অনলাইন ডেস্ক ॥ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, আদাবর থেকে নিখোঁজ হওয়া তিন বোনকে উদ্ধার করে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অসুস্থ বাবার কাছে তারা গিয়েছিল। এখন তারা খালা নয়, বাবার কাছেই থাকতে চায়। কারণ হিসেবে বলেছে, দুই খালার কাছে তারা যেমন ব্যবহার আশা করেছিল, সেটি পায়নি। তাই অসুস্থ বাবার কাছে চলে গিয়েছিল।
আজ শনিবার (২০ নবেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, উদ্ধার তিন বোনকে আজ শনিবার আদালতে সোপর্দ করা হবে। আদালতে তারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবে। রবিবার ২ বোনের এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে, তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব। তাদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, নিখোঁজ তিন বোন রোকেয়া (১৮), জয়নব আরা (১৭) ও খাদিজা আরাকে (১৬) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, ২০১২ সালে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর তারা মায়ের সঙ্গে থাকতো। পরে মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তখন থেকে তারা দুই খালার কাছে রয়েছে। কিন্তু বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতো না। দুই খালার কাছে তিন বোন থাকলেও বিভিন্ন সময়ে খালাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভের কারণে তারা বাবার কাছে চলে যায়।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, দীর্ঘ ৮ থেকে ৯ বছর পর তিন বোন তাদের বাবার সঙ্গে দেখা করেছে। তাদের বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ, বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। তবে মাঝেমধ্যে দাদীর মোবাইল নম্বরে তিন বোনের কথা হতো। আর বাবার কাছে যশোরে আসার জন্য দাদী তাদের বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে ১৮ নবেম্বর সকালে আদাবরের বাসা থেকে বের হয়ে যশোরের উদ্দেশে রওনা দেয়। বাসা থেকে বের হয়ে তারা গাবতলীতে জননী পরিবহনের একটি বাসে করে যশোর চলে যায়। সেখান থেকে হামিদপুরে তাদের বাবার বাসায় পৌঁছায়।
এদিকে আদাবরে তাদের খালার দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যোগাযোগ করলে একটি ফোন নম্বর পায়। আর সেই ফোন নম্বরের ভিত্তিতেই দাদা বাড়িতে বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য তিন বোন যশোরে অবস্থান করছে বলে নিশ্চিত হন পুলিশ কর্মকর্তারা।
খালা অভিযোগ করেছের তিন বোন টিকটক আসক্ত ছিল- এমন কোনো তথ্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমরা তাদের কাছে কোনো মোবাইল ফোন পাইনি। আর তার খালার গণমাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা এখন পর্যন্ত পাওয় যায়নি। তিন বোনের অনেকটাই ক্ষোভ রয়েছে খালাদের ওপর। খালাদের কাছে আশানুরূপ ব্যবহার পায়নি বলেও জানিয়েছে তিন বোন।
তিন বোনকে শনাক্ত কিংবা উদ্ধার নিয়ে পুলিশ এবং র্যাবের বক্তব্যের বিষয়ে বিপ্লব কুমার বলেন, কোন একটি ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সংস্থাই ছায়া তদন্ত করে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি বিভাগই ভাতৃপ্রতিম। আমাদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টির কোন কারণ নেই। আমরা যশোর থেকে তিন বোনকে উদ্ধার করে রাজধানীতে এনেছি।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৮ নবেম্বর) আদাবরে খালার বাসা থেকে কাউকে না বলে বেরিয়ে যায় রোকেয়া (১৮), জয়নব আরা (১৭) ও খাদিজা আরা (১৬)। এ সময় তারা এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র, নিবন্ধন কার্ড, সনদ এবং ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাদের কোনো সন্ধান না পেয়ে খালা সাজিয়া নওশীন আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এক বোন আদাবরে সাজিয়া নওশীনের বাসায় থাকত, আর অন্য দুই বোন খিলগাঁয়ে অন্য এক খালার বাসায় থাকত। এসএসসি পরীক্ষায় ধানমন্ডি গার্লস হাই স্কুলের সিট পরায় খিলগাঁও থেকে আদাবরে আরেক খালার বাসায় এসে অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২১ নবেম্বর) তাদের আরও একটি পরীক্ষা রয়েছে।