বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনায় জড়িতদের শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে। তিনি বলেন, আমরা অনেক কিছুই দেখছি, অনেক কিছুই অনুমান করছি। প্রমাণের অপেক্ষায় আছি, প্রমাণ পেলেই আপনাদের সামনে তুলে ধরব। অপরাধীদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। রবিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।
কুমিল্লার ঘটনার অগ্রগতি কতদূর জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ, এ ঘটনাটি হঠাৎ করে ঘটার পেছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আমরা এ ব্যাপারে আরও সুস্পষ্টভাবে জানতে পারব। আপনারা বলছেন, কুমিল্লার ঘটনার অগ্রগতি কী? কুমিল্লায় যে ঘটনা ঘটেছে আমরা এটি খুব সিরিয়াসলি দেখছি। একটা নির্ভুল তদন্তের মাধ্যমে সব ঘটনা জানাব। খুব শীঘ্রই জানাব বলে আশা করছি। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শুধু কুমিল্লায় নয়, রামু, নাসিরনগরে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রদায়িক উত্তেজনা করে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নয়। এ রকম পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কাদের লাভ হবে আপনাদের কাছে সেই জিজ্ঞাসা আমার। তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এরপর থেকে আমরা দেখেছি বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট ঘটনা ঘটেছে, নোয়াখালীতে হয়েছে, ফেনীতে হয়েছে, কক্সবাজারে হয়েছে। নোয়াখালীতেও প্রাণহানি হয়েছে। যারা নিহত হয়েছেন তাদের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছেও যদি কোন তথ্য থাকে জানাবেন। আমরা সুনিশ্চিত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য, সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ এটাকে বিনষ্ট করার জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ কাজ যে করেছেন, কারও ইন্ধনে করেছেন।
আমরা সব তদন্তের মাধ্যমে উদ্ঘাটন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই করব। যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালানোর সাহস কেউ না পায়। এ ব্যাপারে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। ঘটনার পেছনে দেশের বাইরের কোন ইন্ধন আছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি এ মুহূর্তে কিছুই বলছি না। আমাদের দেশের লোকেরই তো অভাব নেই। দেশের বাইরে থেকে কেউ কলকাঠি নাড়ছে কি না সেগুলোও তদন্তে বেরিয়ে আসবে। সত্যিকারে যে ঘটনা ঘটেছে, সবই আমরা শীঘ্রই জানাতে পারব।
কুমিল্লার ঘটনায় কোন গ্রেফতার হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার ব্যাপারে আমরা দু’তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছি। যারা করেছেন তাদেরও চিহ্নিত করব এবং শীঘ্রই আপনাদের জানাতে সক্ষম হব।
জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে, চিহ্নিতদের মধ্যে কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে আমি বলেছিলাম তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা নেয়া হয়েছে। আশা করি আমরা শীঘ্রই তাদের আটক করতে পারব। আমরা সেই জায়গাটিতেই আছি।
বিএনপি বলেছে, মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে সরকারই এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেকে অনেক কিছু বলছেন, সেগুলো তথ্যভিত্তিক নয়। যেগুলো উদ্দেশ্যমূলক সেগুলো বলার জন্য বলা।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা থেকে জানান, জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখতে এবং যে কোন ধরনের সহিংসতা-অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, জেলা-মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি, জাসদ, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনগুলো নগরীতে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন অব্যাহত রেখেছে। ধর্ম অবমাননা ও নোয়াখালী মন্দিরে পুরোহিত হত্যাসহ দুর্গোৎসবে সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার সকালে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন)-কুমিল্লা। মানববন্ধন শেষে মিছিল নগরীর সড়ক প্রদক্ষিণ করে পূবালী চত্বরে এসে সমাবেশ করে। এছাড়া কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার নগরীর বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত পূজাম-পের স্থানগুলো পরিদর্শন করে তাদের শান্তনা ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আজ সোমবার বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিশাল শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।