ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করলে কঠোর ব্যবস্থা ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০১:৩৯, ২১ নভেম্বর ২০২১

দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করলে কঠোর ব্যবস্থা ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দল থেকে যাকেই প্রার্থী করা হোক না কেন, তার বিরোধিতা না করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আবারও সতর্ক করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুনর্বার দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের ব্যাপারে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধু দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নয়, এদের সমর্থনকারী, উস্কানিদাতা ও মদদদাতা যত বড় নেতাই হোন না কেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শনিবার তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। সকাল থেকে রাত অবধি দীর্ঘ বৈঠকে চতুর্থ ধাপের ৮৪০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলের চেয়ারম্যান এবং তিনটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে শনিবারের এই বৈঠকটি ডাকা হয়েছিল। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রার্থী বাছাইকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা, নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতায় ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভোটারদের মন জয় করতে সরকারের গত এক যুগের ব্যাপক উন্নয়নের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী এবং তাদের সমর্থনকারী ও মদদদাতাদের আর কোন ছাড় দেয়া হবে না, তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকাকে জয়ী করার বিকল্প নেই। তাই নৌকার প্রার্থীদের জয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বাত্মক প্রচার চালাতে হবে। ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে তাদের মন জয় করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি গত এক যুগে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন এবং সারাবিশ্বে দেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার বাস্তব চিত্র জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে, আওয়ামী লীগের পক্ষে জনসমর্থন বৃদ্ধি করতে হবে। চতুর্থ ধাপের ৮৪০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের চেয়ারম্যান এবং তিনটি পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে শনিবারের এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পাবনা জেলার আটঘরিয়া, নরসিংদী জেলার রায়পুরা ও কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। সূত্র জানায়, প্রথম দিনের বৈঠকে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ৩৫৩টি ইউপির অধিকাংশ দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। এই অবস্থায় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকল সোমবার বিকেল চারটায় পুনরায় মুলতবি বৈঠকে বসে বাকি বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রথম দিনের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সদস্যদের মধ্যে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, কাজী জাফরউল্লাহ, লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, রশিদুল আলম, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় মনোনয়ন বোর্ডের এই বৈঠক শুরু হয়ে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতিসহ রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চলেছে। এ সময় দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে স্বচ্ছ, ত্যাগী ও অবিতর্কিত ইমেজের প্রার্থীদের বেছে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে দলীয় ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলেও বৈঠকে অংশ নেয়া কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। নেতারা আরও জানান, গত তিন ধাপের ইউপি নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী নিয়ে অনেক জায়গা থেকেই নানা অভিযোগ আসার প্রেক্ষাপটে এবার এ নিয়ে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কোন অবস্থায় কোন অনুপ্রবেশকারী কিংবা নানা অপরাধে যুক্ত বিতর্কিত কোন ব্যক্তি, যুদ্ধাপরাধী কিংবা রাজাকার পরিবারের সন্তান এবং দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া কাউকে এবার মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না। বৈঠক সূত্র জানায়, শনিবারের বৈঠকে অনেক জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। তৃণমূল থেকে আসা সুপারিশের ক্ষেত্রে স্থানীয় অনেক নেতার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্য কিংবা তথ্য গোপন করে পছন্দের প্রার্থীদের নাম পাঠিয়ে দেয়ার অভিযোগ আসছে। এই কারণে তৃণমূলের সুপারিশের তালিকাগুলোও যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলেও জানান কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, চতুর্থ ধাপের ৮৪০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন পাবনা জেলার আটঘরিয়া, নরসিংদী জেলার রায়পুরা ও কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পৌরসভা নির্বাচনের ভোটের তারিখ রেখে নির্বাচন কমিশন থেকে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
×