উত্তম চক্রবর্তী ॥ পৃথিবীর মানচিত্রে অপেক্ষাকৃত তরুণ বাংলাদেশের বয়স এখন ৫০ বছর। এই গোটা সময়ে ইতিহাসের রাজনৈতিক পট ভেঙ্গেছে, গড়েছে, বদলেছে। দেশের মহার্ঘ স্বাধীনতার ৫০ বছরের এই ক্ষুদ্র পরিসরে দেশ ও জাতি অনেক ঘটন-অঘটন, চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী হয়েছে। সময়ে সময়ে এসব ঘটনা সমগ্র জাতিকে প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়েছে, পাল্টে দিয়েছে এর গতিপথ। কখনও জাতির জীবনে এসেছে হতাশা-অন্ধকারাচ্ছন্ন মুহূর্ত, কখনওবা হয়েছে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় উজ্জীবিত।
৫০ বছরের রাজনীতির ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী বহু ঘাত-প্রতিঘাত, সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ সামরিক শাসনে হত্যান্ডক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং নানা চড়াই-উতরাই ও অন্ধকারের যুগ পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন-সমৃদ্ধির মহাসোপানে। দেশ এগিয়ে চলেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অসম্ভব এক বন্ধুর ও কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে বাংলাদেশসহ দেশের মানুষকে।
যদিও ৫০ বছর একটি জাতির জীবনে খুব বড় পরিসর নয়, গড় আয়ুর নিরিখে হয়তোবা একটি প্রজন্ম মাত্র, তথাপি পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা সহস্র বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ আত্মমর্যাদায় বলীয়ান একটি জাতির সামনে অর্ধ শতাব্দীর এই মাইলফলক অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। যেমনটি টানা তৃতীয় মেয়াদে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে ১২ বছরে বদলে গেছে বাংলাদেশ, নতুন প্রজন্মের সামনে উদ্ঘাটিত হয়েছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের সত্য ও সঠিক ইতিহাস। ইতিহাসের খলনায়করা হারিয়ে গেছে সত্য ইতিহাসের বিশাল স্তূপের নিচে।
স্বাধীনতার পর যে দেশটিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছিল, সেই বাংলাদেশ আজ গোটা বিশ্বের সামনে এক বিস্ময়ের নাম। যে দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্থান পায় বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে, সেই দলটির হাত ধরেই গত এক যুগে বিস্ময়কর গতিতে ঘুরে দাঁড়ানো, উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়কারী দেশটির নাম এখন বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে থেকে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। আর দেশের এই বিস্ময়কর সাফল্যের কারিগরই হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশটির প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করার দেশী-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র যেমন দেখেছে এ ভূখন্ডের মানুষ, তেমনি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাত ধরেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ ৫০ বছর পূর্তির সময়ে জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জাতিসংঘের স্বীকৃতিও প্রত্যক্ষ করল দেশের মানুষ।
মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির কুহেলিকা ছিন্ন করে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ও তাদের দোসরদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস-ধর্মান্ধ অপশক্তিকে মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পতাকাকে উড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে, ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে দেশকে বারবার ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রকারীরা। এছাড়া স্বাধীনতার এই ৫০ বছরের ইতিহাসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে দীর্ঘ একুশ বছর ধরে বুক ফুলিয়ে চলা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচার, ফাঁসির দন্ড কার্যকর, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দ- কার্যকরের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে উত্তরণের সাহসী পদক্ষেপেরও সাক্ষী এদেশের মানুষ।
১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই দেশটির জন্মের ইতিহাস, বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং মানুষের রাজনীতিমনস্কতা কেন্দ্র করে আবর্তিত। ১৯৭১-এ অস্থায়ী সরকার গঠন এবং সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা কমপক্ষে পাঁচবার পরিবর্তিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী অবৈধভাবে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল, জিয়া নিহত হওয়ার পর আরেক স্বৈরশাসক এরশাদের ক্ষমতা দখল, ক্যু-পাল্টা ক্যুর নামে হাজার হাজার সামরিক বাহিনীর অফিসার- সৈনিককে নির্বিচারে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ কার্যত এক ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
স্বাধীনতার এই ৫০ বছরের সময়ে কেমন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাস? স্বল্প কথায় বিশ্লেষণ করলে মানসপটে ভেসে উঠে জাতির পিতার নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত পাকিস্তানের একটি প্রদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণে জাতির পিতার ক্লান্তিহীন চেষ্টা, বিশ্বের সকল দেশের স্বীকৃতি আদায়, বঙ্গবন্ধুর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে উন্নীত করা, স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার স্বাদ যেন এদেশের মানুষ না পায়, সেজন্য স্বাধীনতাবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির মিছিল থেকে হটিয়ে ফের ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দীর্ঘ চেষ্টা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, জন্মের এই ৫০ বছরের মধ্যে সাড়ে ২৯টি বছরই বাংলাদেশ ছিল সামরিক স্বৈরশাসক এবং গণতন্ত্রের নামে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির অপশাসনে অন্ধকারাচ্ছন্ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা পরবর্তী অবৈধ সামরিক স্বৈরশাসকদের হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনীসহ একাত্তরের ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তিকে পুনর্বাসন ও ক্ষমতার অংশীদার করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে থেকে পেছনে ঠেলে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার অপচেষ্টা চলেছে ১৯৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর।
সামরিক স্বৈরশাসন থেকে গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরে এলেও ১৯৯১ পরবর্তী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের পাঁচ বছরেও ছিল স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির আস্ফালন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুনর্বাসন ও পুরস্কৃত করা, বিরোধী দলকে কঠোর হস্তে দমন, দুর্নীতিতে পুরো দেশ জর্জরিত হওয়ার ইতিহাস। ওই সময়ের দুঃশাসনে গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার বিএনপি। মাঝে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়ালেও ২০০১ সালের নির্বাচনে গ্যাস বিক্রিতে রাজি না হওয়ায় আবারও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া এই দলটিকে।
একাত্তরের ঘাতক জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গী করে ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে কুখ্যাত একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করা হয়। পুরো দেশ পরিণত হয় জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে, দুর্নীতিতে বাংলাদেশ টানা পাঁচ বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের কলঙ্কও আসে বিএনপি-জোট সরকারের পাঁচ বছরের শাসনামলে। নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়ানো, নিজ দলের রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করার চেষ্টার মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা চলে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির তীব্র আন্দোলনের মুখে আসে ওয়ান-ইলেভেনের সরকার। সামরিক সমর্থিত এই সরকার নির্বাচন দেয়ার পরিবর্তে দুই বছর ক্ষমতায় থেকে মাইনাস-টু ফরমুলার নামে দেশকে বি-রাজনীতিকীকরণের চেষ্টা, দুই নেত্রীকে গ্রেফতার করে কিংস পার্টি সৃষ্টির চেষ্টা এবং ব্যাপক দমননীতির মুখে দেশের মানুষকে আবারও এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। অর্থাৎ ’৭৫ পরবর্তী ২১ বছর, বিএনপি-জামায়াতের জোটের পাঁচ বছরের দুঃশাসন আর ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার-জন্মের ৫০ বছরের মধ্যে এই সাড়ে ২৯ বছর শুধু উন্নয়ন-অগ্রগতির বদলে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশে কিছু আইকনিক রাজনৈতিক দল আছে, যারা স্ব-স্ব দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের শুধু অংশীদারই নয়, চালিকাশক্তিও বটে। ভারতে জাতীয় কংগ্রেস, পাকিস্তানের মুসলিম লীগ, নেপালে কংগ্রেস এবং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তেমনি ইতিহাস-ঋদ্ধ রাজনৈতিক দল। অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী ২১টি বছর ক্ষমতায় আসতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সামরিক শাসন এবং গণতন্ত্রের লেবাসে থাকা দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ২১ বছর রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম শেষে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয় আওয়ামী লীগ।
স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনা করে সাড়ে একুশ বছর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়। জাতির পিতাকে হত্যার পরবর্তী দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকে পাঁচ বছর। মাঝে ৫ বছর বাদ দিয়ে ২০০৯ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত অর্থাৎ গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে টানা ক্ষমতায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।
আর এই একুশ বছরে দেশের মানুষ যা পেয়েছে বা দেশের যত অর্জন সবই এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে দীর্ঘ একুশ বছর পরিচয় পাওয়া বাংলাদেশ অর্জন করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার এক যুগ ধরে দেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ম্যাজিক। দেশের ইতিহাসে রেকর্ড একটানা তৃতীয়সহ চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানও এখন বাংলাদেশ হতে চায়। কেননা প্রধান ১০ সূচকের সবগুলোতেই পরাজিত পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের অনেক পেছনে। ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থাকা শেখ হাসিনা শত ষড়যন্ত্রের কুহেলিকা ছিন্ন করে, মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনা করছেন, অর্জন করেছেন বিশ্বের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ে নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনার রেকর্ডও।
বঙ্গবন্ধু হত্যা, জিয়া-এরশাদের উত্থান পর্ব ॥ কোন হুইসেল বা সৈনিকের ঘোষণায় নয়, এই মহার্ঘ স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালী জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে একসাগর রক্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে পুরো বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালী। ১৯৪৮, ’৫২ পেরিয়ে ৫৪, ’৬২, ’৬৬-এর পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে জেনারেল আইয়ুবের শাসন। জনতার সাগরে উন্মাতাল স্রোতধারা। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ সেøাগাসে সেøাগানে প্রকম্পিত হয় গ্রাম-শহর, জনপদ।
একাত্তরে দেশের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য এবং সাহস দেখা গিয়েছিল তা আগে বা পরে আর কখনও দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামেই ‘সাড়ে সাত কোটি’ বাঙালী তখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, লড়াই করেছিল, জীবনবাজি রেখেছিল। সত্যি তখন ছিল ‘এক নেতা, এক দেশ’। শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাঙালীর হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালী হত্যাযজ্ঞে। তবে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় দিক-নির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালীর হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি। এরপর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাঙালী জাতি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে ৯ মাস মরণপণ যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনে আমাদের মহার্ঘ স্বাধীনতা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচন্ড চাপের মুখে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পরাজিত পাকিস্তান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। সেদিনই বঙ্গবন্ধু ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন থেকে যাত্রা করেন। লন্ডন থেকে ঢাকা আসার পথে বঙ্গবন্ধু দিল্লীতে যাত্রা বিরতি করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। দেশে এসেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হন বঙ্গবন্ধু। ৪ নবেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণীত হয়। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। ওই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন দেশ গড়ার কাজে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তখন পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধীরাও তাদের ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার করতে থাকে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারসহ প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। প্রথম আঘাত হানা হয় ছাত্রলীগেরই একটি অংশকে নিয়ে জাসদ সৃষ্টির মাধ্যমে। দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির মাধ্যমে জাসদের উত্থান ঘটানো হয়।
‘বিপ্লবে পরিপূর্ণতা প্রদান ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার স্লোগানে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে জাসদকে ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে। ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে বিপ্লবী গণবাহিনী গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সরকারকে অস্থিতিশীল করতে দেশব্যাপী চালাতে থাকে নানা গোপন ঘটনা, হত্যাকান্ড। স্বাধীনতাবিরোধী সামরিক বাহিনীর একটি অংশও গোপনে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দেন। ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার প্রবর্তন করেন এবং ২৪ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় দল ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করেন।
এরপর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পথ ধরে আসে ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা। শত ষড়যন্ত্র করেই বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ন্যূনতম আঁচড় কাটাতে না পেরে পরাজিত শত্রুর এদেশীয় দালালরা এ দিন হানে চরম আঘাত। সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী অফিসার বিশ্বাসঘাতকের হাতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী কেউ যেন বেঁচে না থাকে সেজন্য ১০ বছরের শিশু রাসেলকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ১৫ আগস্টে। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাককে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসানো হয়। ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের নেপথ্যের মূল ষড়যন্ত্রকারী জেনারেল জিয়াকে সামরিক বাহিনীর প্রধান করে খুনী মোশতাক। ৩ নবেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের নামে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন জেনারেল জিয়া। যে কর্নেল তাহের বন্দিদশা থেকে জিয়াকে উদ্ধার করেন, সেই জিয়াই ক্ষমতা দখল করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁকে হত্যা করে। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সামরিক আইন প্রশাসক থাকা অবস্থায় জেনারেল জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে শপথ নেয়।
১৯৭৮ সালের ৩ জুন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি। জিয়াই প্রথম নজিরবিহীন ‘হ্যাঁ-না’ ভোট প্রচলন করে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে। অবৈধ ক্ষমতা দখলের পর প্রথমে জাগোদল পরে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়া ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে বিএনপি নামক দলটি গঠন করে তার চেয়ারপার্সন হন। হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার-সৈনিককে নির্বিচারে হত্যা করা হয় জিয়ার শাসনামলে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে জেনারেল জিয়ার নেপথ্যে মদদে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে জেনারেল ওসমানী জাতীয় জনতা পার্টি, আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের গণআজাদী লীগ এবং খুনী খোন্দকার মোশতাককে দিয়ে বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক লীগসহ অনেক প্যাডসর্বস্ব রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। কুখ্যাত রাজাকার আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী, আবদুল আলিমকে মন্ত্রী, কারাগারে আটক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি এবং নিষিদ্ধ ধর্মীয় রাজনীতিকে পুনরায় চালু করার মাধ্যমে জেনারেল জিয়া তার স্বাধীনতাবিরোধী প্রকৃত রূপ দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা-ের পর আওয়ামী লীগ চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। ১৯৮১ সালে সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের হাল ধরলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। আওয়ামী লীগের প্রকৃত পুনরুজ্জীবন হয়। তিনি সারাদেশ চষে বেরিয়ে নানা উপদলে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে থাকেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে ভোররাতে জেনারেল জিয়া চট্টগ্রামে একদল সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন। এরপর জাতির জীবনে ফিরে আসে আবারও সেনাশাসন। ১৯৮২ সালের সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর নাগাদ তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। এরপর জেনারেল জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এরশাদও সংবিধান লঙ্ঘন করে ’৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা বিচারপতি এ এফ এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন। ক্ষমতায় থেকে গঠন করেন জাতীয় পার্টি নামক রাজনৈতিক দল। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারেরও পতন হয়। বাংলাদেশ ফিরে পায় গণতন্ত্র।
বাংলাদেশে গত ৫০ বছরের রাজনীতিতে ‘জোটের রাজনীতি’ প্রথম দিকে গুরুত্ব না পেলেও ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান ও ’৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এই জোট রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পায়। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়, ক্ষমতায় আসেন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। শুরু হয় আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে ভয়াবহ নির্যাতন, স্বাধীনতাবিরোধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত-মদদ দেয়ার অতীত কর্মকান্ড। বিএনপি সরকারের দুঃশাসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ব্যাপক গণআন্দোলন শুরু হয়, ১৯৯৬ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় বিএনপি সরকার। এরপর ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ, প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবার পূর্ণ পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এরপর আবারও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় আওয়ামী লীগকে। গ্যাস বিক্রি করতে মার্কিন সরকারের প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে বেশি ভোট পেলেও হেরে যায় আওয়ামী লীগ, ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ক্ষমতায় আসার পরই আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘুদের ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। জোটের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান ‘হাওয়া ভবন’-এ সরকারের প্যারালাল আরেকটি সরকার গঠন করেন। দেশ আবারও পিছিয়ে যায়, সারাদেশে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের উত্থান ঘটে। দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পাঁচ পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে আবারও রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়ানো, রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে বিএনপি-জামায়াত জোট। পুরো নির্বাচন অনিশ্চয়তার মুখে পড়লে আসে ওয়ান-ইলেভেনের সরকার। সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত এই সরকার প্রথমেই গ্রেফতার করে তৎকালীনবিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে। পরে খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করে মাইনাস-টু ফর্মুলার নামে বি-রাজনীতিকরণ এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে দিয়ে কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু আন্দোলনের মুখে দুই বছর পর ২০০৯ সালে দিতে বাধ্য হয় ফখরুদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোট সরকার। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত দুটি সংসদ নির্বাচনেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবারের মতো বিশ্বে দীর্ঘস্থায়ী নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড সৃষ্টি করে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশ পরিচালনা করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।