ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আইনজীবী গ্রেফতার

কুমিল্লায় স্কুলছাত্রীকে ১৭ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ৫ জানুয়ারি ২০২২

কুমিল্লায় স্কুলছাত্রীকে ১৭ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা ॥ কুমিল্লায় ইউটিউব সেলিব্রেটি করে অধিক টাকা উপার্জনের প্রলোভন দিয়ে হতদরিদ্র পরিবারের দশম শ্রেণী পড়ুয়া সুন্দরী এক স্কুলছাত্রীকে ১৭ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ ও ওই স্কুল ছাত্রীর ভাইকেও অপর এক যুবতীর সঙ্গে ধর্ষণে বাধ্য করে দৃশ্য ধারণসহ নানান অভিযোগে আইনজীবী জাহিদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে নগরীর মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকার একটি আবাসিক ভবনের ৭ম তলার গোপন আস্তানার ফ্ল্যাট থেকে ওই আইনজীবীকে গ্রেফতার এবং ওই ছাত্রী, তার ভাই ও এক যুবতীসহ ৩ জনকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আইনজীবী জাহিদ চৌধুরী নগরীর দৌলতপুর রেলগেট এলাকার মৃত জাকির হোসেনের ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং তার দুটি সন্তান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইউটিউব সেলিব্রেটি তৈরির নামে অনেক মেয়ের সর্বনাশের অভিযোগও রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র‌্যাব-কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন সাংবাদিকদের চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানিয়েছেন। র‌্যাব জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার গোলাসার গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ওই স্কুলছাত্রীর (১৫) পরিবার কুমিল্লা নগরীর আশ্রাফপুর এলাকার ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে। ওই স্কুলছাত্রীর মায়ের সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে আইনজীবী জাহিদ চৌধুরী (৪১) তাদের বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। এরই মধ্যে ওই সুন্দরী ছাত্রীর ওপর নজর পড়ে আইনজীবীর। পরিবারের দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে স্কুলছাত্রী ও তার ভাইয়ের লেখাপড়া ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে ওই আইনজীবী ইউটিউব সেলিব্রেটি করে অধিক টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখান এবং কয়েকটি গান ও খ- নাটক রেকর্ড করে ইউটিউবে ছাড়েন। র‌্যাব জানায়, গত বছরের ২৫ নবেম্বর আইনজীবী ওই ছাত্রীর পরিবারকে কিছু না জানিয়ে তাকে স্কুল থেকে নিয়ে নগরীর ধর্মসাগরপাড় এলাকায় ঘুরতে নিয়ে যান। একপর্যায়ে সেখান থেকে ওই আইনজীবী ভিকটিমকে নগরীর আশ্রাফপুর এলাকায় একটি বহুতল ভবনের ৭ তলার ফ্ল্যাটের গোপন আস্তানায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ভিকটিমকে ইউটিউব সেলিব্রেটি, পড়াশোনা করানো, পড়াশোনা শেষে ভাল চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা এবং তার নামে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিমকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনা কারো কাছে না বলার জন্য তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পরে ভিকটিম তার মাকে ঘটনা জানালে ওই আইনজীবীর সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে। পরে তারা নগরীর বাসা ছেড়ে ভিকটিমকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজ বাড়িতে চলে যান। এর পরও ওই আইনজীবী গোপনে ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং তার মায়ের নামে ছাত্রীর নিকট নানা অপপ্রচার করে বিভিন্ন প্রলোভনে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। ফের ওই আইনজীবীর এমন প্রলোভনে পড়ে গত ১৭ ডিসেম্বর ওই ছাত্রী তার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করে। একপর্যায়ে কৌশলে তিনি ভাই-বোন দু’জনকে তার ওই গোপন আস্তানায় নিয়ে আটকে রাখেন। র‌্যাব আরও জানায়, আস্তানায় আরেক যুবতীকে প্রাইভেট ফার্মে চাকরি দেয়ার কথা বলে নিয়ে আসেন ওই আইনজীবী। এদিন একদিকে একটি কক্ষে ওই স্কুলছাত্রীর ভাইকে ওই যুবতীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন। অন্যদিকে আরেকটি কক্ষে তার বোনকে (স্কুলছাত্রী) জোরপূর্বক বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেন আইনজীবী। পৃথক কক্ষে ভাই ও বোনের সঙ্গে এমন অনৈতিক ঘটনার দৃশ্যও ধারণ করে রাখেন তিনি। এদিকে ওই স্কুলছাত্রীর মা তার মেয়ে ও ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে র‌্যাবের নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর সোমবার দিবাগত গভীর রাতে আইনজীবী জাহিদ চৌধুরীকে নগরীর আশ্রাফপুরের তার আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং স্কুলছাত্রী, তার ভাই ও এক যুবতীকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই আইনজীবী স্কুলছাত্রীকে ইউটিউব সেলিব্রেটি, পড়াশোনা করানো, পড়াশোনা শেষে ভাল চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা এবং তার নামে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ করে বলে স্বীকার করেছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউটিউবের মাধ্যমে টাকা উপার্জনের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দিয়েও ইতোপূর্বে তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন বলেও স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় জাহিদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। রাতে কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম জানান, আইনজীবী জাহিদ চৌধুরীকে গ্রেফতারের বিষয়টি জেনেছি। আইন সবার জন্য সমান। অপরাধ প্রমাণিত হলে তার বারের সদস্য পদ বাতিল করা হবে। সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি দেবাশীষ চৌধুরী জানান, সন্ধ্যায় র‌্যাব ওই আইনজীবীকে থানায় হস্তান্তর করেছে। বুধবার (৫ জানুয়ারি) তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
×