যক্তি নিজেকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সদস্য দাবি করেছেন। পোষ্টে তিনি লেখেন, ‘‘বাংলাদেশের জন্য আরেকটি লজ্জাজনক ঘটনা। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও তার ব্যক্তিগত সহকারী সাদ্দাম হোসেনের আমেরিকার ভিসা বাতিল ও তাদের আমেরিকা ঢুকতে না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকান ইমিগ্রেশন পুলিশ।’’ পোষ্টটিতে শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রায় ২৩ জন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকে শেয়ারও করেছেন। এই পোষ্টের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিমন্ত্রী পলক নিজের প্রোফাইল ও পেইজে একটি বিশদ লেখা পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘গত ২৫ ডিসেম্বর টরন্টো থেকে (টরন্টো পিয়ারসন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ফ্লাইট নং- এসি ৭৫১০) বোস্টনে গিয়ে প্রথমবারের মতো বোস্টন শহরটা ভিজিট করলাম। বোস্টনকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম সেরা শিক্ষানগরী। প্রায় ৭০টিরও বেশি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী যারা বিশ্বের আধুনিক জ্ঞান চর্চা করছে গবেষণা করছে উদ্ভাবন করছে। আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ডিরেক্টর অফ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের ‘প্রফেসর তরুন খান্না’, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অফ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের ‘হিতেশ হাথি’ এবং মিনাকে যে ক্রিসমাসের ছুটি এবং প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকা সত্ত্বেও (মাইনাস ৪ ডিগ্রি) হার্ভার্ডে প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমাদের বাংলাদেশের জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ার জন্য কিভাবে আমরা কাজ করতে পারি নলেজ পার্টনার হিসেবে সে বিষয়ে আলোচনা করার জন্য এবং আমাকে হার্ভার্ডে দুপুরে আপ্যায়ন করার জন্য।’’ ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান 'রিউমার স্ক্যানার' তার প্রতিবেদনে জানায়, দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর নিশ্চিত হওয়া যায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের গত ৩ জানুয়ারিতে ফেসবুকে প্রকাশিত ছবিগুলো পুরনো নয় বরং ছবিগুলো গত মাসেই অর্থাৎ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসেই তোলা হয়েছে। অর্থাৎ তার যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না পারার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব এবং প্রকৃতপক্ষে কানাডার টরেন্টো, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ও ওয়াশিংটন সফর শেষে দুবাই হয়ে গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ফিরেছেন তিনি।’’ জুনাইদ আহমেদ পলক তার ফেসবুক পেজে গত ৩ জানুয়ারিতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ধারণ করা মোট ১৭ টি ছবি প্রকাশ করেন। তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী তিনি গত ২৫ ডিসেম্বর টরেন্টোর ‘টরন্টো পিয়ারসন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’ থেকে ‘এসি ৭৫১০’ ফ্লাইটে করে বোস্টনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বোস্টনে ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর দিনে অবস্থান করে সেখান থেকে ‘ডেল্টা ৫৭৯৮’ ফ্লাইটে করে ওয়াশিংটনে যান তিনি। বোস্টনে তিনি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল এবং ওয়াশিংটনে তিনি হোয়াইট হাউজ, লিংকন মেমোরিয়াল, আর্ট অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়াম, সায়েন্স মিউজিয়াম এবং ওয়াশিংটন হিস্ট্রি মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে গত ১ জানুয়ারি রাত ১০ টায় বাংলাদেশে ফিরেন তিনি। রিউমর স্ক্যানার টিম তার উল্লেখ করা দুইটি ফ্লাইটের (এসি ৭৫১০ এবং ডেল্টা ৫৭৯৮) তথ্যই খুঁজে পেয়েছে। ফ্লাইটএয়ার এর তথ্য অনুযায়ী এয়ার কানাডা (এসি) ৭৫১০ ফ্লাইটটি গত ২৫ ডিসেম্বর টরেন্টো থেকে ইস্টার্ন টাইম বিকেল ৩.২২ মিনিটে যাত্রা করে বিকেল ৪.৫৬ মিনিটে বোস্টন পৌছায়। পাশাপাশি, ডেল্টা ৫৭৯৮ ফ্লাইটটি গত ২৭ ডিসেম্বরে বোস্টন থেকে ইস্টার্ন টাইম সন্ধ্যা ৭.২২ (৩ মিনিট পূর্বে) মিনিটে যাত্রা করে রাত ৮.৫৯ (২৩ মিনিট পূর্বে) মিনিটে ওয়াশিংটন পৌছায়। ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান 'রিউমার স্ক্যানার' তার প্রতিবেদনে জানায়, পলকের তার ছেলের সাথে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের সম্মুখে দাঁড়িয়ে তোলা ছবিটি অনুসন্ধান করে দেখা যায় ছবিটি গত ডিসেম্বর মাসেই তোলা হয়েছে। মূলত, ছবিটিতে থাকা রাস্তার ডানপাশে একটি ক্ষণস্থায়ী কালো রঙ এর পর্দা জাতীয় কিছু লক্ষ করা যায় এবং এর পাশে ল্যাম্পপোস্ট এর ঠিক পেছনে থাকা একটি জরাজীর্ণ গাছ লক্ষ করা যায়। তবে ছবিটিতে বামপাশে থাকা গাছে কিছু সবুজ পাতা দেখা যায়। রিউমর স্ক্যানার টিম ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রত্যেক বছরে ভবনটির সামনে ঝুলানো লাল ফিতাগুলোর ছবি খুঁজে পেয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে হোয়াইট হাউজের সামনে ঝুলানো ছবিগুলোতে এই লাল ফিতা ভবনটির গেটের মাঝামাঝি অংশে বসানো হতো কিন্তু ২০২১ সালে সর্বপ্রথম ‘রেড রিবন’ গেটের মাঝামাঝি অংশে বসানোর পাশাপাশি গেটের শীর্ষেও ঝুলানো হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে হোয়াইট হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা বেশকিছু ছবি খুঁজে পেয়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিম এবং ছবিগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ডে হোয়াইট হাউজের সম্মুখের শীর্ষে ঝুলানো ‘রেড রিবন’ পরিষ্কার দৃশ্যমান যার সাথে আরিফা জেসমিন কণিকার প্রকাশিত ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডের হুবহু মিল রয়েছে। প্রসঙ্গত, জুনাইদ আহমেদ পলকের প্রকাশিত প্রায় সকল ছবিতেই লোকজনের মুখে মাস্ক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে অর্থাৎ ছবিগুলো স্বাভাবিকভাবেই করোনাকালীন সময়ের। এছাড়া ছবিগুলোর মেটাডাটা যাচাই, ফ্লাইট টিকিট এবং হোয়াইট হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা ছবিগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এটি পুরোপুরি নিশ্চিত যে ছবিগুলো গত ডিসেম্বর মাসেরই। রিউমর স্ক্যানার টিম পলকের ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের সকল এক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হয়েছে যে তার সেসময়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিলো না। অর্থাৎ, উপরোক্ত সকল তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী এটি পুরোপুরি নিশ্চিত যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক স্ব-পরিবারে গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন এবং তাদের প্রকাশিত সকল ছবি এই সফরের সময়েই তোলা হয়েছে। ছবিগুলো পুরনো শীর্ষক দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যা এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও গুজব বলে জানিয়েছে রিউমর।

আরো পড়ুন  

×