কাওসার রহমান ॥ বাংলাদেশ কখনই ভিক্ষার ঝুলি ছিল না। দেশের সাম্প্রতিক সময়ের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নই তা প্রমাণ করে। বরং স্বাধীন দেশেও দীর্ঘদিন সামরিক শাসন থাকার কারণে বাংলাদেশ সম্ভাবনা অনুযায়ী সাফল্য অর্জন থেকে পিছিয়ে পড়েছে। টানা ১৫ বছর সামরিক শাসন না থাকলে বাংলাদেশ হয়তো ৫০ বছরেই উন্নত দেশে পরিণত হতো।
তা সত্ত্বেও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। একাত্তরে বিশ্বের মানচিত্রে যখন নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়, তখন অর্থনৈতিকভাবে এটির টিকে থাকা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। অথচ সেই দেশটিই অর্থনৈতিক ও সামাজিক এমন কোন সূচক নেই যে, অগ্রগতি লাভ করেনি। আর সবচেয়ে বড় নিন্দুকেরাও এখন বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য রকমের। বিশ্ববাসী যা ভাবতে পারেনি, তাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ সময় পাট রফতানি করে দেশটি অধিকাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করত। বিশ্বে পলিপ্রোপাইলিন যুগ আসার পর পাটপণ্যের চাহিদা দ্রুত হ্রাস পায়, কিন্তু সেই শূন্যস্থান ক্রমান্বয়ে দখল করে নেয় তৈরি পোশাক খাত।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সব চাইতে বেশি অবদান এই তৈরি পোশাক খাতেরই। এই শিল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মোট প্রবৃদ্ধির ৬-৮ শতাংশই আসছে পোশাক খাত থেকে। বাংলাদেশের এই শিল্পকে বর্তমানে উন্নত বিশ্বসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো অনুকরণ করছে। স্বাধীনতার পরে যে শিল্প আমাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছে তার একমাত্র মাধ্যম কিন্তু এই পোশাক শিল্পই। বিশ্বের বুকে নিজেদের কঠোর শ্রম ও উৎপাদন দক্ষতা দেখাতে পারার প্রমাণ মেলে এই শিল্পের মাধ্যমে। এই শিল্পের ওপর ভর করেই বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৪১তম স্থানে উঠে এসেছে। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এখন পঞ্চম। এককালের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ ২০৩৫ সালে হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের একটি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর)।
অথচ স্বাধীনতার ঠিক পর থেকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনা শোনা যেতে থাকে। মূলত এ সব দুর্ভাবনা ছড়িয়েছিল একাত্তরের যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান সরকার। তাদের বক্তব্য ছিল বাংলাদেশ যদি প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে অর্থনৈতিক দিক থেকে একটা টেকসই রাষ্ট্র হবে না। মূলত এই ধারণা থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে একটি ভিক্ষার ঝুলি বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রথম যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল, সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার কথাই ছিল বেশি। বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ‘সবচেয়ে ভাল পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ একটি নাজুক ও জটিল উন্নয়ন সমস্যার নাম। দেশের মানুষেরা গরিব। মাথাপিছু আয় ৫০ থেকে ৭০ ডলার, যা গত ২০ বছরেও বাড়েনি। একটি অতি জনবহুল দেশ (প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যা প্রায় এক হাজার ৪০০) এবং জনসংখ্যা আরও বাড়ছে (বছরে ৩ শতাংশ হারে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি) এবং দেশটির মানুষ অধিকাংশই নিরক্ষর (সাক্ষরতার হার ২০ শতাংশের কম)।’
স্বাধীনতার ঠিক পাঁচ বছর পর ১৯৭৬ সালে নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফ্যালান্ড এবং ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জে আর পারকিনশন বাংলাদেশ : দ্য টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট নামের একটি গবেষণামূলক বইয়ে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, যদি এই দেশটি উন্নতি করতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় পৃথিবীর যে কোন দেশ উন্নতি করতে পারবে।’
এর আগে ১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ বা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। যার মানে হচ্ছে, এখানে যত অর্থই ঢালা হবে, তলা না থাকায় কোন কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। কিসিঞ্জারের পর সেই সময়ের অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও অনেকেই তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিক তত্ত্বের একটি অগ্নিপরীক্ষা বা টেস্ট কেস।
সেই সব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে, তখন অনেক বিবেচনাতেই বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদ ও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখে বাংলাদেশের উন্নয়নের জয়গান শোনা যায়। সমৃদ্ধির বহু নামে বাংলাদেশকে পরিচিতি দেয়া হয় বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে।
কিন্তু ঈর্ষণীয় এ সব অর্জনের উচ্চতার সবচেয়ে বড় পরিমাপের পরিষ্কার ধারণা উঠে এসেছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। বিশ্বের নীতিনির্ধারণী এই আন্তর্জাতিক সংস্থার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তকমা ঘুচিয়ে উন্নয়নশীল দেশ।
স্বাধীনতার পর প্রথম কয়েক বছর বাংলাদেশের লেগেছে পুনর্গঠনের জন্য। পাকিস্তানী সেনারা অত্যন্ত নির্মমভাবে এদেশের রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামোকে ধ্বংস করেছিল। ধ্বংস করেছিল দেশের অবকাঠামোকে কিন্তু তা সত্ত্বেও পুনর্গঠনের পর্যায় অতিক্রম করার পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই এগিয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত দ্রুত হয় নব্বইয়ের দশক থেকে। তখন শুরু করে এখন পর্যন্ত গত তিন দশকে বাংলাদেশে অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিতর্ক থাকলেও মাথাপিছু আয় অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। মানবসম্পদের দিক থেকেও বাংলাদেশে অনেক উন্নতি হয়েছে।
বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনেও অভূতপূর্ব সাফল্য দেখা গেছে। স্বাধীনতার সময়ের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি খাদ্যশস্য এখন উৎপাদন করতে পারছে দেশ। শুধু তাই নয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও অনেক বেড়েছে। বেড়েছে প্রবাসী আয়, আমাদনি ব্যয় ও রফতাািন আয়। সবচেয়ে বড় কথা, সেই ভিক্ষার ঝুলির অপবাদ পাওয়া সেই বাংলাদেশ এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী হওয়ার পথে। ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে এই দেশের উন্নয়ন ব্যয়ের ৮০ শতাংশই বিদেশী সাহায্য ও ঋণের মাধ্যমে মেটানো হতো। বর্তমানে সেই দেশের বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয়ে বিদেশী ঋণ ও সাহায্যের পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। রাজস্ব আয়ের যে উদ্বৃত্ত অংশ থাকে, তা বিনিয়োগ করা হচ্ছে উন্নয়ন বাজেটে। এখন উন্নয়ন ব্যয়ের মাত্র ৩০ শতাংশ আসছে বৈদেশিক সাহায্য থেকে। বাকি ৭০ শতাংশই নিজস্ব অর্থ থেকে যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এক সময় বৈদেশিক অর্থায়ন না পেলে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলেও সেটি নেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু, এখন সেই অবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন নিজেদের অর্থে বৈদেশিক ঋণ ছাড়াই প্রকল্প নেয়ার সক্ষমতা অর্জন হয়েছে, যার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর মতো ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন। এর কৃতিত্ব জনগণের এবং আওয়ামী লীগ সরকারের। জনগণ টাকা দিয়েছে আর আওয়ামী লীগ সরকার নিজ দেশের টাকায় এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সাহস দেখিয়েছে। এ সব থেকে এটাই প্রমাণিত হয়- বাংলাদেশ কখনই ভিক্ষার ঝুলি ছিল না। ভিক্ষার ঝুলির তকমা লাগা সেই বাংলাদেশের গত ৫০ বছরে সবচেয়ে বড় অর্জন হলো, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরণ। বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৫ সালে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে কোন দেশকে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেই তিনটি শর্তই পূরণ করে। পরে ২০২১ সালেও সেই তিনটি শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয়তা দক্ষতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোন দেশ পরপর দু’টি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদ- পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ সেই চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছিল ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে ২৪ নবেম্বর ২০২১ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের ৪০তম প্লেনারি সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। ফলে বাংলাদেশ এখন স্থায়ীভাবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করল। যদিও প্রস্তুতিকালীন পাঁচ বছর পর ২০২৬ সালের ২৪ নবেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে দীর্ঘদিন সামরিক শাসন চলেছে। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সামরিক শাসনামলে বাংলাদেশে যে হারে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি ঘটেছে গণতান্ত্রিক শাসনামলে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই প্রমাণ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি ত্বরান্বিত হয় এবং মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়। ফলে স্বাধীনতার পর ১৫ বছর দেশে সামরিক শাসন না থাকলে এই ৫০ বছরে বাংলাদেশ হয়তো উন্নত দেশের কাছাকাছি চলে যেত।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির আরেকটি বিশেষত্ব হলো প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুলতা এবং সুশাসনের ঘাটতি থাকার পরও অনেক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত পাঁচ দশকের এই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের পেছনে কাজ করেছে এদেশের দরিদ্র মানুষ, আর কৃষকের নিরলস প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের মহিলারা পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এবং ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমের কুটির শিল্পের কাজ করে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছেন। বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা বিদেশে কাজ করে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন, সেটিও আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে অনেক। দরিদ্র মানুষের সাফল্যই দেশের প্রবৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংকের পাকিস্তান প্রোগ্রামের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান। ‘এইড ফ্রম বাংলাদেশ’ নামের এক প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের দ্বিগুণ। তার মতে, এভাবে এগোতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে।’
‘বটমলেস বাস্কেট’ বলা সেই দেশেরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ২০১৬ সালের আাগস্ট মাসে ঢাকা সফরে এসে বলে গেছেন, ‘বাঙালী জাতির মেধা, পরিশ্রম আর একাগ্রতার মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে একসঙ্গে কাজ করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।’
তার আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে এবং ‘চড়চড় করে’ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের খুবই সম্ভাবনা আছে। তাই অনেক দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’ সফরকালে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে নতুন এশিয়ান টাইগার বলেও আখ্যায়িত করেন।
বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ২০২২ থেকে ২০২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এতে দেশের জিডিপির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা)। তাদের হিসাবে ২০২৬ অর্থবছর নাগাদ মাথাপিছু আয় তিন হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
‘প্যারোকিয়াল প্রোগ্রেস’ শিরোনামের দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক নিবন্ধে বলা হয়, এক সময় যাকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলা হতো, সেই বাংলাদেশ এখন ব্রিক-ব্র্যান্ডধারী প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে ভাল করছে। এ প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জোসেফ অলচিনের ওই প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ‘জীবনমানের অনেক সূচকে বাংলাদেশ শুধু ভারতের চেয়ে ভালই করছে না, উল্লেখ করার মতো এগিয়ে রয়েছে।’ বংলাদেশের অগ্রগতির পেছনে রফতানিমুখী শিল্পের বড় ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে কর্মজীবীদের ২৮ শতাংশের বেশি শিল্প খাতে নিয়োজিত। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ তৈরি পোশাক খাতে কাজ করছেন। তাদের বড় অংশ নারী, যারা আগে কৃষিতে টুকিটাকি সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। অর্থনীতিতে তাদের অবদান ছিল সামান্য।
যেভাবে বদলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি ॥ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশের অর্থনীতির পালা বদলের চিত্র সহজেই বোঝা যায় দেশটির অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ সব সূচকের প্রথম যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায়, ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল ৬২৯ কোটি ডলার, মাথাপিছু আয় ছিল ৮৮ ডলার, রফতানি আয় ছিল মাত্র ৩৪ কোটি মার্কিন ডলার। সে সময় রিজার্ভ ছিল ১১০ কোটি টাকা, আমদানি ব্যয় ছিল ২২৬ কোটি ডলার, রাজস্ব আয় ছিল ২৮৫ কোটি টাকা আর দারিদ্র্যের হার ৭০ শতাংশ। ১৯৭৬ সালে রেমিটেন্স ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।
পঞ্চাশ বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, রফতানি আয় বহুগুণে বেড়ে মিলিয়ন ডলার থেকে এসেছে বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ২০২০-২১ সালের হিসাবে যা দাঁড়িয়েছে ৩৮.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জিডিপির আকার ৪১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৮ কেটি ডলারে, আর রাজস্ব আয় ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। রেমিটেন্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলারে, যা দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে বড় অবদান রেখে চলেছে। গত ৫০ বছরে দারিদ্র্যের হার ৭০ শতাংশ থেকে কমে ২০.৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
এক সময় যে দেশটি তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত ছিল, এখন বলা হচ্ছে ২০৩৫ সালের মধ্যে সেই দেশটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত থেকে দেশটি এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে বাংলাদেশ এখন তার নিজস্ব রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ঋণও দিচ্ছে। শুধু দেশেই নয়, রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কাকেও ঋণ সহায়তা দিয়েছে।
শুধু অর্থনৈতিক সূচক নয়, বাংলাদেশ গত পঞ্চাশ বছরে মানবসম্পদ সূচকেও গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি করেছে। জাতিসংঘের সূচকে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ৭৩.২ শতাংশ। এই সূচকের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মূলত শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি। নারীদের শিক্ষাদান এবং তাদের সোচ্চার করে তুলতে এনজিওদের ভূমিকা কাজে লেগেছে। এতে শিশুস্বাস্থ্য এবং শিক্ষার উন্নতি হয়েছে। ফলে গড় আয়ু বেড়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর, যেখানে ভারতের ৬৮ বছর এবং পাকিস্তানের ৬৬ বছর।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মানবসম্পদ সূচকে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নিরেট অর্থনৈতিক সক্ষমতাও এমনভাবে বেড়েছে যেখানে বিদেশী ঋণ সহায়তানির্ভর উন্নয়নে অভ্যস্ত বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছে ত্রিশ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট পদ্মা সেতু। এটি বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার রূপান্তরের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, গত ৫০ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে। যে পাকিস্তানকে আমরা পরাজিত করেছি সেই পাকিস্তান এখন অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। তবে দেশে ৭৫ পরবর্তী অর্থনীতির যত পরিবর্তন ঘটেছে তার ৭৩ শতাংশ হয়েছে গত ১২ বছরে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের মূল্যায়ন হচ্ছে, বিশ্বের দেশে দেশে প্রবৃদ্ধির অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। সেখানে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের পর গত পাঁচ দশকের শেষ দুই দশকে প্রায় প্রতিবছর আগের বছরের তুলনায় জিডিপি বেড়েছে গড়ে এক শতাংশ হারে। এটা বিশ্বে অনন্য নজির। এ ছাড়া স্বাধীনতার প্রথম তিন দশকেও প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ছিল। ওই সময় প্রতি দশকে গড়ে এক শতাংশের অতিরিক্ত প্রবৃদ্ধি যোগ হয়েছে।
তিনি মনে করেন, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক ও মানব উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকেও বাংলাদেশের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। সাফল্য মিলেছে শিল্পেও। দেশে এখন শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের জোয়ার বইছে। পিছিয়ে নেই কৃষিতেও। কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদন বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই বাড়ছে বাংলাদেশে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য রকমের। বিশ্ববাসী যা ভাবতে পারেনি, তাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো বাংলাদেশকে। এখন নিন্দুকেরাও আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, রিজার্ভ, রেমিটেন্স, রফতানি, জন্মহার, মৃত্যুহার, শিক্ষার হার, দারিদ্র্যের হার- এমন আর্থ-সামাজিক সব সূচকেই বাংলাদেশ তার অপ্রতিরোধ্য সক্ষমতার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছে।’
তিনি বলেন, ‘এগিয়ে যাওয়ার এখনও অনেক পথ বাকি। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও বৈষম্য কমেনি। এটা কমানো না গেলে সবার জন্য সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। তা ছাড়া আমাদের লক্ষ্য উচ্চ আয়ের দেশে পৌঁছানো। এর জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। ভোগ এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ ছাড়া সেটা সম্ভব হবে না। দেশে বেসরকারী বিনিয়োগে খরা চলছে। সরকারী বিনিয়োগের বাস্তবায়ন সক্ষমতা কম। বিদেশী বিনিয়োগ প্রত্যাশিত হারে আসছে না। দারিদ্র্যের হার করোনার কারণে আবার বাড়তে শুরু করেছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারকে এখনই এ সব বিষয়ে আরও অধিক মনোযোগী হতে হবে।
ড. মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হিসেবে যতটুকু অগ্রগতি হওয়া শুরু করেছিল, তার ধারাবাহিকতা রাখা সম্ভব হয়নি। কারণ উন্নয়নের পথে সব থেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতি। বিনিয়োগ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক পরিবেশ বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। তবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে অর্থনৈতিক কর্মকা-কে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকা- ও দেশের উন্নয়নের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে সবাইকে।
পাঁচ দশকে দেশের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেন, সার্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটেছে। যুদ্ধপরবর্তী দেশের অর্থনীতির আকার ছিল ৬.৩ বিলিয়ন। বর্তমানে সেটি দাঁড়িয়েছে ৪১১ বিলিয়নের বেশি। ১৯৭৫-এর পর থেকে আজ পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ঘটেছে তার ৭৩ শতাংশই হয়েছে গত ১২ বছরে।
তিনি বলেন, অস্বাভাবিক এ পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় অবদান বঙ্গবন্ধুর। কারণ, তিনি শক্তিশালী একটি ভিত্তি দাঁড় করে রেখে গেছেন। তিনি জনসংখ্যা কমানোর জন্য নীতি তৈরি করেছিলেন। কৃষি উন্নয়ন, প্রথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, মানবিক উন্নয়ন, এ সবের ভিত্তি তিনিই তৈরি করেছেন।
সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান মনে করেন, উন্নয়নের গতি দ্রুত করতে হলে অভ্যন্তরীণ সম্পদের আহরণ বাড়াতে হবে। এ জন্য রাজস্ব আহরণের দিকে সরকারকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, সরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। কিন্তু, সরকারের মানসম্পন্ন বিনিয়োগের দক্ষতা খুবই কম।
তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কেবল সরকারের সাফল্য নয়, এটা বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণের সাফল্য। বিগত ৫০ বছরে আমাদের অনেক অর্জন আছে। এ সব অর্জনের জন্য আমাদের যেমন গর্ব করার প্রয়োজন রয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সতর্কও থাকা প্রয়োজন রয়েছে। এই সতর্কতার দিকগুলোকে তুলে ধরার আগে আমি আমাদের প্রবৃদ্ধির পথে তিনটি বড় অন্তরায়ের কথা তুলে ধরতে চাই। প্রথমত, বাংলাদেশের জনসংখ্যা। আমাদের এখানে ১৬ কোটির বেশি লোক বাস করে। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাগুলোকে টেকসই করতে জনসংখ্যাকে বিবেচনায় রাখা খুব জরুরী। আমাদের দ্বিতীয় অন্তরায়, পরিবেশ দূষণ। এটি একটি মারাত্মক সমস্যা এবং এই সমস্যার এখন পর্যন্ত কোন স্থায়ী সমাধান আমরা করতে পারিনি। তৃতীয়ত, আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী দরিদ্র্যসীমার বাইরে নিয়ে এসেছি। কিন্তু তা সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। এখনও আমাদের দারিদ্র্র্যসীমা বিভিন্ন কারণে বেড়ে যেতে পারে। যেমন কোভিডের সময় অনেক মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছেন।
ড. আকবর আলি খান বলেন, এই প্রবৃদ্ধিকে সুসংহত করার জন্য আমাদের আরও কমপক্ষে এক দশক কাজ করতে হবে। বিশেষ করে যে সব ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে রয়েছি তা হলো- এখনও আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। সুশাসনকে প্রতিষ্ঠা করতে আমরা কেবল একটি কাজই করেছি, তা হলো ডিজিটালাইজেশন। কিন্তু শুধু কম্পিউটার দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবশ্যই সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের সরকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং মূল্যায়ন সম্পর্কে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশকে এখন অনেক দেশই সমীহ করছে। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থাই মনে করছে, ২০৫০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ ২৩তম উন্নত অর্থনীতির দেশ হবে। ভাবনায় ভুল নেই। গতিবিধি সে কথাই বলছে। এখন প্রধান কাজ, দেশে শান্তি বজায় রাখা। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকেও সে দিকে নজর দিতে হবে। বিশৃঙ্খলায় যে রাজনৈতিক ফায়দা হয় সেটা সাময়িক। তাতে দলেরও ক্ষতি হয়। দেশটা শুধু আওয়ামী লীগের নয়, বিএনপিরও নয়। শুধু এই দু’টি দলের বাইরে অন্য যে সব রাজনৈতিক দল আছে তাদেরও নয়। এই দেশ ১৭ কোটি মানুষের। তাই বিশ্বের দরবারে দেশের মাথা উঁচু করতে সবার যৌথ প্রয়াস একান্ত জরুরী। ভৌগোলিক কারণে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে উন্নত দেশ হতে পারেনি। অথচ কাছাকাছি সময়ে স্বাধীনতা লাভ করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া আজ উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা গেলে বাংলাদেশও আজ একই কাতারে অবস্থান করতো।
তবে, বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অশুভ প্রবণতা হলো- মাথাপিছু আয়ের বেশিরভাগ ধনীদের মাঝে পুঞ্জীভূত হয়ে রয়েছে। দরিদ্র মানুষের মাথাপিছু আয় কমছে। আর ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। ধনীদের ক্রমাগত ধনী হওয়া আর গরিবদের গরিব হওয়ার এই প্রবণতা ঠেকাতে না পারলে, এটি প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে বিরাট অন্তরায় হতে পারে।
বাংলাদেশের এখন লক্ষ্য উন্নত দেশ হওয়া। আশা করা যায়, একদিন না একদিন বাংলাদেশ অবশ্যই উন্নত দেশে পরিণত হবে এবং দুনিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই বাংলাদেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশের ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জ্বল।