স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্লাসগোতে আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে দেশের স্বার্থরক্ষা কৌশলকে আরও জোরদার করতে একটি কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি গ্রহণের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিবৃন্দ। তাঁরা জলবায়ু আলোচনায় কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য নাগরিক সমাজকে সুযোগ প্রদানের সুপারিশও করেন। বৃহস্পতিবর ‘কপ-২৬: সরকারি অবস্থান এবং নাগরিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি’ শিরোনামের এক ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তাগণ আরও উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অন্যতম বিপদাপন্ন দেশ হিসেবে প্যারিস চুক্তির আওতায় আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে এই সম্মেলনে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান নেওয়া উচিৎ, যাতে উন্নত অভিযোজনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা যায়, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সংগঠিত ক্ষয়-ক্ষতির যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাওয়াও সম্ভব হয়।
কোস্ট ফাউন্ডেশন, অরগানাইজেশন ফর স্যোশিওইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (এওএসইডি), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিডিপি), কোস্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভায়রনমেন্ট এ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন) এবং ইক্যুইটি এন্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রæপ বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি) যৌথভাবে এই সেমিনারটি আয়োজন করে।
জাতীয় সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ীকমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন। ইকুইটিবিডি’র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেকউল্লাহ রফিক। অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মীর্জা শওকত, সিপিআরডি’র মো শামসুদ্দোহা, কানসা-বিডি’র কো-চেয়ার রাবেয়া বেগম, সিডিডি’র জাহাঙ্গীর হোসেন মাসুম, লিডার’র মোহন কুমার মণ্ডল, এওএসইডি’র শামীম আরেফিন, এবং ক্লিনের হাসান মেহেদী। এতে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইকুইটিবিডি’র সৈয়দ আমিনুল হক।
সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, কপ ২৬ অত্যন্ত গুরুত্বপূণ, কারণ এটি নতুন জমা দেওয়া ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ডেড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি), ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ক বিশেষ প্রক্রিয়া নির্ধারণ এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে (জিসিএফ) ১০০ বিলিয়ন ডলার জোগানের বিষয় আলোচনা হবে। অন্যতম বিপদাপন্ন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে দেশের স্বার্থ রক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নিয়মিত ক্ষয়-ক্ষতি কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রবাহকে বাংলাদেশের অনুকূলে নিয়ে আসার চেষ্টা অবশ্যই থাকবে। এর বাইরেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশগুলোকে বাস্তবসম্মতভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা মেনে চলতে উৎসাহিত করবেন এবং জিসিএফ তহবিলে ১০০ বিলিয়ন জোগান দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করবেন।
মির্জা শওকাত বলেন, ‘আমরা কপ ২৬-এর জন্য একটি অবস্থান পত্র তৈরি করেছি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে সমš^য় প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের অবস্থান প্রাথমিকভাবে অর্থ ও প্রযুক্তির ওপর জোর দেবে এবং আমরা চেষ্টা করবো জিসিএফ তহবিলে অভিযোজনের জণ্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার ব্যাপারে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে।’
কাওসার রাহমান, শামীম আরেফিন এবং অন্যরা বলেন, ‘জলবায়ু আলোচনা সব সময়ই বাংলাদেশ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে, এর অন্যতম একটি কারণ সুশীল সমাজ এবং সরকারের মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতা সব সময়ই ছিলো। আগে এটি ছিলো আমাদের শক্তি ছিল এবং এখন আসলে সেই অবস্থাটা নেই।’ তারা ক-২৬ এর জন্য দেশের অবস্থান তৈরিতে নাগরিক সমাজের অংশ গ্রহণ থাকা উচিৎ বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলোর ওপর তাদের এনডিসি লক্ষ্যযমাত্রা বাড়ানোর জন্য জোরালো চাপ প্রয়োগ করতে হবে, কারণ লক্ষ্য না বাড়ালে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে যাবে, এবং তাপমাত্রা বাড়লে আমাদের দেশকে অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।