ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

উচ্চশিক্ষার সংস্কার

প্রকাশিত: ২১:৩০, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১

উচ্চশিক্ষার সংস্কার

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার জন্য দেশে দক্ষ ও যোগ্য জনসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আবারও বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চশিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশন এ্যান্ড বিওয়ন্ড-২০২১’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের প্রতি। সারগর্ভ ভাষণে তিনি বলেন, প্রথম শিল্পবিপ্লব স্টিমইঞ্জিন, দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব বিদ্যুত, তৃতীয় শিল্পবিপ্লব কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এবং চতুর্র্থ শিল্পবিপ্লব এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে। সেই পেক্ষাপটে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা তথা চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের দেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিকল্প নেই। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেশে প্রচলিত উচ্চশিক্ষার সিলেবাস ও কারিকুলাম অনুরূপ দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য পর্যাপ্ত ও অনুকূল নয়। সে জন্য উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল সংস্কার ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনে ঢেলে সাজাতে হবে। এর জন্য যথাযথ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও সুপারিশ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের। প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি ব্লেন্ডেড লার্র্নিং, ই-লার্নিংসহ নিয়মিত গবেষণা এবং কারিগরি শিক্ষার প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে না পড়ে উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশে সরকারী ও বেসরকারী সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানের অবনতি ঘটেছে। করোনা অতিমারীতে তা আরও প্রকট হয়েছে। গত দুই বছরে শিক্ষাঙ্গনে নেমে এসেছে প্রায় স্থবিরতা। এর বাইরেও রয়েছে নানা সমস্যা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দিনে সরকারী এবং রাতে প্রায় বেসরকারী হয়ে যায়- এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। অনেক শিক্ষকই নিয়মিত ক্লাস নেয়া ও পরীক্ষা গ্রহণে অনিচ্ছুক। অথচ রাতের বেলা তারা ইভিনিং কোর্স নিতে খুব আগ্রহী। কেননা, সেখানে নগদ উপার্জন হয়। প্রতিবছর প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ ভর্তি বাণিজ্যের বিষয়টিও প্রকট। ভিসিরাও এ বিষয়ে অবহিত নিশ্চয়ই। এর বাইরেও ইদানীং বেশ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে সব্জনপ্রীতি-অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যা তদন্তাধীন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের। শিক্ষকম-লী ও শিক্ষার্থীদের দলীয় রাজনীতি, পারস্পরিক কোন্দল, অন্তর্কলহ, নীতিনৈতিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগও উঠেছে। বুয়েটের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবরার হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে। এতে প্রতিনিয়ত অধঃপতিত হচ্ছে উচ্চশিক্ষার মান, যা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার প্রতি প্রায় বিমুখ করে তুলছে। দেশে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে এক নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। চলতি বছর এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পায়নি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়। অস্থির সময়ও রাজনীতির কালোছায়া পড়েছে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষক রাজনীতিও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষা-বিরুদ্ধ কর্মকা- অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। দেশের ভবিষ্যত যারা, সেই শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচী সব সময় পরিত্যাজ্য। এর পাশাপাশি সমধিক গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করতে হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য উপস্থাপিত রাষ্ট্রপতির জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য।
×