ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নানা সূচকেই অর্জিত হয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য আগামীকাল মাদারীপুর সরেজমিন

উন্নয়নের মহাসড়কে ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

উন্নয়নের মহাসড়কে ঝিনাইদহ

এম রায়হান, ঝিনাইদহ ॥ শৌর্য-বীর্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি অতি প্রাচীন জনপদ ঝিনাইদহ জেলা। এ জনপদের রয়েছে বীরত্বগাথা গৌরবময় ইতিহাস। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, নীল বিদ্রোহ, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জেলার মানুষের অবদান অসামান্য। বারো আউলিয়ার পদধুলিতে ধন্য ও পবিত্র এই জনপদটি আরও মহিমান্বিত হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, মরমী সাধক লালন সাঁই, পাগলাকানাই, বিপ্লবী বাঘা যতীন, ইলামিত্র, গণিত শাস্ত্রবিদ কে.পি বসু ও কবি গোলাম মোস্তফার মতো কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের আবির্ভাবে। কপোতাক্ষ বেগবতি, নবগঙ্গাসহ এখানে রয়েছে অসংখ্য নদী ও বাঁওড়। ধান কলা আর পান চাষে সমৃদ্ধ এ জেলা। ঝিনাইদহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অবস্থিত খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক জেলা। এ জেলায় রয়েছে ৪টি সংসদীয় আসন। এর পূর্বে মাগুরা, উত্তরে কুষ্টিয়া, দক্ষিণে যশোর ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলা এবং পশ্চিমে চুয়াডাঙ্গা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলা অবস্থিত। এ জেলার মোট আয়তন ৭৫৭.২ বর্গমাইল। মোট জনসংখ্যা ১৯,৭৬,০৯৯ জন, যার মধ্যে পুরুষ ৯৮৮৯৫৭ জন এবং নারী ৯৮৭১৪২ জন। ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, শৈলকুপা ও হরিণাকুন্ডু এই ৬টি উপজেলার ৬টি পৌরসভা ও ৬৭টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে ঝিনাইদহ জেলা গঠিত। আয়তনের দিক থেকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা বৃহত্তম এবং কোটচাঁদপুর উপজেলা ক্ষুদ্রতম। এছাড়া ঝিনুক থেকে এ জেলার নামকরণ হয়েছে ঝিনাইদহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশজুড়ে অন্যান্য স্থানের ন্যায় ঝিনাইদহেও চলছে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। একটি টেকসই অর্থনীতির ভীত গড়ে তোলা, দারিদ্র্য নির্মূল, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, নারীর ক্ষমতায়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলাসহ উন্নয়নের নানা সূচকেই অর্জিত হয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টকে (এসডিজি) সামনে রেখে দেশব্যাপী যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে সে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমানভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের এই জনপদ-ঝিনাইদহে। এ জেলার ছয়টি উপজেলায়-ই শতভাগ বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি উপজেলা প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, আইনশৃঙ্খলা এবং ভৌত ও যোগাযোগ অবকাঠামোসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধিত হয়েছে। এর ফলে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে এই জনপদের অধিবাসীদের অর্থনীতি ও সামগ্রিক জীবনাচারে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়নে পিছিয়ে নেই ইতিহাস ঐতিহ্য আর রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সবজি ভান্ডার খ্যাত এ জেলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæত উন্নয়ন এখানেও বাস্তবায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। নবগঙ্গা নদীর তীরে দেবদারু ইকোপার্কের গাঁ ঘেঁষা নবগঙ্গা নদী খনন, সবজি ভাণ্ডার খ্যাত এ জেলায় সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থাসহ ঝিনাইদহের ওপর দিয়ে রেললাইনের দাবি জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের। ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝিনাইদহে সফরে আসেন। ওই দিন তিনি দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ মাঠে অবতরণ করেন। এরপর তিনি শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গোলচত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ‘প্রেরণা ৭১’ এর উদ্বোধন করেন। পরে তিনি ঝিনাইদহের নবনির্মিত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, ঝিনাইদহ সরকারী ভেটেরিনারি কলেজ, ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, মেডিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ওআরএস স্যালাইন ফ্যাক্টরি, শিশু একাডেমি কমপ্লেক্স, পোস্ট অফিস ভবন, সরকারী কেসি কলেজের চারতলা ভবন ও ঝিনাইদহ পৌরসভার স¤প্রসারিত ভবনের উদ্বোধন করেন। এছাড়া তিনি ঝিনাইদহ শেখ কামাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ঝিনাইদহ সরকারী কেসি কলেজের নতুন একাডেমিক ভবন, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মুজিবনগর সড়ক স¤প্রসারণ এবং ঝিনাইদহ ১শ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ জেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে। এখনও বাস্তবায়িত হচ্ছে নতুন নতুন প্রকল্প। যশোর-ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার কাজও শুরু হতে দ্রæত সময়ের মধ্যে। স্বাস্থ্য খাত ॥ ঝিনাইদহে ২৫০ শয্যা বেডের হাসপাতাল নির্মাণ করার দাবি ছিল এ অঞ্চলের মানুষের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা করায় এ অঞ্চলের মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে গেছে স্বাস্থ্যসেবা। ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৮তলা বিশিষ্ট ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল। চিকিৎসাসেবায় ঝিনাইদহ হাসপাতাল এখন দেশের মডেল। এবারও স্বাস্থ্যসেবায় ৩য় অবস্থানে ছিল ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল। এই হাসপাতালটির সার্বিক সহযোগিতার জন্য গঠন করা হয়েছে কমিউনিটি সাপোর্ট কমিটি। যে কমিটির প্রধান ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। হাসপাতালটিতে করোনাকালীন ৭টি হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা মেশিন, ২৪টি বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার, মোবাইল এক্সরে মেশিনসহ বেশ কিছু যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছেন ঝিনাইদহ ২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। এছাড়া করোনা রোগীদের জন্য পৌরসভা মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু হাসপাতালটিতে ২৪ বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ১৫টি ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান করেন। কমিউনিটি সাপোর্ট কমিটির মাধ্যমে হাসপাতালটিতে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগে হাসপাতালমুখী হতেন না কোন মানুষ। বর্তমানে চিকিৎসাসেবার কারণে প্রচণ্ড রোগীর চাপ এই হাসপাতালে। সরকারীভাবে জনবল নিয়োগের দাবি হাসপাতালটিতে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ॥ ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুকরণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধ স্মৃতিসৌধ চত্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু নির্মাণ করেছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহীদ মিনার। এটি ঝিনাইদহের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারও বটে। ভাষাসৈনিক শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি রাত ১২টায় এ শহীদ মিনারটির শুভ উদ্বোধন করেন। ইতোমধ্যেই এ শহীদ মিনার জেলাবাসীর নিকট দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল। প্রায় সারাক্ষণই নানা বয়সী মানুষের পদাচারণায় মুখরিত থাকে এই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। ঝিনাইদহ পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে জনগণের ভোটে আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এরপর এ পৌরসভায় ১১৩ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬ টাকা ব্যয়ে ৬৭৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত হয়েছে। মানববজ্র ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, স্বাস্থ্য খাত, লো কস্ট হাউজিং ও অনলাইন ব্যবস্থাপনায় ঝিনাইদহ পৌরসভা বাংলাদেশের প্রথম স্থান অধিকার করেছে এবং আএসও সনদপ্রাপ্ত হয়েছি। এ পৌরসভার প্রধান সমস্যা ছিল পয়ঃনিষ্কাশন। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে যেত। আমরা মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে বড়বড় আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন করে বর্জ্য পানি নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করেছি। আরও ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা দরকার। আগেকার চিকন রাস্তাগুলো সম্প্রসারিত করা হয়েছে। ১২ ফুট চওড়া রাস্তা ভেঙ্গে ১৬ ফুট চওড়া করা হয়েছে। শহরের প্রতি মোড়ে মোড়ে সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার আদলে এলইডি লাইট দিয়ে সড়কগুলোকে আলোকিত করা হয়েছে। এর ফলে অবৈধ কর্মকাণ্ড, মাদক ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের প্রতিরোধ করা সহজ হচ্ছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভকালীন ভাতা এখন হাজার হাজার পরিবারের মানুষ ভোগ করছেন। আশ্রয়ণ ও গৃহহীনদের সহায়তা ॥ এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অগ্রাধিকার কর্মসূচী। যাদের জমিও নেই, ঘরও নেই তাদের মধ্যে ১ম পর্যায়ে ৪০৭টি ও ২য় পর্যায়ে ২৯৮সহ মোট ৭০৪ জনকে জমিসহ ঘর উপহার দেয়া হয়েছে। যার নির্মাণ ঘরচ হয়েছে ১৪ কোট ৮ লাখ টাকা। এছাড়া জমি আছে ঘর নাই এ কর্মসূচীর আওতায় ১৫০০টি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ কর্মসূচীর আওতায় এ জেলাতে বিদ্যমান ২৬টি আবাসন প্রকল্পে ১৯১১টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক ভ‚মিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২৫ কোটি ৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৯টি বীর নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ভ‚মিহীন কৃষকদের মধ্যে ৪৬ একর কৃষি খাস জমিসহ ৩৬৭১.৫৩ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ঝিনাইদহ জেলাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ সময়ে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-ঝিনাইদহ শেখ কামাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ঝিনাইদহ সরকারী ভেটেরিনারি কলেজ, ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, জেলা শিশু একাডেমি, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এবং কালীগঞ্জ, হরিণাকুন্ডু, মহেশপুর ও শৈলকুপা উপজেলায় চারটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, জেলা সার্ভার স্টেশন ও পাঁচটি উপজেলা সার্ভার স্টেশন, শৈলকুপা উপজেলা পরিষদ ভবন ও অডিটোরিয়াম এবং কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভবন ও অডিটোরিয়াম, তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও ২০টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কোটচাঁদপুর মডেল থানা ভবন ও কোটচাঁদপুর সার্কেল এএসপির অফিস-কাম-রেসিডেন্স ভবন, মহেশপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস ভবন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, মহেশপুর ও শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে। শিক্ষা খাত ॥ উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে ঝিনাইদহ জেলার শিক্ষাঙ্গন। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝিনাইদহ শেখ কামাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝিনাইদহ সরকারী ভেটেরিনারি কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারী কেসি কলেজের বিজ্ঞান ভবন, পরীক্ষা ভবন ও দুটি হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১টি বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এবং ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩টি মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। একটি বেসরকারী কলেজের নতুন একাডেমিক ভবন ও ১৭টি কলেজ ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি টাকা। মাহাতাব উদ্দীন ডিগ্রী কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান কলেজকে জাতীয়করণ করা হয়েছে। এছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা ভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও শৈলকুপা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়েছে। ৪৯৫টি রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারীকরণ করা হয়েছে। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই এরূপ ৮ গ্রামে ৮টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ১৩৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। ২৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরি কাম প্রহরী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়েছে। প্রজেক্টর বিতরণ করা হয়েছে ২৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ০২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ০২টি কলেজকে সরকারীকরণ করা হয়েছে। বিদ্যুত খাত ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অন্যতম প্রতিশ্রæতি ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া। ইতোমধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে ঝিনাইদহের ৫টি উপজেলা। উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে শৈলকুপা উপজেলা। এ উপজেলায়ও শতভাগ ঘরেঘরে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো লি.) কর্তৃক নতুন গ্রাহক সংযোগ দেয়া হয়েছে ৪৭০৭৪টি। ৩৩ কেভি লাইন নির্মাণ ২৭ কিমি ১১ কেভি লাইন নির্মাণ ৩৫ কিমি ১১/.০৪ কেভি লাইন নির্মাণ ১১৫ কিমি .০৪ কেভি লাইন নির্মাণ ১৫৩ কিমি ১১/.০৪ কেভি ট্রান্সফরমার স্থাপন ৩৮৯টি ডিজিটাল মিটার স্থাপন ৯৯.৭৫%টি। ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি কর্তৃক নতুন গ্রাহক সংযোগ দেয়া হয়েছে ১৭৪৫০২টি এবং বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ ১৮১৫ কিমি এবং উপকেন্দ্র নির্মাণ সংখ্যা ০৪টি। যোগাযোগ অবকাঠামো ॥ ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ কর্তৃক ২৯০ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০৬ কিমি রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। ১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬.১০ কিমি হামদহ-বিসিক শিল্পনগরী-বাসটার্মিনাল-বাইপাস সড়ক, ২১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬.৫০ কিমি শেখপাড়া-শৈলকুপা-লাঙ্গলবান্ধ সড়ক, ২৪ কোটি ৭৫ লাখ ২৮.৫০ কিমি ডাকবাংলো বাজার-গোপালপুর-কালীগঞ্জ সড়ক, ১০ কোটি ১১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩.০৫ কিমি আমতলী-তৈলটুপি-আলমডাঙ্গা সড়ক এবং ৫.০০ কিমি গোপালপুর-তালসার বাজার-কোটচাঁদপুর-আযমপুর-মহেশপুর সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ইমপ্রæভমেন্ট অফ রোড সেফটি এ্যাট বø্যাক স্পট ইন ন্যাশনাল হাইওয়েজ প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি ৪৯ লাখ ০৯ হাজার টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া রোড ইন্টারসেকশন ও চুটলিয়া মোড় সংস্কার করা হয়েছে। ২৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪২.৬৮ মি. ভুটিয়ারগাতী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক গত ৯ বছরে ৪৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৬৮ কিমি রাস্তা পাকা করা হয়েছে এবং ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৬৫ কিমি রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। সেতু/কালর্ভাট প্রকল্পের আওতায় ১২ কোটি ৭০ লাখ ৮৬ হাজার টাকায় ২৯৬.৭৫ মিটার ব্রিজ কালভাট নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়াও শৈলকুপা উপজেলায় ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৬.০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ সময়ে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ ২০ কোটি ৫১ লাখ ০৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯৫.৫২৯ কিমি গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া যশোর-ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণের কাজ দ্রæত শুরু হবে বলে জানা গেছে। নারী উন্নয়ন ॥ নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে গত ৯ বছরে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর, জেলা মহিলা সংস্থা, যুব উন্নয়ন অধিদফতরসহ নানা সরকারী প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রেডে ২১৯০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ২২৬৩ জন নারীকে ৫৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় হয়েছে। এ বিভাগ ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় ৭৫৩০ জন উপকারভোগীকে ৪০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা সহায়তা এবং ২৩৫৮৪ জন নারীকে ১২ কোটি ৫৭ লাখ ৪৫ হাজার ৬০ টাকা মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হয়েছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে ৩৭০টি। এছাড়া জেলা মহিলা সংস্থা সেলাই ও এমব্রয়ডারি ট্রেডে ৭২০ জন নারীকে, ক্যাটারিং প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে ২৪০ জনকে, বøক-বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্ট প্রশিক্ষণ প্রকল্পে ১১০ জন নারী, জেলা ভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প ৫৩৩ জন নারী এবং মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের আওতায় ২৯১ জন নারীকে ৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। সালিশ এবং আদালতের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে ২৬ নারীকে। কৃষি খাত ॥ প্রাচীনকাল থেকেই এ জেলার অর্থনীতির চালিকাশক্তি কৃষি। এ জেলা খাদ্যে উদ্বৃত্ত। এখানে উৎপাদিত হয় ধান, পাট, কলা, পান, আখ, গম, ভুট্টা ও প্রচুর শাক-সবজি। গত ২০০৯-২০১৭ সময়ে সরকারের কৃষিবান্ধব নানামুখী উদ্যোগের ফলে এ জেলার কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। বোরো ধানে সেচকাজে ব্যবহৃত জ্বালানি/বিদ্যুতে দেয়া হচ্ছে ভর্তুকি। কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়েও দেয়া হচ্ছে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি। আউশ, আমন, ডাল, তৈল, ভুট্টা প্রভৃতি আবাদে দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা। মাত্র ১০ টাকায় কৃষকদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সার ও জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি না থাকায় বেড়েছে ফসল উৎপাদন। এ জেলায় কৃষককে সেচকাজে ব্যবহৃত ডিজেলে ভর্তুকি বাবদ ১৭ কোটি ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৪শ’ টাকা প্রদান করা হয়েছে। ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে ২,৪৪,১৪৭টি।
×