অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভাড়াভিত্তিক চারটি বিদ্যুতকেন্দ্রের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ পদ্ধতিতে এগুলো চালাতে হবে। অর্থাৎ বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনে বিদ্যুত কিনলে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর যখন বিদ্যুত নেয়া হবে না তখন অর্থও পরিশোধ করতে হবে না। বিদু্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এলে তা বিবেচনা করা হবে বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, এখনও দাম বাড়ানোর কোন প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে আসেনি। তবে বিদ্যুতের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে আরও নতুন নতুন বিদ্যুত প্লান্ট করা হবে।
বুধবার অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় ও সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক ভার্চুুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির সভায় ১টি এবং ক্রয় কমিটির সভায় ১২টি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে বিদ্যুত বিভাগের আছে ৫টি, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৩টি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ২টি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ১টি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব। এই কমিটিতে অনুমোদিত ১২টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৭২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র বাতিলের কারণে সরকার বিকল্প জ্বালানিনির্ভর আরও নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ৮টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প পরিকল্পনা থেকে বাতিল করা হয়েছে। তবে ক্রয় কমিটির সভায় ৪টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের মেয়াদ আরও ৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধিতে সরকারের কোন অতিরিক্ত খরচ হবে না। নো পাওয়ার, নো পেমেন্ট ভিত্তিতে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন প্রস্তাব এই মুহূর্তে আসেনি। দাম বাড়লে তখন জানানো হবে। বিদ্যুতের দাম বাড়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের এ্যাফোর্ট্যাবিলিটি বা ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সেটি বাড়ানোর জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এখন সবাই ভাল অবস্থানে আছেন।
নতুন দুটি বিদ্যুত কেন্দ্রের অনুমোদন প্রসঙ্গে এখানে রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট যেগুলো ছিল সেগুলোর মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে এ মুহূর্তে যে চারটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে সেগুলো দু’/এক বা পাঁচ বছর অপারেট করবে। সেজন্য কোন এক্সট্রা চার্জ দিতে হবে না। যখন তাদের কাছ থেকে ইলেক্ট্রিসিটি তখন শুধু ওই পরিমাণ ইলেক্ট্রিসিটির চার্জ দিতে হবে। এখানে আমরা কোনভাবেই লোকসান করার সুযোগ রাখিনি। এ কারণে যখন বিদ্যুত প্রয়োজন হবে তখনই সরকার বিদ্যুত কিনবে- এমন শর্তে ১৭৩ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবের বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন জানান, সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পুরোনো চারটি রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়।
যে চারটি বিদ্যুতকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ছে ॥ সিলেটের কুমারগাঁও ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের মেয়াদ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ ১ বছর বৃদ্ধির জন্য স্পন্সর কোম্পানি এনার্জি প্রিমা লিমিটেডের সাথে চুক্তির মেয়াদ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৮৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের মেয়াদ ৩ বছর বৃদ্ধির জন্য স্পন্সর কোম্পানি এনার্জি প্রিমা লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৭৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বগুড়া ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের মেয়াদ ৩ বছর বৃদ্ধির জন্য স্পন্সর কোম্পানি এনার্জি প্রিমা লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১০৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আশুগঞ্জ ৫৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের মেয়াদ ৫ বছর বৃদ্ধির জন্য স্পন্সর কোম্পানি ইউনাইটেড এনার্জি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এছাড়া বিদ্যুত বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস অথবা আরএলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস লিমিটেড, জিই ক্যাপিটাল ইউএস হোল্ডিং, কনফিডেন্স পাওয়ার লিমিটেড এবং ইলেক্ট্রোপ্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুত সঙ্কট দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়।